অনলাইন শিক্ষা ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী - দৈনিকশিক্ষা

অনলাইন শিক্ষা ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

করোনাভাইরাসের বেড়াজালে বর্তমানে সারা বিশ্ব এক মহাক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। মানবজীবনের প্রতিটি ক্ষেত্র- ব্যবসা, অর্থনীতি, শিক্ষা, যোগাযোগ করোনার মারাত্মক প্রভাবে প্রভাবিত। মানুষ এক অনিশ্চয়তার মধ্যে দৈনন্দিন জীবন অতিবাহিত করছেন। এ অবস্থার মধ্যেও টিকে থাকার স্বার্থে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও কেন্দ্রীয়ভাবে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে টেলিভিশন ও অনলাইন মাধ্যমে এবং কোথাও কোথাও স্কুলকেন্দ্রিক অনলাইন ক্লাসের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে। উচ্চশিক্ষায় অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউজিসির অনুমতিক্রমে অনলাইন ক্লাস চালু করেছে। কিন্তু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখনও সম্ভাব্যতা যাচাই করে চলছে। মঙ্গলবার (২ জুন) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক নি্বন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

নিবন্ধে আরও জানা যায়, এমতাবস্থায়, করোনাভাইরাস বা কভিড-১৯ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের মানসিক, কারিগরি ও আর্থিক প্রস্তুতি যাচাই করার জন্য আমরা অনলাইন সমীক্ষা ও টেলিফোন সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে একটি গবেষণা করি। এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ মোট ১০টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত মোট ৬০৭ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন, যাদের ৫৮ শতাংশ পুরুষ ও ৪২ শতাংশ নারী। পদ্ধতিগত কারণে গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল বাংলাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সামগ্রিক অবস্থা তুলে না ধরলেও অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরেছে।

বর্তমান গবেষণার তথ্যানুসারে, কভিড-১৯-এর কারণে ঘোষিত সাধারণ ছুটিতে শিক্ষার্থীদের ৩৬ শতাংশ কৃষিকাজ বা গৃহস্থালির কাজ, ২২ শতাংশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ১৫ শতাংশ গল্পের বই পড়া, ১১ শতাংশ অনলাইন বিনোদন, ৭ শতাংশ চাকরির প্রস্তুতি ও ৪ শতাংশ ত্রাণ কাজে নিয়োজিত। মাত্র ৩ শতাংশ শিক্ষার্থী এ সময়ে লেখাপড়ার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পেরেছেন। , গ্রামে অবস্থানকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় ৮০ শতাংশ কৃষিকাজ বা গৃহস্থালির অন্যান্য কাজে যুক্ত।

অনলাইন কার্যক্রমের প্রধান শর্ত হলো, ইন্টারনেট কানেক্টিভিটি। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে প্রায় ৯৪ শতাংশ শিক্ষার্থীরই ইন্টারনেট প্রবেশগম্যতা রয়েছে। সমীক্ষাটি যেহেতু অনলাইনে সম্পন্ন হয়েছে, কোনো না কোনো অনলাইন সেবার আওতায় থাকা শিক্ষার্থীরাই এতে অংশগ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে মেট্রোপলিটন (২৯ শতাংশ), জেলা শহর (২২ শতাংশ), উপজেলা সদর (১৪ শতাংশ) ও গ্রাম (৩৫ শতাংশ)। অংশগ্রহণকারীদের মতামতে প্রতীয়মান হয় যে, অনলাইন ক্লাসের জন্য বিভাগীয় এবং জেলা সদরগুলোতে প্রয়োজনীয় ওয়াইফাই বা ব্রডব্যান্ড সুবিধা থাকলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে মোবাইল ডাটা ছাড়া ইন্টারনেট সুবিধা পাওয়া দুরূহ। সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের ৬২ শতাংশ মোবাইল ডাটা, ৩৬ শতাংশ ওয়াইফাই বা ব্রডব্যান্ড ও ২ শতাংশ পোর্টেবল মডেমের মাধ্যমে ইন্টারনেট সুবিধা গ্রহণ করছেন।

এমতাবস্থায়, ইন্টারনেট প্রবেশগম্যতা থাকলেও অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের জন্য পর্যাপ্ত ইন্টারনেট ডাটা ক্রয় শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশের (৪৭ শতাংশ) জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ, বিশেষ করে গ্রামে অবস্থানকারী শিক্ষার্থীদের ৬৫ শতাংশ এর জন্য। অংশগ্রহণকারীদের মতে, একটি এক ঘণ্টার ভিডিও ক্লাসের জন্য ৭০০-১০০০ মেগাবাইট ডাটা প্রয়োজন হয়। একজন শিক্ষার্থীর যদি পাঁচটি কোর্স থাকে এবং সপ্তাহে কোর্সপ্রতি একটি করেও অনলাইন ক্লাস হয়, তবে মাসে ২০টি ক্লাসের জন্য তাকে বেশ বড় ধরনের খরচ বহন করতে হবে।

অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের আরেকটি বড় শর্ত হলো, উপযুক্ত ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী থাকা। সমীক্ষায় অধিকাংশ শিক্ষার্থীই (৮৮ শতাংশ ) নির্ভর করছেন মোবাইল ফোনের ওপর এবং মাত্র ৮ শতাংশ ল্যাপটপ, ৩ শতাংশ  ডেস্কটপ কম্পিউটার ও ১ শতাংশ  ট্যাবলেটের ওপর। এই চিত্রটি গ্রামে অবস্থানকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে আরও প্রকট, যাদের প্রায় ৯৬ শতাংশ  এর অবলম্বন হলো মোবাইল ফোন। তবে বলা বাহুল্য, মাত্র ৩ শতাংশ  শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে ইলেক্ট্রনিক সামগ্রীবিষয়ক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা প্রকাশ করেছেন।

এ গবেষণায় দ্বৈবচয়ন সাক্ষাৎকারে একজন শিক্ষার্থী দক্ষিণাঞ্চলের একটি সাইক্লোন শেল্টার থেকে অংশগ্রহণ করেছিলেন। সাইক্লোন আম্পানে ক্ষয়ক্ষতির শিকার হওয়া সত্ত্বেও তিনি সময়মতো শিক্ষাজীবন শেষ করার তাগিদে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। অনুরূপভাবে, বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও গ্রামে অবস্থানকারী প্রায় ৭০ শতাংশ  শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। সামগ্রিকভাবে অংশগ্রহণকারীদের প্রায় ৮০ শতাংশ  কভিড-১৯ পরিস্থিতিতেও তাদের শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার জন্য অনলাইন ক্লাস করতে আগ্রহী। বিশেষ করে, স্নাতক (শেষ বর্ষ) ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের প্রায় ৯০ শতাংশ  শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাস করে তাদের কোর্স সম্পন্ন করতে চান।

আমরা স্ব-উদ্যোগে জুম এবং গুগল ক্লাসরুম ব্যবহার করে ৩-৫টি করে ক্লাস পরিচালনা করেছি, যেখানে প্রতি ক্লাসে গড়ে ৪০ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল। আমরা দেখেছি যে, প্রতি ক্লাসে ৭-১০ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন কারণে অনুপস্থিত থেকেছে। এর মধ্যে অপর্যাপ্ত মোবাইল ডাটা একটি অন্যতম প্রধান কারণ। আমরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে কয়েকজনকে ডাটা স্পন্সর করে দেখেছি যে, খুব সামান্য সহযোগিতা খুলে দিতে পারে অসাধারণ সম্ভাবনার দ্বার। বর্তমান গবেষণায়ও অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে যে ধরনের সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা উঠে এসেছে তার মধ্যে প্রধান হলো 'ইন্টারনেট-ডাটা' সুবিধা। এ ছাড়া প্রয়োজনীয়তা রয়েছে অনলাইন লাইব্রেরির ও সাইকোলজিক্যাল কাউন্সেলিংয়ের সুযোগ।

কভিড-১৯ একদিকে যেমন সমগ্র বিশ্বকে স্থবির করে রেখেছে, ঠিক তেমনি মানুষকে দিচ্ছে প্রকৃতির সঙ্গে মানিয়ে চলার সক্ষমতা। বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো যেখানে 'ফেস-টু-ফেস' শিক্ষণকেই নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত, বর্তমান পরিস্থিতিকে পরিবর্তনের একটি উত্তম সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করতে পারে। শিক্ষাব্যবস্থায় বিশেষ করে উচ্চশিক্ষায় দীর্ঘদিনের প্রচলিত কাঠামো ভেঙে শিক্ষণ-শিখন কার্যক্রম পরিচালনা ও মূল্যায়নে আনতে পারে কার্যকর পরিবর্তন, যার শুরুটা হতে পারে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের সূচনা করে।

লেখকত্রয়ী : ড. মো. আহসান হাবীব, ড. ম. মনিনুর রশিদ ও ড. মো. সাইফুল মালেক, সহযোগী অধ্যাপক, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইআর), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0089321136474609