শিক্ষার্থীদের চলমান দ্বন্দ্ব কমিয়ে আনতে ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত জরুরি - দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষার্থীদের চলমান দ্বন্দ্ব কমিয়ে আনতে ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত জরুরি

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষাজীবনে নানা বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করেন। কিছু অভিজ্ঞতা তাদের বাস্তবমুখী ও কর্মজীবনের জন্য উপযুক্ত করে তোলে। আর কিছু অভিজ্ঞতা ভীত-সন্ত্রস্ত করে রাখে। এ ধরনের অভিজ্ঞতার অন্যতম 'স্থানীয় ভীতি'। ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত আবাসিক সুবিধা না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন আবাসিক এলাকায় বাসা ভাড়া করে থাকতে হয় শিক্ষার্থীদের। ওইসব এলাকার কিছু মানুষ শিক্ষার্থীদের চলাফেরা নিয়ন্ত্রণে নানা অলিখিত আইন তৈরি করেন। 'স্থানীয়'র সীমা এ পর্যন্ত হলেও হয়তো কথা থাকত না। কিন্তু তাদের বিধিনিষেধ যখন শোষণ বা নির্যাতনের পর্যায়ে যায় তখন শিক্ষার্থীরা সংগঠিত হন, প্রতিবাদ করেন। স্থানীয়রা তাদের প্রতিবাদকে দমন করেন হামলা, মামলা কিংবা অন্য কোনো সহিংস পন্থায়।বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধনে এ তথ্য জানা যায়।

নিবন্ধনে আরও জানা যায়, কারণে-অকারণে বাসা ভাড়া বৃদ্ধি, মেস বা বাসায় স্থানীয় বখাটেদের জোরপূর্বক প্রবেশ ও মাদক সেবন, চাঁদাবাজি, ছাত্রীদের উত্ত্যক্তকরণ, শ্নীলতাহানি, চুরি-ছিনতাই, মারধরসহ নানা অপরাধকর্মের ভুক্তভোগী হতে হয় শিক্ষার্থীদের। এসব ঘটনার অধিকাংশই চাপা পড়ে যায়। হুমকি-ধমকি ও পুনরায় সম্মানহানির ভয়ে ভুক্তভোগীরা কাউকে অসহায়ত্বের কথা জানাতে পারেন না। কোনো ঘটনা কেবল চরম পর্যায়ে পৌঁছলেই তা নিয়ে তারা প্রতিবাদমুখর হন। অধিকাংশ ঘটনার ক্ষেত্রে প্রশাসন নীরব থাকে। ফলে অনেক শিক্ষার্থী নিরাপত্তাহীনতা এবং ক্রমাগত হুমকির মুখে ক্যাম্পাস ছাড়তে বাধ্য হন। নারী শিক্ষার্থীদের এসব ঘটনা আরও ভয়াবহ পরিণতির দিকে ঠেলে দেয়। এই 'স্থানীয় ভীতি' নারীর উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে বড় বাধা। এ ধরনের ভীতির কারণে অনেক অভিভাবক তাদের মেয়েকে দূরে কোথাও পড়াশোনার জন্য পাঠানোর সাহস পান না।

দেশব্যাপী স্থানীয় ও শিক্ষার্থীদের এই অসম সংঘাতের জন্য শুধু স্থানীয় উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তিরাই দায়ী নয়। বিশ্ববিদ্যালয়েও কিছু উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থীর অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়; যাদের সম্পর্ক থাকে ক্ষমতা আর প্রশাসনের সঙ্গে। তাদের কেউ কেউ মাদক ও চাঁদাবাজিতে যুক্ত। স্থানীয় বখাটে ও প্রভাবশালীদের সঙ্গেও তাদের বিশেষ সখ্য গড়ে ওঠে। মাঝেমধ্যে সেই সখ্যে চিড় ধরলে সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় এবং রং-চং মিশিয়ে এসব ঘটনায় জড়ানো হয় সাধারণ শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের।

সম্প্রতি বরিশাল ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর স্থানীয়দের হামলা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা এই দুই গোষ্ঠীর উচ্ছৃঙ্খল আচরণের খণ্ডচিত্র মাত্র। এ ধরনের ঘটনা অভিভাবক মহলকে উদ্বিগ্ন না করে পারে না। এর সঙ্গে যখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্যাম্পাসের বাইরে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে, তখন সে উদ্বেগ আরও বেড়ে যায়। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় শিক্ষার্থীরা হামলায় জড়িতদের নাম স্পষ্ট করে বললেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মামলা করেছে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের নামে! অন্যদিকে বাইরের ঘটনায় কিছু করার নেই বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ অবস্থায় প্রশ্ন ওঠে- বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দেবে কে? বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের বাইরে যদি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে না পারে তাহলে আবাসিক হল বন্ধ রেখে পরীক্ষার আয়োজন করা হয় কোন যুক্তিতে? অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ও হল বন্ধ রেখে পরীক্ষা গ্রহণ করছে। এর ফলে আবাসন সংকট ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন অনেক শিক্ষার্থী। এমতাবস্থায় আগামী ১৭ মার্চ আবাসিক হল খুলে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হলেও শিক্ষার্থীরা তাদের দাবিতে অনড়। কাজেই দ্রুত আবাসিক হল খুলে দেওয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনার দাবি রাখে।

স্থানীয়দের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের চলমান দ্বন্দ্ব কমিয়ে আনতে হলে প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া জরুরি। তদন্তে যারাই দোষী সাব্যস্ত হোক; তাদের বিচারের মুখোমুখি করার দৃষ্টান্ত স্থাপন করা গেলে এ ধরনের ঘটনা অনেকাংশে কমে আসবে।

 

লেখক : সুদীপ্ত সাইফুল, সাংবাদিক

প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নতুন নির্দেশনা ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির বেশি হলে স্থানীয়ভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হতে পারে - dainik shiksha তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির বেশি হলে স্থানীয়ভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হতে পারে বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষাখাত - dainik shiksha বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিক্ষাখাত আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0036571025848389