ঘোড়ার গাড়িতে রাজসিক বিদায় স্কুল কর্মচারীর | স্কুল নিউজ

ঘোড়ার গাড়িতে রাজসিক বিদায় স্কুল কর্মচারীর

চার প্রজন্মের ধারাবাহিকতায় নুরুল আবছারও ছিলেন স্কুুল কর্মচারী।

বিদায় সব সময়ই বেদনার। তবে চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে শতবর্ষী বিদ্যাপীঠ জোরারগঞ্জ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের স্কুুল কর্মচারী নুরুল আফছারের বিদায়টা হলো রাজসিক।

রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) কর্মজীবনের শেষ দিন নুরুল আবছারকে রাজসিক পোশাকে ব্যান্ড বাজিয়ে ঘোড়ার গাড়িতে চড়িয়ে তাঁকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

জানা যায়, চার প্রজন্মের ধারাবাহিকতায় নুরুল আবছারও ছিলেন স্কুুল কর্মচারী। তার প্রপিতামহ বাদশা মিয়া, দাদা ছেরাজুল হক, বাবা মুন্সি মিয়া, এরপর নুরুল আবছার কর্মচারী হিসেবে ১২ বছর বয়সে যোগ দেন মিরসরাই উপজেলার শতবর্ষী জোরারগঞ্জ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে। শিক্ষার্থীরা তাকে ‘আবছার কাকু’ বলে সম্বোধন করতেন, অন্যদিকে শিক্ষকরা ডাকতেন ‘আবছার ভাই’ বলে।

প্রায় পাঁচ দশকের কর্মজীবন শেষে অবসরজনিত কারণে এই প্রতিষ্ঠান থেকে বিদায় নেন তিনি। একজন কর্মচারীর বিদায় অনুষ্ঠান রাজকীয় হয়ে উঠল বিদ্যালয়সংশ্লিষ্ট সবার মায়া, মমতা, ভালোবাসা আর আন্তরিকতায়।

বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ আবদুল হাইয়ের সভাপতিত্বে এবং শিক্ষক নিতাই দাশের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন প্রধান শিক্ষক সাইফুল আলম, আছিউর রহমান, রেজাউল করিম, তারেক নিজামী, বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের অভিভাবক সদস্য আবু সুফিয়ান চৌধুরী, শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস, মারিয়া আক্তার, কাজী জান্নাতুল ফেরদৌস হাবিবা, মেহেদী হাসান, তাহসিনা তাবাচ্ছুম তানিশা, বিবি ফাতেমা, ওবায়দুল ইসলাম চৌধুরী।

জাঁকজমকপূর্ণ এমন আয়োজনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে জোরারগঞ্জ আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের অফিস সহকারী নুরুল আবছার বলেন, ‘১৯৮৪ সালে ৫২০ টাকা বেতনে অফিস সহকারী পদে চাকরি শুরু করে আজ কর্মজীবন শেষ করেছি। আমার বাবা, দাদা, দাদার বাবাসহ চার পুরুষ ধরে এই বিদ্যালয়ে ঘণ্টা বাজানোর কাজ করেছি আমরা। আমার ছেলে আর এ পেশায় না আসায় এখানে শেষ হয়েছে দীর্ঘ এ যাত্রার। সকালে আমার বাজানো ঘণ্টাধ্বনিতে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হুড়মুড়িয়ে ক্লাসে ঢুকছে আবার বিকেলে ছুটির ঘণ্টা বাজলে হুড়াহুড়ি করে বের হয়ে বাড়ির পথ ধরছে, এ দৃশ্য আমাকে খুব আনন্দ দিত। বিদ্যালয়ের দেড় হাজার শিক্ষার্থী ছিল আমার আত্মার আত্মীয়। আজ বিদায়বেলায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা যে সম্মান দেখিয়েছে, এটি আমার জীবনের অনেক বড় পাওয়া।’

সংবর্ধনার পূর্বে ঘণ্টা বাজিয়ে নিজের কর্মজীবনের সমাপ্তি ঘটান তিনি। এরপর স্কাউট দলের সদস্যরা তাকে কাঁধে তুলে সংবর্ধনাস্থলে নিয়ে যান। এক সময় শিক্ষকদের পাশাপাশি এক সারিতে অনুষ্ঠানে বসার সুযোগ না হলেও আজ অনুষ্ঠানের মধ্যমণির আসন অলংকৃত করেন নুরুল আবছার।

সংবর্ধনায় সহকর্মী, শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের অনেকে তার কর্মময় জীবন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন, সবাই প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

নানা উপহার সামগ্রী, অর্থ সহায়তা দিয়ে সম্মান জানিয়েছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

অনুষ্ঠানে সবার মুখে মুখে একটি কথাই ফুটে উঠে, নুরুল আবছার একজন সৎ ও ভালো মানুষ ছিলেন। ভালো আমানতকারী ছিলেন। যুগযুগ ধরে তিনি মানুষের মাঝে বেঁচে থাকবেন। কাজের ক্ষেত্র যতই ছোট হোক না কেন, সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা নিয়ে কাজ করলে মানুষের অপার ভালোবাসা লাভ করা যায় সেটাই প্রমাণ করলেন নুরুল আবছার।