অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্টের ফান্ডে ১০ শতাংশ হারে অর্থ কাটার আদেশ বাতিল দাবিতে ৪ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন ১০টি শিক্ষক-কর্মচারী সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ফেডারেশন। সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচির ঘোষণা করেন বাংলাদেশ শিক্ষক-কর্মচারী সমিতি ফেডারেশনের আহ্বায়ক ও অবসর সুবিধা বোর্ডের সাবেক সদস্য-সচিব আসাদুল হক।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- আগামী ২ মে সকল উপজেলায় মানববন্ধন ও দাবির সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল। ৪ মে ঢাকাসহ সকল জেলায় শিক্ষক-কর্মচারী সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল। ৯ মে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের একটি প্রতিনিধি দল প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি প্রদান করবে এবং ২৩ মে ঢাকায় প্রতিনিধি সভা ও সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে পরবর্তী কর্মসূচি গ্রহণ করবে।
আসাদুল হক বলেন, আমরা আশা করেছিলাম শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি শিক্ষক-কর্মচারীদের সম্পর্কে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করবেন। কিন্তু কোনো প্রকার আলোচনা-কথাবার্তা ছাড়াই গত ১৫ এপ্রিল অতিরিক্ত ৪ শতাংশ বেতন কর্তনের যে আদেশ জারি করা হয়েছে তা শিক্ষক সমাজকে আশাহত করেছে।
তিনি বলেন, এর আগেও একই রকম সিদ্ধান্ত নেয়া হলে তা আন্দোলনের মুখে স্থগিত করা হয়। কিন্তু হঠাৎ করে কিছু স্বার্থান্বেষী মহলের প্ররোচনায় শিক্ষক-কর্মচারীদের মতামতের তোয়াক্কা না করে শিক্ষাঙ্গনে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার লক্ষ্যে আবারও প্রজ্ঞাপনটি জারি করা হয়েছে।
শিক্ষক নেতা আসাদুল অবিলম্বে শিক্ষক-কর্মচারীদের স্বার্থের পরিপন্থি প্রজ্ঞাপনটি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষক-কর্মচারীদের সাথে একটি অদৃশ্য দূরত্ব সৃষ্টি করে নিজেদের ইচ্ছামতো বিধি-বিধান পরিবর্তন করছেন। অথচ ইউনেস্কো ও আইএলও’র সুপারিশমালায় স্পষ্ট উল্লেখ আছে যে, শিক্ষকদের সম্পর্কে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে তাদের প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়ার। শিক্ষামন্ত্রী, সচিব ও শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা অনেকই ইউনেস্কো ও আইএলও’র বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য বিদেশে যান অথচ এসব সংগঠনের নীতিমালা প্রয়োগের ক্ষেত্রে তারা কোনো ভূমিকাই রাখেন না।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. নূর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, আমরা কিছুদিন আগে আন্দোলন করে ৫ শতাংশ বৈশাখী ভাতা আদায় করেছি। কিন্তু আমাদের সাথে কোনো ধরনের আলোচনা না করেই হঠাৎ করে বেতনের অতিরিক্ত ৪ শতাংশ কেটে নেয়ার আদেশ দেয়া হয়েছে। এই আদেশ আমাদের বুকে ছুরিকাঘাতের মতো।
৫ দফা দাবি: ১০টি শিক্ষক সংগঠন গতকাল সংবাদ সংম্মেলনে ৫ দফা দাবি তুলে ধরেন। এসব দাবির মধ্যে- বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ড এবং শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন হতে অতিরিক্ত ৪ শতাংশ কর্তনের প্রজ্ঞাপন অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসর সুবিধা বোর্ড এবং শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে বেতন ভাতা প্রদানের পরিবর্তে পূর্ণাঙ্গ পেনশন সুবিধা চালু করতে হবে। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপাল, ভাইস-প্রিন্সিপাল, প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের নতুন নীতিমালা বাতিল করে পূর্বের নীতিমালা বহাল রাখতে হবে। অনার্স-মাস্টার্স পাঠদানকারী শিক্ষক ও ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্ত করতে হবে। সম্মানজনক বাড়ি ভাড়া, পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা ও মেডিকেল ভাতা প্রদান করতে হবে।