ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তারের প্রায় আড়াই বছর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট। জামিন হওয়ার আগে থেকে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের সিসিইউতে ছিলেন। গতকাল বুধবার বিকাল ৩টার দিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে সম্রাটের জামিনের কাগজপত্র পৌঁছে। পরে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থা থেকে বিকাল ৪টার দিকে মুক্তি পান। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলসুপার সুভাষ ঘোষ ও জেলার মাহাবুবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান চলাকালে ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেই সময়ের সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাটকে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। গ্রেপ্তারের পর তার বিরুদ্ধে ৪টি মামলা দায়ের করা হয়। মামলাগুলো হলো- অস্ত্র, মাদক, অর্থপাচার এবং দুদকের দায়ের করা মামলা। মামলাগুলোর তদন্ত চলাকালে তিনি ৩১ মাসের বেশি সময় কারাগারে ছিলেন। তবে কারাগারে থাকাকালে বেশির ভাগ সময় তিনি বিএসএমএমইউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
স¤্রাটের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলাগুলোর মধ্যে দুদকের মামলাটি আলোচিত। ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর দুদকের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম দুই কোটি ৯৪ লাখ ৮০ হাজার ৮৭ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সম্রাটের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার
অভিযোগ করা হয়, সম্রাট বিভিন্ন অবৈধ ব্যবসা ও অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে দুই কোটি ৯৪ লাখ ৮০ হাজার ৮৭ টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন। তিনি অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থ দিয়ে ঢাকার গুলশান, ধানমন্ডি ও উত্তরাসহ বিভিন্ন স্থানে একাধিক ফ্ল্যাট, প্লট কিনেছেন ও বাড়ি নির্মাণ করেছেন। এছাড়া তার সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দুবাই ও যুক্তরাষ্ট্রে নামে-বেনামে এক হাজার কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। মামলা তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর সম্রাটের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম।
গত ১০ এপ্রিল অস্ত্র মামলায় ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ফায়সাল আতিক বিন কাদের এবং অর্থপাচার মামলায় ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেন সম্রাটের জামিন মঞ্জুর করেন। পর দিন ১১ এপ্রিল ঢাকার সপ্তম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ তেহসিন ইফতেখার শুনানি শেষে দশ হাজার টাকা মুচলেকায় রমনা থানার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় তার জামিন মঞ্জুর করেন। গতকাল বুধবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এর বিচারক আল আসাদ মো. আসিফুজ্জামান শুনানি শেষে দুদকের মামলায় সম্রাটের জামিন মঞ্জুর করেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় দুপুরে জামিন লাভ করেন সম্রাট। এর আগে আরো ৩টি মামলায় তিনি জামিন পান। এতে তার মুক্তির বাধা কেটে যায়।
আদালত সর্বশেষ মামলায় গতকাল জামিন দেয়ার পরই হাসপাতালে স¤্রাটের কেবিনে ফুল নিয়ে ভিড় করেন নেতাকর্মীরা। তারা শুভেচ্ছা জানান। ছবি তুলেন। আবেগ আপ্লুুত অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন। জামিনে থাকা অবস্থায় দেশত্যাগ না করতে তার পাসপোর্ট আদালতে জমাদান এবং চিকিৎসা সনদ নিয়মিত আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে।
৪টি মামলায় অল্প সময়ের মধ্যে জামিনে স¤্রাটের মুক্তির নেপথ্যে রাজনীতির নতুন হিসাব-নিকাশের গুঞ্জন রয়েছে। তার জামিনের কারণ হিসেবে শারীরিক অসুস্থতা উল্লেখ করা হলেও অনেকেই বলছেন, মহানগরের রাজনীতির দক্ষ সংগঠক হিসেবে তার মুক্তির জন্য রাজনৈতিক মহলের প্রচেষ্টা ছিল। তবে বিএসএমএমইউর পরিচালক ব্রি. জেনারেল নজরুল ইসলাম খান জানান, সম্রাট এখনো হাসপাতালের সিসিইউতে রয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে চিকিৎসক পরামর্শ দেবেন আর কতদিন থাকতে হবে। তার শারীরিক অবস্থা অনেকটা জটিল। হয়তবা দেশের বাইরেও তাকে চিকিৎসা নিতে হতে পারে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাকসুদুর রহমান জানান, মুক্তি পেলেও এখনই হাসপাতাল ছাড়ছেন না স¤্রাট। তিনি বিএসএমএমইউ হাসপাতালের সিসিইউতেই আপাতত চিকিৎসা নেবেন। তবে মুক্তি লাভের পর তার পাহারায় পুলিশ মোতায়েন থাকবে না।