ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধের দামামায় সংকট পড়বে বিশ্ব ক্রিকেট। যার বড় একটা প্রভাব বাংলাদেশের ক্রিকেটেও পড়বে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
ইতোমধ্যে এ নিয়ে ভারতের সাবেক অধিনায়ক ও ধারাভাষ্যকার সুনীল গাভাস্কার তির ছুড়ে দিয়েছেন। সম্প্রতি স্পোর্টস টুডেকে তিনি বলেছেন, সেপ্টেম্বরের এশিয়া কাপে পাকিস্তান থাকবে বলে তিনি মনে করেন না।
‘ভারত সরকার যা বলে বিসিসিআই তা-ই করে। এশিয়া কাপের বেলায় ভিন্ন কিছু হওয়ার কথা নয়। এবার তো ভারত, শ্রীলঙ্কা যৌথ আয়োজক।
দেখার বিষয় (ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক) পরিস্থিতির পরিবর্তন হয় কি না। যদি না হয়, আমি পাকিস্তানকে এশিয়া কাপে দেখছি না।’
সেপ্টেম্বর তো দূরে, বাংলাদেশের ক্রিকেটকে পাকিস্তান-ভারত সম্পর্ক এখনই জটিল ভাবনার খোরাক জোগাচ্ছে। চলমান অস্থির পরিস্থিতির মধ্যেই এ মাসের শেষ দিকে পাকিস্তান সফরে যাওয়ার কথা বাংলাদেশ দলের।
১৭ ও ১৯ মে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে দুটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ, সূচি অনুযায়ী ম্যাচ দুটি খেলে সেখান থেকেই বাংলাদেশ দল পাকিস্তানে যাবে পাঁচ টি-টোয়েন্টির সিরিজ খেলতে।
২৫, ২৭ ও ৩০ মে এবং ১ ও ৩ জুন লাহোর আর ফয়সালাবাদে হবে ম্যাচগুলো। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে—বর্তমান পরিস্থিতিতে পাকিস্তান সফর কতটা স্বস্তির হবে বাংলাদেশ দলের জন্য?
স্বাগতিক দেশে রাজনৈতিক বা নিরাপত্তা–সংক্রান্ত অস্থিরতা থাকলে যেকোনো সিরিজ অথবা টুর্নামেন্টের আগে প্রতিনিধিদল পাঠিয়ে নিরাপত্তা পরিস্থিতি যাচাইয়ের চল আছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে।
তবে এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন, যেখানে আসলে অগ্রিম নিরাপত্তা দল পাঠিয়ে কিছু যাচাইয়ের সুযোগ নেই। যুদ্ধের দামামা সত্যি সত্যি কখন, কীভাবে বেজে উঠবে, কোনো প্রতিনিধিদলের পক্ষে তো আর সেটি আঁচ করা সম্ভব নয়।
তাহলে কি চোখ-কান বন্ধ করে আমিরাত থেকে সোজা পাকিস্তানের উড়ানে উঠে যাবে বাংলাদেশ দল? বর্তমান পরিস্থিতিতে তা একটু অবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্তই হবে হয়তো।বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) অবশ্য বিষয়টি নিয়ে এখনো মাথা ঘামানোই শুরু করেনি। এ নিয়ে তাদের নিজেদের মধ্যে কোনো আলোচনাও হয়নি।
এখন পর্যন্ত এটাই ঠিক যে, বাংলাদেশ দল আমিরাত থেকে পাকিস্তানে যাচ্ছে। পাকিস্তান সফর নিয়ে বিসিবির চিন্তাভাবনা জানতে চাইলে কাল বোর্ড সভাপতি ফারুক আহমেদও প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘বাংলাদেশ দল পাকিস্তানে যাচ্ছে, এখন পর্যন্ত এটাই ঠিক আছে।
’ তবে তিনি পরে বলেছেন, ‘যদি নিরাপত্তাজনিত কোনো সমস্যা বা আনঅ্যাভয়েডেবল কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, বোর্ড তখন অবশ্যই সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।’
উপমহাদেশীয় ভূরাজনীতির ছায়া এই অঞ্চলের ক্রিকেটে বরাবরই পড়ে আসছে এবং সেটি সব সময় ভারত-পাকিস্তানকেন্দ্রিকই থাকে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কথা যদি ধরেন; পাকিস্তানের সঙ্গে বেশি ভালো সম্পর্ক রাখলে ভারত সেটি ভালোভাবে দেখে না।
আবার ভারতের সঙ্গে বেশি ভালো সম্পর্ক রাখলে পাকিস্তানও বাংলাদেশকে অন্য চোখে দেখে। এই দুই দেশের সঙ্গে সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করাটা তাই বড় চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশের জন্য।
বাংলাদেশের আসন্ন পাকিস্তান সফর এফটিপির অংশ। সফরটি করার ব্যাপারে তাই বাংলাদেশের বাধ্যবাধকতা আছে। এখন যদি কোনো কারণে সেটি নাও হতে পারে, ভবিষ্যতে বাংলাদেশ দলকে সেখানে গিয়ে এই প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে হবে।
তবে জুনে পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন টি-টোয়েন্টির হোম সিরিজ এফটিপির অংশ ছিল না। এটি ঠিক হয়েছে গত চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সময় দুই বোর্ড সভাপতির মধ্যে হওয়া দ্বিপক্ষীয় আলোচনায়।
মিরপুরে এই তিনটি টি-টোয়েন্টি হওয়ার কথা ২০, ২২ ও ২৪ জুলাই। এফটিপির বাইরে গিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের এ রকম একটি সিরিজ আয়োজন যে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের বিশেষ মনোযোগ কেড়েছে, তাতে সন্দেহ নেই।
তার ওপর এফটিপি অনুযায়ী এর অল্প কয় দিন পরই ভারতীয় দলের বাংলাদেশ আসার কথা তিনটি করে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির সিরিজ খেলতে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সিরিজটি নির্ধারিত সময়ে না হওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল। ১৩ আগস্ট ভারতীয় দলের ঢাকায় আসার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে ভারত মত বদলাতে পারে, পিছিয়ে যেতে পারে সিরিজ।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়াও সম্প্রতি সে আভাস দিয়ে লিখেছে, আন্তসীমান্ত উত্তেজনা উপমহাদেশের ক্রিকেট সূচি ব্যাহত করতে পারে, এর ছায়া পড়তে পারে বাংলাদেশ-ভারত সিরিজেও।
পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এমন একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে তারা লিখেছে, ‘সফরটি সূচির (এফটিপি) অংশ হলেও কিছুই চূড়ান্ত নয়। বর্তমান পরিস্থিতির কারণে ভারতের বাংলাদেশ সফর না-ও হতে পারে।
এমন সম্ভাবনাই বেশি।’ তবে কাল বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ প্রথম আলোকে এ নিয়ে বলেছেন, ‘ভারত সিরিজ হচ্ছে, এটাই আমরা জানি। যেভাবে কথা হয়েছিল, সব সেভাবেই আছে। নতুন কোনো আলোচনা হয়নি।’
সূচি অনুযায়ী মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-ভারত প্রথম দুটি ওয়ানডে হওয়ার কথা ১৭ ও ২০ আগস্ট।চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শেষ ওয়ানডে ২৩ আগস্ট। চট্টগ্রামেই প্রথম টি-টোয়েন্টি ২৬ আগস্ট। ২৯ ও ৩১ আগস্ট মিরপুরে শেষ দুই টি-টোয়েন্টি।