বিকৃত রাজনীতি শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করে ফেলেছে - দৈনিকশিক্ষা

বিকৃত রাজনীতি শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করে ফেলেছে

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

নিজ এলাকাসহ দেশের রাজনৈতিক অবস্থা, রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের অবস্থা পারতপক্ষে মুখে আনতে চাই না। আবার এদেশের সার্বিক পরিবেশ ও মানুষের মনোজাগতিক পরিবেশ নিয়ে কিছু করতে গেলে অবস্থাকে এড়িয়েও চলা যায় না-একটু বললেও বলতে হয়, প্রসঙ্গক্রমে চলে আসে। কারণ, সমাজ ও রাজনৈতিক পরিবেশ বাদ দিয়ে তো শিক্ষার পরিবেশ ভাবাও যায় না। সুশিক্ষিত সমাজও গড়া যায় না। তখন সুশিক্ষিত জাতি গড়ার স্বপ্ন ‘দিল্লি হনুজ দূর অস্ত’ হয়ে যায়। দেশের স্বাধীনতারও তো সুবর্ণজয়ন্তী পালিত হয়ে গেল। প্রতিদিনের পত্রিকাটা যথাসম্ভব মনোযোগ দিয়ে পড়লে এবং পোড়া চোখ দুটো সমাজের দিকে মেলে ধরলেই ভূতভবিষ্যৎ মোটামুটি পরিষ্কার দেখা যায়; আমরা কোথায় যাচ্ছি বোঝা যায়। এজন্য কখনো খেদোক্তি করে বলি, ‘পোড়া চো-ও-খ, পোড়া চোখ, কেন তুই বন্ধ থাকিস না, কেন তুই অন্ধ থাকিস না...।’ কথা ছিল, রাজনৈতিক নেতারা তাদের কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে জনসেবা, সমাজসেবা, দেশসেবা করবে। সুশিক্ষিত জাতি গড়বে। জাতীয় উন্নতি ত্বরান্বিত করবে। দেশ ও জাতির কল্যাণে, দেশের উন্নয়নে এদেশের আপামর মানুষের ঈর্ষণীয় মেধাকে কাজে লাগাবে। কুসুম কুঁড়িগুলো অকালেই ঝরে যাবে না, বিশ্বসভায় স্বমহিমায় সুবাস বিলাবে। কিন্তু স্বপ্ন ভেঙে সবকিছু দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। বলা যায়, কোনো রাজনৈতিক দলেরই গঠনতন্ত্রের মূলনীতির সঙ্গে তাদের কথা ও কাজের কোনো মিল নেই। সব নোংরামি, কুশিক্ষা, কুটিলতন্ত্র ও জিঘাংসার আঁতুড়ঘর এখন এই দিগভ্রষ্ট, নীতিবিবর্জিত রাজনীতি। রাজনীতি এখন ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে দেশ ও সাধারণ মানুষের সম্পদ লুটপাটের একচেটিয়া ব্যবসা। তাই এখান থেকে জনকল্যাণ ও জনসেবা চাওয়া শ্রাবণের নিকষকালো ঘনঘোর অবিশ্রান্ত বর্ষায় শরতের দিগন্তবিসারী স্নিগ্ধ-রৌদ্রকরোজ্জ্বল উন্মুক্ত নীলাকাশ চাওয়ার শামিল। এরা দেশকে যে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে এবং এ জনগোষ্ঠীর গন্তব্য যে কোথায়, তা মনের চোখে ভেসে ওঠে। চোখে ভেসে ওঠাটা হয়তো এ দেশে অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। ইচ্ছা করে দেখতে চাই না; তবু চোখে চোখে ভাসে। চোখ বন্ধ করে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের দিকে তাকালে কেন জানি লাগামহীন দুর্নীতি, লুটপাট, বলদৃপ্ত মিথ্যাচার, দমনপীড়ন, জিঘাংসা, অব্যবস্থাপনা, কুশিক্ষা, মারামারি, খুনখারাবি, গায়েব, প্রতিহিংসা, স্বার্থপরতা, ক্ষমতার দাপট ইত্যাদির ছবি মানসপটে ভেসে ওঠে। সব ব্যক্তি-স্বার্থের প্রতিভূ চটকদার ভেক ধরে ভিন্নপথে দেশের সম্পদ লুটপাট করার জন্য জোটবদ্ধ হয়ে রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় এক জায়গায় জড়ো হয়েছে, একই উদ্দেশ্য সফল করে চলেছে। সব বিকৃত ফন্দি-ফিকির বিষবাষ্পের মতো সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়েছে। সমাজকে গ্রাস করেছে এবং করে চলেছে। সমাজের দু-কূল প্লাবিত করে ছেড়েছে। সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এতথ্য জানা যায়।

নিবন্ধে আরও জানা যায়, ওদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ হলো, এত সুন্দর একটা দেশ-সুজলা, সুফলা বাংলাদেশ; অথচ ওরা জনগোষ্ঠীকে জন-আপদে পরিণত করেছে। মূল্যবোধের অবক্ষয় হয়েছে। এ জনগোষ্ঠী এমন ছিল না। প্রাতিষ্ঠানিক ও সামাজিক শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে-উচ্চশিক্ষা থেকে তৃণমূল শিক্ষা পর্যন্ত। যেখান থেকে সহজে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসা অনেক কঠিন। সত্য বলতে কী, এদেশের জটিল-কুটিল স্বার্থান্ধ বিকৃত রাজনীতি সুস্থ সামাজিক ও শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করে ফেলেছে। শিক্ষার মান নামতে নামতে তলানিতে ঠেকেছে। সামাজিক পরিবেশে চলে-ফিরে-খেয়ে-বলে সুখ-শান্তি উঠে গেছে। এই নীতিহীন, চরিত্র-বিধ্বংসী, মনুষ্যত্বহীন, সর্বভুক রাজনৈতিক স্রোতোধারা কল্যাণব্রতী রাষ্ট্র ও সুস্থ সমাজব্যবস্থা উন্নয়নে বিলীন হওয়া জরুরি। শুধু এদেশ কেন, বিশ্বের অনেক অনেক দেশেরই একই অবস্থা। বিশ্ব-রাজনীতির দিকে তাকালে দেখা যায়, রাজনীতিবিদরা দেশ পরিচালনার নামে গদি রক্ষার স্বার্থে পৃথিবীতে মানুষের জীবনযাপন ও বসবাসের উদ্দেশ্যকেই পথ ভুলিয়ে ভিন্ন পথে নিয়ে যাচ্ছে। সেকুলারিস্টরা তথাকথিত আধুনিকতার ধুয়ো তুলে তাদের বিকৃত বাতিল ভিত্তিহীন মতবাদ (নৈতিকতা ও শিক্ষা ধর্মকেন্দ্রিক হওয়া উচিত নয়-এই মতবাদ) নিয়ে অনেক অনেক রাষ্ট্রের ঘাড়ে চেপে বসেছে। মানুষের ধর্ম না থাকলে যে অধর্মের কালো ছায়া বিশ্ব সভ্যতাকে অন্ধকারে ঢেকে দেবে, এ বিষয়ে তারা নির্বাক। তথাকথিত বুদ্ধিজীবী নামে খ্যাত জনগোষ্ঠীর একটা জ্ঞানবিধ্বস্ত অংশ তাদের টোপ গিলে বসে আছে। তারা বিজ্ঞান শিক্ষার মোড়কে ধর্মহীনতার ছবক দিয়ে কৌশলে ছাত্রছাত্রীদের সেকুলারপন্থি বানাতে চায়। তারা মানবিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ, সততা, নৈতিকতা, মনুষ্যত্ব ও ন্যায়নিষ্ঠার টুঁটি টিপে ধরে শ্বাসরোধ করে ফেলেছে। শিক্ষাব্যবস্থা থেকে মানবিক এ গুণগুলো বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। এই সতীর্থ-জিঘাংসু, দুর্গন্ধযুক্ত পরিবেশ ও বিকারগ্রস্ত মানসিকতা নিয়ে সুস্থ সমাজ বিনির্মাণ ও সুশিক্ষা আশা করা বাতুলতা মাত্র। সেজন্য অন্য কোনো পথে শিক্ষা, জনসেবা, সমাজসেবা, জাতীয় মুক্তি খুঁজতে হবে। কারণ, মানুষের জন্যই সমাজ ও রাষ্ট্র। রাষ্ট্রের ধারণা থেকে মানুষ ও সমাজকে তো আর বাদ দেওয়া যায় না! আর তাই সুশিক্ষিত মানুষ ও আদর্শ সমাজ গড়তে গেলে ধর্মীয় মূল্যবোধ, সততা, নৈতিকতা, মনুষ্যত্ব বোধসম্পন্ন মানুষ ও সমাজ গড়তে হবে। মানুষের জীবন ও জীবিকার ওপর পরিবেশের দারুণ প্রভাব আছে। দেশের সাধারণ মানুষ সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশ থেকে শিক্ষা নেয়। কখনো ইচ্ছা করে শিক্ষা না নিতে চাইলেও মনের অজান্তে শিক্ষা মনে গেঁথে যায়। তাই এই দুর্গ্রহ দুর্গতি। গলদটা আসলে কোথায়? শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়তে গিয়ে নীতি-নৈতিকতা, দেশপ্রেম, মানবিকতা বলে কিছু শিখেছে কি না? জীবনমুখী ও কর্মমুখী শিক্ষা শিখছে কি না? সমাজ থেকে সামাজিক মূল্যবোধ ও নীতিকথাগুলো শিখেছে কি না?

মনের মধ্যে নীতি-নৈতিকতার বালাই না থাকলে মানুষ যেখানে অল্প পরিশ্রমে লাভ বেশি পাবে, সেদিকে চলে যাবে। সুবিধাজনক জায়গায় জিভ উলটে স্বার্থ হাসিলের খেলায় মাতবে। উলু দিয়ে কাছিম জড়ো করার মতো বর্তমান রাজনীতি ক্ষমতা ও টাকা ছিটিয়ে বিকৃত মানসিকতাসম্পন্ন, স্বার্থান্ধ-দুর্নীতিবাজ ও মতলববাজ লোকগুলোকে একজায়গায় জড়ো করছে। তারপর টাকার খেলা শুরু করছে। শিক্ষা থেকে নীতিকথা, সততা, চরিত্রগঠন, মানবতা, দেশপ্রেম, ন্যায়নিষ্ঠা দিনে দিনে আগেই সরে গেছে, রাজনীতিতেও তাই। এদেশে কলুষিত রাজনীতির পক্ষে স্বার্থের বিনিময়ে স্লোগান হাঁকতে পারলেই দেশপ্রেমের একচ্ছত্র অধিপতি হওয়া যায়। এদেশে বিবেকের দংশন বলতে কিছু নেই। দেশের মানুষ নষ্ট হয়ে গেলে জাতীয় সম্পদ কে রক্ষা করবে? এর বিপরীতে বলতে হয়-দেশের অর্থ ও সম্পদ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা মজবুত করা দরকার। এজন্য সুশিক্ষিত জনগোষ্ঠী দরকার। তথাকথিত রাজনীতি ও জনপ্রতিনিধিদের হাত থেকে টাকা লেনদেনের ব্যবস্থা ও উন্নয়নের নামে টাকা বরাদ্দ-ব্যবস্থা সরিয়ে নিতে হবে, যাতে রাজনীতি একটা লাভজনক ব্যবসা না হতে পারে। তখনই রাজনীতি থেকে ‘চাটার দল’ ও খাদকগোষ্ঠী বিদায় নেবে। দেশসেবক, সমাজসেবক রাজনীতিতে ঢুকবে। এ মানুষ দিয়েই সবকিছ্ ুসম্ভব। সব রোগেরই ট্রিটমেন্ট আছে। বিষয়টি নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট পক্ষের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর।

বর্তমান সমাজে রাজনীতিবিদরা জোটবদ্ধ ও সক্রিয়। স্থানীয় সরকারে রাজনৈতিক দলীয় নির্বাচন রীতি চালু হওয়ায় এদের তৎপরতা ও অপতৎপরতা এদেশের তৃণমূল পর্যন্ত ছড়িয়ে গেছে। এর ফলে আমরা সবাই কেমন আছি, সচেতনমহল পুরোটাই অবহিত। ‘পিরিতে মজেছে মন, কী-বা মুচি, কী-বা ডোম।’ এরা ব্যক্তিস্বার্থের নেশায় যৌথভাবে দিগ্ভ্রান্তের মতো ছুটছে। সব এক-রঙা পাখাওয়ালা পাখিগুলো যখন একদলে যোগ দেয়, ব্যক্তি-স্বার্থ তখন দলগত স্বার্থে রূপ নেয়। এদের সুপথে নিয়ে আনা এতটা সোজা না। আমি সে কাসুন্দি ঘাটতে গিয়ে উদ্দেশ্য-বিচ্যুত হতে চাই না। ধানের হাটে মুখ-চুলকানো ওলও নামাতে চাই না। তাদেরকে কোনো উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় সংযুক্ত করা মানে দুধে গো-চোনা মেশানো। স্বল্প মেয়াদের মধ্যে তাদের দিয়ে সমাজ উন্নয়ন এবং সুস্থ ও শিক্ষিত সামাজিক ধারা তৈরি করা সম্ভব নয়। পরিবর্তিত সমাজে অর্থাৎ রাজনীতির খোলনলচে বদল হওয়ার পর দীর্ঘমেয়াদে গিয়ে হয়তো সুস্থ সামাজিক ও শিক্ষার উন্নয়নে তারা অবদান রাখতেও পারে।

আবার রাজনীতি ভালো হয়ে গেলেই পরিবেশ হঠাৎ ভালো হয়ে যাবে-এ আশাও করি না। সমাজে সুশিক্ষা ফিরিয়ে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করতে হবে। কোনো মোটর গাড়ির ইঞ্জিন বিকল হয়ে গেলে নতুন ইঞ্জিন কিনে লাগিয়ে গাড়িকে আবার ভালোভাবে চালানো সম্ভব হয় বটে; কিন্তু কোনো মানুষের মগজ একবার বিকৃত চিন্তার আস্তানা হয়ে গেলে তার জীবদ্দশায় সুস্থ পথে ফেরা হয়তো আর সম্ভব হয় না। সাগর ঝড়-ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ কালরাত্রি পাড়ি দেওয়ার পরে শান্ত হয় বটে, তবে দিগন্ত-বিস্তৃত, লন্ডভন্ড, বিক্ষিপ্ত, ফেনিল কর্দমাক্ত রেষ রেখে যায়। এ বিস্মৃতি-চিহ্ন মুছতে সময় লাগে। জনগোষ্ঠীর মানসিকতা একবার বিকৃত হয়ে গেলে সুস্থ অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এমনিতে সহজে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে না। তবু আবার নতুন করে গড়ার কাজ তো শুরু একবার করতেই হয়। তখন সমাজের লোকদের দলে দলে সময় নিয়ে সুশিক্ষার প্রশিক্ষণ দেওয়ার দরকার হয়। ভালো ভালো উপদেশমূলক কথা, মানবতার কথা, জীবনের উদ্দেশ্যের কথা, সুস্থ জীবনের কথা তাদেরকে বারবার বলতে হয়; জীবনের জন্য করণীয় বাস্তব উদাহরণ দিয়ে বোঝাতে হয়। এছাড়া নতুন প্রজন্মের দিকে তাকিয়ে তাদেরকে নতুন করে গড়া ছাড়া উপায় থাকে না। এটাই বাস্তবতা। তবে ঘুটঘুটে অন্ধকারেও কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলে আলোর ইশারা পাওয়া যায়। রাজনৈতিক মদদপুষ্ট একটা বিশাল অংশ পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে জানি; কিন্তু এর মধ্যেও কোনো কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তি এখনো ভালো আছেন। এছাড়া সমাজের একটা সচেতন ও সুশিক্ষিত অংশ যাদেরকে রাজনীতির কালিমা এখনো কলুষিত করতে পারেনি, তারাও এ সমাজেই নিভৃতে জীবনযাপন করছেন। সমাজ পচে গেলেও বেশ কিছু মানুষ সুশিক্ষার প্রিজারভেটিভ মেখে এখনো অক্ষত আছেন। তারা রাজনীতির কর্দমাক্ত বানভাসি স্রোতে ভেসে যাননি। এটা আশার কথা। এদেরকে নিয়ে আমরা আবার আশায় বুক বাঁধতে পারি। এদেরকে জাগিয়ে ঘরের বাইরে বের করে আনা যায় কিনা, ভাবা দরকার। একত্রিত করা দরকার। মানবসম্পদ উন্নয়ন পড়তে গিয়ে, আবার বাস্তবেও দেখেছি, কেউ অন্য অনেকের খাবার জোর করে নিজের উদরজাত করে তৃপ্তি পায়; আবার কেউ নিজের খাবার অন্যদের ভাগ করে খাইয়ে তৃপ্তি পায়। এটা মানুষের প্রকৃতি। উভয় ধরনের মানুষই তো সমাজে আছে। মানুষ ষড়রিপুর আধিক্যে মানুষ নামের কলঙ্ক হয়, পঙ্কিলতার সাগরে ডুবে যায়, আবার মানবিক গুণগুলো জাগিয়ে তুলতে পারলে মনুষ্যত্ব ও মানবতাবোধ ফিরে পায়, মানুষের মতো মানুষ হয়, মানুষের মতো কর্ম করে, আচরণ করে। মানুষের অন্তর্বিষ্ট স্বভাব বাদ রেখেও সুশিক্ষা ও যোগ্য প্রশিক্ষণ এবং সুস্থ সমাজব্যবস্থার মাধ্যমে মানুষকে ‘মানুষের মতো মানুষ’ রূপে গড়ে তোলা যায়। এভাবেই সুস্থ মানসিকতাসম্পন্ন শিক্ষিত সমাজ, আদর্শ রাষ্ট্র ও টেকসই জাতি গড়ে ওঠে। শ্রুতিকটু কথাটা হলো-বিশ্বের অনেক দেশের রাষ্ট্র-পরিচালকদের মানসিকতাই তো সুস্থ নয়; কাজেই সুস্থ সমাজব্যবস্থা ও আদর্শ রাষ্ট্র গড়ে উঠবে কীভাবে? বিশ্বময় অসুস্থতার প্রতিযোগিতা, ষড়রিপুর প্রাবল্য, নির্লিপ্ত-নিরুদ্দিষ্ট মানবতা। চারদিকে কালিমামাখা চিন্তার রুদ্ধশ্বাস পরিবেশ। সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীবের নিকৃষ্ট চিন্তা ও কর্মকাণ্ড। অথচ ধরণি চায় সৃষ্টির অনুগামী টেকসই চিন্তাচেতনা, চিন্তার উৎকৃষ্টতা। মানুষ চায় ব্যক্তিস্বার্থ, প্রকৃতি চায় সামষ্টিক স্বার্থ। তবে ব্যক্তির সুষ্ঠু চিন্তাধারা সামষ্টিক সুস্থ চিন্তার উৎস। ব্যক্তির মানসিক উন্নতির মধ্যে সামষ্টিক উন্নতি নিহিত। তাই ব্যক্তির মানসিক উন্নতির চেষ্টা করতে হবে। ব্যক্তির উন্নতির মধ্য দিয়ে সামষ্টিক উন্নতিকে ত্বরান্বিত করতে হবে।

এই গা-সওয়া অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে একটা সামাজিক ধাক্কা দরকার। একে বলে সামাজিক আন্দোলন। সুশিক্ষিত-সমাজসচেতন জনগোষ্ঠীর অহিংসা, সুশিক্ষা, সত্য ও সুনীতির আন্দোলন। নইলে এই থেঁতানো হাজামজা অবস্থা যুগ যুগ চলতেই থাকবে। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। ধাক্কা না দিলে বাঞ্ছিত ফল পাওয়া যায় না। ধাক্কা দিয়ে গাড়িটাকে স্টার্ট করে দিতে পারলেই গন্তব্যে পৌঁছানোর স্বপ্ন অন্তত দেখা যায়। কিন্তু প্রশ্ন, ধাক্কাটা কাকে দিয়ে দেবেন? কে আগে শুরু করবে? এজন্য একটা সামাজিক অরাজনৈতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দরকার, যা হবে সমাজের আলোকিত মানুষের সমাবেশ। আমি বর্তমানে সমাজের এই আলোকিত মানুষের খোঁজে আছি। এত ঝড়-ঝাপটার মধ্যে এরা এখনো সমাজে টিকে আছে। তাদেরকে ঘর থেকে বের করে আনতে হবে। একত্রিত করতে হবে। আলোর ঠিকানা দিতে হবে। একটা প্ল্যাটফরম দিতে হবে। পথ দেখাতে হবে। হাতজোড়া খুলে দিতে হবে। বলতে হবে, ‘যাও, এবার সামনে চলো, দেশের সেবা করো, সমাজ ও শিক্ষার উন্নয়নে কাজ করো।’

লেখক : ড. হাসনান আহমেদ, শিক্ষক, ইউআইইউ; প্রাবন্ধিক ও গবেষক

শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0054731369018555