কুড়িগ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা হোসেন আলী হত্যা মামলায় ছয় জেএমবি সদস্যকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার দুপুরে কুড়িগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. আব্দুল মান্নান এ রায় ঘোষণা করেন। ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে সংঘটিত এ হত্যা মামলায় এ রায় ঘোষণা করেন বিচারক। একই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের হওয়া বিস্ফোরক মামলায় তিন জেএমবি সদস্যকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে। পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এসএম আব্রাহাম লিংকন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জেএমবি সদস্যরা হলেন, রিয়াজুল ইসলাম ওরফে মেহেদী, জাহাঙ্গীর ওরফে রাজীব গান্ধী, গোলাম রব্বানী, হাসান ফিরোজ ওরফে মোখলেছ, মাহাবুব হাসান মিলন ওরফে হাসান এবং আবু নাসের ওরফে রুবেল। এদের মধ্যে রিয়াজুল ইসলাম ওরফে মেহেদী পলাতক রয়েছে। বাকি পাঁচ আসামির উপস্থিতিতে আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। পলাতক রিয়াজুল ইসলামকে গ্রেফতারের পর হতে সাজা কার্যকরের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, বীর মুক্তিযোদ্ধা হোসেন আলী হত্যা মামলায় ১০ জেএমবি সদস্যকে আসামি করা হয়েছিলো। কিন্তু চার্জশিট দাখিলের আগেই পুলিশের গুলিতে তিন আসামি এবং চার্জশিট দাখিলের পর আরও এক আসামি নিহত হলে তাদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বাকি ছয়জনের বিরুদ্ধে এবং জাহাঙ্গীর ওরফে রাজীব গান্ধী, মো. রিয়াজুল ইসলাম ওরফে মেহেদী এবং গোলাম রব্বানী নামে তিন আসামির বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে পৃথক দুটি অভিযোগ গঠন করে আদালত।
আদালত সূত্র জানায়, উভয় মামলার আসামিদের মধ্যে রিয়াজুল ইসলাম ওরফে মেহেদী পলাতক রয়েছে। অপর পাঁচ আসামি জাহাঙ্গীর ওরফে রাজীব গান্ধী, গোলাম রব্বানী, হাসান ফিরোজ ওরফে মোখলছ, মাহাবুব হাসান মিলন ওরফে হাসান এবং আবু নাসের ওরফে রুবেল বিভিন্ন সময় গ্রেফতার হয়ে কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে বন্দি ছিলেন। তাদের উপস্থিতিতে বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণা করা হয়।
এদিকে রায় ঘোষণায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন নিহত বীর মুক্তিযোদ্ধা হোসেন আলীর একমাত্র ছেলে ও মামলার বাদি রুহুল আমিন আজাদ। তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, দীর্ঘ কয়েক বছর পর হলেও মামলার রায় ঘোষণায় আমরা খুশি। আমরা চাই দ্রুত এ রায় কার্যকর করা হোক।
পিপি এস এম আব্রাহাম লিংকন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করার উদ্দেশে সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রাষ্ট্রকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা অপপ্রয়াসে এ খুন করা হয়েছে। এটা কোনও সাধারণ খুন নয়। রাজনৈতিক উদ্দেশে এ খুন করা হয়েছে। আসামিরা আদালতে দেয়া তাদের জবানবন্দিতে সেটা স্বীকারও করেছেন। এই রায়ে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি এ ধরণের অপরাধ দমনে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
এদিকে রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আদালত প্রাঙ্গনে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। রায় ঘোষণার পরপরই নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তায় দন্ডপ্রাপ্ত জেএমবি সদস্যদের কারাগারে পাঠানো হয়।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের ২২ মার্চ কুড়িগ্রাম শহরের কৃষ্ণপুর গাড়িয়াল পাড়ার কাছে গড়ের পার এলাকায় প্রাতভ্রমণে বের হন ওই এলাকার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা হোসেন আলী। এর আগে তিনি ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন। ওইদিন সকাল পৌনে ৭ টার দিকে ওই এলাকার আশরাফিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উত্তরে পাকা রাস্তার ওপর হোসেন আলীকে কুপিয়ে হত্যা করে জেএমবি সদস্যরা। স্থানীয় কয়েকজন ব্যাক্তি তাদের আটকের চেষ্টা করলে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে হত্যাকারীরা। ওই দিনই অজ্ঞাত দুবৃত্তদের আসামি করে কুড়িগ্রাম সদর থানায় মামলা করেন নিহত মক্তিযোদ্ধার একমাত্র ছেলে রুহুল আমিন আজাদ।