বাংলাদেশ ভ্রমণে এসেছিলেন ইতালিয়ান নাগরিক তানিয়া মোহাম্মদ শেখ নূর (২৭)। পেশায় শিক্ষিকা এই বিদেশিনী ঢাকার মাটিতে পা দিয়েই পড়েন ভয়ংকর বিপদে। পরে পুলিশের সহায়তায় খোয়া যাওয়া তার সবকিছু উদ্ধার করা হয়।
জানা যায়, গত ২ ফেব্রুয়ারি ভোরে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন ইতালিয়ান নাগরিক তানিয়া মোহাম্মদ শেখ নূর। সেখান থেকে তিনি রাইড শেয়ারিং মোটরসাইকেলে যাচ্ছিলেন আগে থেকেই ঠিক করা উত্তরা-১৩ নম্বর সেক্টরের একটি হোটেলে। কিন্তু পথিমধ্যে মোটরসাইকেল চালক ও তার সহযোগী ইতালিয়ান নাগরিককে নির্জন স্থানে নিয়ে গলা চেপে ধরে সবকিছু ছিনিয়ে নিয়ে চলে যায়। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় পুলিশে খবর দেওয়া হয়।
পুলিশ বলছে, তানিয়া বিমানবন্দর থেকে ভাড়া করা মোটরসাইকেলে গন্তব্যে যাচ্ছিলেন; কিন্তু চালক খোরশেদ আলম তাকে গন্তব্যে না নিয়ে উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের ১ নম্বর মেট্রোরেল স্টেশন সংলগ্ন ব্রিজের পাশে নির্জন এলাকায় নিয়ে যান। সেখানে চালক আগে থেকেই তার সহযোগী শাহিন মিয়াকে অপেক্ষায় রাখেন। ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর দুজন মিলে ওই তরুণীর গলা চেপে ধরে মাটিতে ফেলে দেন। এরপর তার ব্যাগ ছিনিয়ে পালিয়ে যান। আতঙ্কিত তানিয়া স্থানীয়দের সহায়তায় তুরাগ থানায় গিয়ে ঘটনা জানান।
এ বিষয়ে তুরাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রাহাত খান বলেন, বিদেশি নাগরিকের এমন তিক্ত অভিজ্ঞতায় শুনে পুলিশও বিব্রত হয়। সঙ্গে সঙ্গেই তাকে আশ্বস্ত করা হয় এবং তার দূতাবাসে ঘটনা জানানো হয়। পাশাপাশি সব হারানো বিদেশি তরুণীকে পুলিশের পক্ষ থেকে তার ভাড়া করা হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করা হয়।
তিনি বলেন, ঘটনার পরই ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশে টিম গঠন করে অভিযানে নামেন তারা। তরুণী যেখান থেকে মোটরসাইকেলে উঠেছিলেন, দ্রুত বিমানবন্দরের সেই পিকআপ পয়েন্ট থেকে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে মোটরসাইকেলের নম্বর প্লেট সংগ্রহ করা হয়। এরপর মোটরসাইকেলের মালিককে শনাক্ত করে দেখা যায়, সেটি অন্য একজন চালাচ্ছেন। পরে রোববার রাতে ছিনতাইকারী দলে সদস্য চালক খোরশেদ আলম ও তার সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তার খোরশেদ আলম ও তার সহযোগী শাহিন মিয়া মাদকাসক্ত। মূলত তারা রাইড শেয়ারিং মোটরসাইকেলের চালক সেজে যাত্রী তুলে সবকিছু ছিনিয়ে নেয়। এরপর সেই টাকা দিয়ে মাদক কিনে সেবন করে। বিদেশি তরুণীর কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া ৫০ ইউরো ভাঙিয়ে তারা ইয়াবা কিনে সেবন করে। তবে তরুণীর কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া ব্যাংকের কয়েকটি কার্ড ও পাসপোর্ট অক্ষত অবস্থায় পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে সোমবার (৩ জানুয়ারি) মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার রওনক জাহান বলেন, বিমানবন্দরের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও প্রযুক্তির সহায়তায় প্রথমে মোটরসাইকেল চালক খোরশেদ আলমকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হয়।