অনলাইন সিটিজেন প্রোফাইল: একটি প্রস্তাবনা - দৈনিকশিক্ষা

অনলাইন সিটিজেন প্রোফাইল: একটি প্রস্তাবনা

প্রফেসর ড. মোল্লা আমীর হোসেন |

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন লালিত স্বপ্ন ছিলো শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সোনার বাংলা গড়া। বাঙালি ও বাংলাদেশের প্রতি তার অকৃত্রিম ভালোবাসার টানে তিনি এ লক্ষ্য অর্জনে কখনো পিছপা হননি। লড়াই করেছেন, নির্যাতন সহ্য করেছেন, ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে অসাম্প্রদায়িকতার মন্ত্রে দীক্ষা দিয়ে সকল বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন এবং মুক্তি অর্জনের জন্য দিয়েছেন একটি স্বাধীন দেশ, বাংলাদেশ। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ১০ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে এসে শোষণমুক্ত সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি হাতে নেন মহাপরিকল্পনা। কিন্তু পরাজিত শত্রুরা স্বাধীনতাকে নিরর্থক করে দিতে ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ আগস্টের রাতে অন্ধকারে কাপুরুষোচিত হামলা করে তাকে সপরিবারে হত্যা করে বাঙালির মুক্তির সে স্বপ্ন ভেঙে দেয়। দেশকে নিয়ে যায় পেছনের দিকে। বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিগণিত করে স্বাধীনতা অর্জনকে নিরর্থক প্রমাণে সর্বাত্মক চেষ্টা চালায়। এরপর দীর্ঘ একুশ বছর পর বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা ষড়যন্ত্রকারী স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির অপদখল থেকে দেশকে মুক্ত করে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন এবং জাতির পিতার শোষণমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার কাজে মনোনিবেশ করেন। এ উদ্দেশে তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি গ্রহণ করে জনগণকে ঘরে বসে সেবা দিতে পরিকল্পনা করেন। জনগণকে যাতে সেবা নিতে সরকারি প্রতিষ্ঠানে আসতে না হয়, কর্মকর্তা কর্মচারীরা যাতে হয়রানি করতে না পারেন, শোষণ করতে না পারেন সে জন্যই ডিজিটাল পদ্ধতিতে ঘরে ঘরে সরকারি সেবা পৌঁছে দেবার ব্যবস্থা করেন। এই ডিজিটাল বা অনলাইন পদ্ধতিতে ঘরে ঘরে সেবা পৌঁছে দেয়াই শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্নের সফল বাস্তবায়ন। ডিজিটাল কর্মসূচির কাঠামোতে আজ সরকারের অফিসের কার্যক্রম শুধু অফিসের গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, তা সম্প্রসারিত হয়েছে মানুষের ঘরে ঘরে। মানুষ ঘরে বসে অনলাইনে আবেদন করে অনলাইনেই পত্র বা সেবা পেয়ে থাকে। যে আবেদন বা সেবা চাহিদা পত্রটি জমা দেবার জন্য সরকারের অফিসে যেয়ে কর্মচারীদের পেছনে সেবাগ্রহীতাকে ধরনা দিতে হতো, তা এখন সেবা গ্রহীতা ঘরে বসেই দাখিল করে এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অনলাইনে তা নিষ্পত্তি করে দেয় ও সেবা গ্রহীতা ঘরে বসেই তা ডাউনলোড করে নেয়। ফলে সেবা গ্রহীতাকে সেবার জন্য সরকারি অফিসে আসতে হয় না, সুতরাং হয়রানিরও শিকার হতে হয় না। এটাই শোষণমুক্ত বাংলাদেশ।

বর্তমানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিজস্ব ওয়েব পোর্টাল ব্যবহার করে নিজস্ব অনলাইন পদ্ধতিতে সেবা প্রদান করায় বিভিন্ন পদ্ধতির উদ্ভব হয়েছে। প্রতিষ্ঠান ভেদে এ সেবার পদ্ধতি পৃথক হওয়ায় সেবা গ্রহীতারা এই বিভিন্ন পদ্ধতি আয়ত্ত করতে ব্যর্থ হয়ে অধিকাংশ সময়ই পরনির্ভর হয়ে পড়ছে। এতে হয়রানি কিছুটা থেকে যায়। ফলে অনলাইন সেবা বিষয়ে স্টেকহোল্ডাররা কিছুটা বিমুখ হয়ে পড়ে। এক প্রতিষ্ঠানে এক ধরনের সেবা পদ্ধতি আয়ত্ত করার পর অন্য প্রতিষ্ঠানে ভিন্ন পদ্ধতি সম্পর্কে তার অজ্ঞতা তাকে অপ্রস্তুত করে ফেলে। প্রতিষ্ঠান ভেদে সেবার ধরন যে আলাদা হবে এটাই স্বাভাবিক, তবে আবেদন ও প্রাপ্তি পদ্ধতি একই রকম হলে সেবাগ্রহীতার পক্ষে তা আয়ত্ত করা সহজ হতো। অনেক সাধারণ মানুষের পক্ষে একাধিক পদ্ধতি মনে রাখা কষ্টকরও বটে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য আলাদা আলাদা আইডি-পাসওয়ার্ড সংরক্ষণ করতে হয়। ফলে সাধারণ মানুষের কাছে জটিল মনে হয়। তাদের আগ্রহ কমে যায় ও বিমুখ হয়ে পরনির্ভর হয়ে পড়ে। এতে একটা তৃতীয় শ্রেণি কিছু আয় করে নেবার সুযোগ নিতে সচেষ্ট হয়। ফলে পরোক্ষভাবে সেবাপ্রার্থীরা শোষণের শিকার হয়। 

বর্তমানে প্রতিষ্ঠান ভেদে ব্যবহার পদ্ধতি পৃথক হওয়ায় একজন সেবা গ্রহীতা তথা একজন নাগরিক তার প্রাপ্ত সেবাগুলোকে একটি পারসোনাল প্রোফাইলে সংরক্ষণ করতে পারছে না বিধায় প্রয়োজনানুযায়ী দ্রুত সময়ের মধ্যে তথ্য ব্যবহার করতেও পারছে না। এ জন্য তাকে সব প্রতিষ্ঠানের সেবা সংক্রান্ত তথ্যকে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করতে হয়। যেমন-সকল প্রকার সনদ, ভিসা ও ইমিগ্র্যান্ট সিলযুক্ত পাসপোর্ট, চিকিৎসা রিপোর্ট, কোনো প্রতিষ্ঠানে দাখিলকৃত তথ্যের কপি ইত্যাদি। ফলে ডিজিটাল হওয়া স্বত্ত্বেও ম্যানুয়াল থেকে সম্পূর্ণরূপে বের হয়ে আসা যায়নি। ফলে ম্যানুয়ালভাবে সংরক্ষণের ঝুঁকি বহন করেই তাকে চলতে হচ্ছে। যেমন-সনদ নষ্ট হয়ে যাওয়া, কোনো দুর্ঘটনার কবলে পড়ে হারিয়ে যাওয়া। কিছু সনদ আছে, যা একবার হারিয়ে গেলে তার ডুপ্লিকেট কপি কখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয় না, যেমন- চিকিৎসার টেস্ট রিপোর্ট, ভিসা ও ইমিগ্রান্ট সিলযুক্ত পাসপোর্ট ইত্যাদি। 

একজন নাগরিক সারা জীবন যে নাগিরিক সেবা নেয় তা একটি সমন্বিতরূপে এমন একটি তথ্য ভান্ডারে স্থায়ীভাবে সংরক্ষণে থাকা আবশ্যক, যা স্টেইকহোল্ডার বা উক্ত নাগরিক এবং সেবা দাতা প্রতিষ্ঠান যে কোনো সময়ে নাগরিক ও রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে প্রয়োজনীয় তথ্য একই তথ্য ভান্ডার থেকে যার যার দুয়ার খুলে প্রবেশ করে ব্যবহার করতে পারে। এ জন্য ব্যক্তি বা নাগরিকভিত্তিক এমন একটি কেন্দ্রীভূত পদ্ধতি থাকা দরকার যেখানে একজন নাগরিকের সারা জীবনের সকল অর্জন, সকল কার্যক্রমের তথ্য সে নিজে সংরক্ষণ করে রাখতে পারবে এবং বিভিন্ন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক তাদের প্রদত্ত সেবাসমূহ সেবা গ্রহীতার প্রোফাইলে আপলোড করে দিতে পারে। প্রতিটি ব্যক্তি তার আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে তার সারা জীবনের সকল অর্জন ও প্রাপ্ত সেবা প্রতিনিয়ত দেখতে পাবে, প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারে, পাশাপাশি ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে সংরক্ষণের যে বিড়ম্বনা বা ঝুঁকি তা থেকে মুক্ত থাকবে বা রক্ষা করতে পারে। এ জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে ‘অনলাইন সিটিজেন প্রোফাইল’ নামে এমন একটি সফটওয়ার তৈরি করা হবে, যেখানে সেবা গ্রহণকারী সকল ব্যক্তির জন্য এমন একটি প্রোফাইল পেজ সংরক্ষিত থাকবে, যাতে ব্যক্তির নিজের এবং সেবাদানকারী সকল প্রতিষ্ঠানের প্রদত্ত সেবার তথ্য আপলোডের পর্যাপ্ত অপশন ও স্পেইস থাকবে। তবে এ জন্য বর্তমানে ব্যবহৃত বা প্রচলিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সেবা পদ্ধতি, ওয়েবপোর্টাল, সফটওয়ার ও তথ্য ভান্ডার পরিবর্তনের বা বাতিলের প্রয়োজন হবে না, সেগুলো অনলাইন সিটিজেন প্রোফাইলের গেটওয়েতে পরিণত হবে বা যুক্ত হবে। সিটিজেন প্রোফাইলের সার্চিং অপশন থেকে সার্চ করে বা লিঙ্ক ব্যবহার করে সকল প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে পারবে এবং সেবা নিতে পারবে। সকল নাগরিক সিটিজেন প্রোফাইলভুক্ত হবে এবং প্রত্যেকে একটি স্থায়ী আইডি ও পাসওয়ার্ড পাবে (পাসওয়ার্ড ইচ্ছামতো সময় সময় পরিবর্তন করে নিতে পারবে), যা ব্যবহার করে নিজের ব্যক্তিগত অপশনে নিজের ব্যক্তিগত অর্জন ও প্রয়োজনীয় তথ্য আপলোড করে সেভ করে রাখতে পারবে এবং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানও একটি করে আইডি ও পাসওয়ার্ড পাবে, যা ব্যবহার করে তাদের প্রদত্ত সেবার তথ্য সেবা গ্রহীতার প্রোফাইলে নির্দিষ্ট অপশনে আপলোড করে দেবে। যেমন- 

১. স্থানীয় সরকারের সিটিজেন প্রোফাইল বিভাগ: একজন শিশু জন্মলাভ করেই প্রথমে একটি জন্ম পরিচয় লাভ করবে, সঙ্গে লাভ করবে বাবা-মা ও তাদের পরিচয়। এ তথ্য নিয়ে স্থানীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে সে লাভ করবে একটি জন্মসনদ, এ সব তথ্য দিয়েই তার নামে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বা পৌরসভা/সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর স্থানীয় সরকারের প্রোফাইল বিভাগের পক্ষে নিজ আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে জাতীয়ভাবে পরিচালিত অনলাইন সিটিজেন প্রোফাইল প্রোগ্রামে শিশুটির নামে একটি অনলাইন প্রোফাইল খুলবে। এটি খোর্লা জন্য অনলাইল সিটিজেন প্রোফাইল পোর্টালে বা ওয়েব পেজে প্রবেশ করে নিবন্ধন অপশনে চাহিত কিছু তথ্য ছক পূরণ করলেই একটি ওটিপি পাবে এবং তা ব্যবহার করে একটি নতুন পারসোনাল পেজ উন্মুক্ত করে শিশুর নাম ও ছবি, পিতা-মাতার নাম ও ছবি, জন্মতারিখ, পরিচয়, অভিভাবকের  মোবাইল নম্বর ও অন্যান্য তথ্য (জন্মগত কোনো শারীরিক সমস্যা বা চিহ্ন থাকলে তাসহ) দিয়ে সেভ করলেই শিশুর জন্য একটি প্রোফাইল পেজ তৈরি হবে। এ সময় শিশুটির অভিভাবক তার মোবাইলে একটি পার্সনাল আইডি ও পাসওয়ার্ড পাবে, তা দিয়ে ব্যক্তি অপশনে শিশুরটির অভিভাবক নিজস্ব তথ্য আপলোড করতে ও সকল তথ্য দেখতে ও ব্যবহার করতে পারবে। শিশুটি যতো বড় হতে থাকবে সে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে ততো নাগরিক সেবা পেতে থাকবে এবং এ সকল সেবার সব তথ্যই তার প্রোফাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বা দপ্তর তাৎক্ষণিক আপলোড করে দেবে। অনলাইন সিটিজেন প্রোফাইল পদ্ধতি চালুর পর জন্মগ্রহণকারী শিশুর জন্য এ পদ্ধতিতে প্রোফাইল চালু করা হবে। কিন্তু চালুর সময়ে প্রত্যেক নাগরিকের স্থায়ী ঠিকানায় তার নিকট থেকে দালিলিক তথ্য নিয়ে উপর্যুক্ত পদ্ধতি অনুসরণ করে প্রত্যেকের নামে প্রোফাইল খোলা হবে। তাদের ইতঃপূর্বেকার বিভিন্ন অর্জনের তথ্য, পেশার তথ্য প্রভৃতি নিজেরা স্থানীয় সরকারের সিটিজেন প্রোফাইল শাখাকে সরবরাহ করবে, নিজেরা নিজস্ব আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে নিজস্ব অপশনে তথ্য আপলোড করবে, তেমনি সেবা প্রদানকারী বিভিন্ন সংস্থাও নিজস্ব অবশন ব্যবহার করে তাদের কাছে থাকা তথ্য ও ডকুমেন্ট আপলোড করবে। ব্যক্তিগত প্রদত্ত তথ্য ও বিভিন্ন দপ্তরের প্রদত্ত তথ্যে গড়মিল হলে স্থানীয় সরকারের প্রোফাইল বিভাগ যাচাই করে যথাযথ তথ্য ব্যতীত ভুল প্রমাণিত তথ্য বা ডকুমেন্ট প্রোফাইল থেকে বাতিল করবে। এভাবে সকলকেই প্রোফাইলভুক্ত হতে হবে। কোনো পরিবার বা পরিবারের কোনো সদস্য নিজ এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় বা নিজ শহর ছেড়ে অন্য শহরে আবাসন স্থানান্তর করতে চাইলে তা সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান বা পৌর/সিটি কাউন্সিলরকে অবহিত করবে এবং ইউপি চেয়ারম্যান বা পৌর/সিটি কাউন্সিলর ইলেকট্রনিক ট্রান্সফার সিস্টেম (ইটিসি) এর মাধ্যমে নতুন বা প্রস্তাবিত আবাসন এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান বা পৌর/সিটি কাউন্সিলরকে অবহিত করবেন এবং তিনি অ্যাপ্রুভ করলে সেখানকার তালিকাভুক্ত হবেন ও আবাসন স্থানান্তরের সুযোগ পাবেন। এভাবে কোনো নাগরিক বা পরিবার আবাসন স্থানান্তর করলে তা সিটিজেন প্রোফাইলের ইটিসির মাধ্যমে তথ্য স্থানান্তর করে সম্পন্ন করবেন। ফলে তিনি বা তার পরিবারের তথ্য বা প্রতিটি পরিবারের অবস্থান সিটিজেন প্রোফাইলের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ অবহিত থাকবে। বিজিএফ বা বিজিডি কার্ড বা বয়স্কভাতা কার্ড বা অনুরূপ ত্রাণ কার্ড এর বিবরণ কার্ড প্রাপ্ত ব্যক্তির প্রোফাইলে যথারীতি আপলোড করবে। কেউ মৃত্যুবরণ করলে বা নিহত হলে সে তথ্য মৃতের প্রোফাইলে আপলোড করে তার পারসোনাল আইডি-পাসওয়ার্ড বাতিল তথা পারসোনাল পেজ লক করে দেবে।

২. স্বাস্থ্য বিভাগ: সিটিজেন প্রোফাইলে স্বাস্থ্য বিভাগের অপশনের নাম থাকবে প্যাসেন্ট প্রোফাইল। স্বাস্থ্য বিভাগ তার নিজস্ব আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে প্যাসেন্ট প্রোফাইলে নির্দিষ্ট রোগীর আইডিতে প্রবেশ করে তাকে দেয়া স্বস্থ্যসেবা, টিকা কার্ড প্রভৃতি তথ্য উক্ত শিশুর প্রোফাইলে আপলোড করে দেবে। পরবর্তীকালে সে আমৃত্যু যে সকল স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান থেকে যে সকল স্বাস্থসেবা পাবে তা ওই সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান নিজ নিজ আইডি দিয়ে অনলাইন সিটিজেন প্রোফাইলে প্রবেশ করে প্যাসেন্ট প্রোফাইলের উক্ত সেবাগ্রহীতার অপশনে সকল ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষার রিপোর্ট ও চিকিৎসা পরামর্শ আপলোড করে দেবে। ফলে পরবর্তী চিকিৎসার সময়ে চিকিৎসক প্রোফাইল থেকে রোগ বা চিকিৎসার হিস্টোরি জানতে পারবে।

৩. শিক্ষা বিভাগ: সিটিজেন প্রোফাইলে শিক্ষা বিভাগের অপশনের নাম থাকবে স্টুডেন্ট প্রোফাইল। একটি শিশু বিদ্যালয়ে ভর্তি হবার পর সেই প্রতিষ্ঠানের স্টুডেন্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠান নিজস্ব আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে শিক্ষার্থীকে সিটিজেন প্রোফাইলের স্টুডেন্ট প্রোফাইলে বা পেজে অন্তর্ভুক্ত করবে। এই সেবাটি যশোর শিক্ষা বোর্ডে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবরে চালু করা হয়েছে। যশোর শিক্ষাবোর্ডের অনলাইন স্টুডেন্ট প্রোফাইল তৈরি মুজিব বর্ষের অন্যতম উদ্ভাবন হিসেবে বিবেচিত। বোর্ডের অন্তর্ভুক্ত প্রতিষ্ঠানে শিক্ষারত সকল স্টুডেন্টদের অতীতের অর্জনসমূহ নিয়ে স্টুডেন্ট আইডি নম্বরের বিপরীতে চালু করা হয়েছে। সিটিজেন প্রোফাইল চালু হলে এসব তথ্য সম্বলিত স্টুডেন্ট প্রোফাইল তাতে যুক্ত হবে। চালুর পর নতুনদেরকে নতুনভাবে আপলোড করা হবে। এ স্টুডেন্ট প্রোফাইল পদ্ধতি অনুযায়ী, স্টুডেন্টের শিক্ষা ও সহশিক্ষা কার্যক্রম, ফলাফল, প্রতিষ্ঠানে বার্ষিক উপস্থিতির সংখ্যা, পরবর্তী ক্লাসে উন্নীত হওয়ার তথ্য প্রতিষ্ঠান আপলোড করবে। নবম শ্রেণিতে নিবন্ধন করার পর নিবন্ধন কার্ড, ফরম পূরণের পর প্রবেশ পত্র, পরীক্ষার ফলাফল, একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট ও সনদ স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রত্যেক স্টুডেন্টের প্রোফাইলে আপলোড হবে, স্টুডেন্ট তা তার আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে দেখতে ও প্রয়োজনে অনলাইন সংযোগে বা প্রিন্ট দিয়ে ব্যবহার করতে পারবে। নিবন্ধন বা পরীক্ষার ফরমপূরণ করতে স্টুডেন্টকে প্রতিষ্ঠানে আসতে হবে না। প্রতিটি স্টুডেন্ট তার প্রোফাইলে, এমনকি মোবাইলে নিবন্ধন বা ফরমপূরনের একটি লিঙ্ক পাবে, তাতে টাচ করলেই একটি পেজ ওপেন হবে। তাতে তার প্রাথমিক তথ্য দেয়া থাকবে। নিবন্ধনের ক্ষেত্রে সে তার পছন্দ মতো ঐচ্ছিক বিষয় ও বিষয় কোড সিলেক্ট করে সাবমিট বাটনে টাচ করবে। এরপর একটি পেমেন্ট অপশন আসবে। পরীক্ষার ফরম পূরণের ক্ষেত্রে লিঙ্কে ওপেন হওয়া পেজে নিবন্ধন নম্বর, বিষয় কোডসহ বিষয়, বোর্ড নির্ধারিত কেন্দ্র ফি ও বোর্ড ফি এবং প্রতিষ্ঠানের বকেয়া বেতন (যদি থাকে) এর পরিমাণ উল্লেখ থাকবে। শিক্ষার্থী তাতে সম্মতি জ্ঞাপনের জন্য অ্যাগ্রি বাটনে টাচ করলে পেমেন্ট অপশন আসবে। নিবন্ধন বা ফরমপূরণের ক্ষেত্রে একইভাবে পেমেন্ট অপশনে টাচ করলে সোনালী ব্যাংকের গেটওয়ের সঙ্গে যুক্ত বিকাশ, রকেট, সোনালী ব্যাংক হিসাব প্রভৃতি আসবে। শিক্ষার্থীর হিসাব খোলা আছে এবং পর্যাপ্ত টাকা আছে এমন যেকোনো একটি বেছে নেবে এবং সে মোতাবেক টাচ করলে পেমেন্ট অপশনের পাসওয়ার্ড চাবে এবং তা দিলেই তার হিসাব থেকে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের হিসাবে প্রাপ্য ফি-এর পরিমাণ জমা হয়ে যাবে। অর্থাৎ বোর্ডের ব্যাংক হিসাবে বোর্ড ফি ও কেন্দ্র ফি এবং প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবে বকেয়া বেতন জমা হয়ে যাবে। এভাবে ঘরে বসে নিবন্ধন ও ফরমপূরণ করতে পারবে শিক্ষার্থীরা। প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ফরমপূরণের সময়ে উন্নয়ন ফিসহ বিভিন্ন অর্থ আদায়ের অভিযোগ থাকে, যার কোনো রশিদ প্রদান করা হয় না। এ অভিযোগের অপব্যবহারও হয়। ঘরে বসে এভাবে ফরমপূরণ করলে সে অভিযোগের বা অন্যায় আদায়ের সুযোগ থাকে না। যশোর শিক্ষা বোর্ড ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে করোনা অতিমারির সময়ে ঘরে বসে ফরম পূরণের এ পদ্ধতিটির সফল উদ্ভাবন করেছে। পরে অন্যান্য বোর্ডও ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফরম পূরণ এ পদ্ধতিতে সফলতার সঙ্গে করেছে। সিটিজেন প্রোফাইল পদ্ধতি চালু হলে উচ্চশিক্ষার ভর্তির আবেদন ফরম পূরনের সময়ে স্টুডেন্ট প্রোফাইল লিঙ্ক ব্যবহার কবলে স্বয়ংক্রিয়াভাবে আবেদন ফরম পূরন হয়ে যাবে। স্টুডেন্টকে একটি একটি করে তথ্য ছক পূরণ করতে হবে না। ফলে ফরম পূরণে ভুল হবার আশঙ্কা থাকবে না। বিসিএস বা অন্য চাকুরির আবেদনও প্রোফাইল লিঙ্ক ব্যবহার করে তথ্য ছক স্বয়ংক্রিয় (অটো ফিলাআপ) পদ্ধতিতে পূরণ হবে। প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের তথ্য ও সনদের কপিও স্ব স্ব প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের প্রোফাইলে অ্যান্ট্রি করবে। স্টুডেন্ট প্রোফাইলে স্টুডেন্টের সকল সনদ পিডিএফ আকারে সংরক্ষিত থাকবে বিধায় সনদের হার্ডকপি বহন করে কোথাও নিতে হবে না, হারানোর ভয়ে কোনো সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে না। অনলাইনে আকাশের ঠিকানায় সংরক্ষিত থাকবে বিধায় সনদ হারানোর কোনো ভয় থাকবে না। (চলবে)

লেখক:  প্রফেসর ড. মোল্লা আমীর হোসেন, সাবেক চেয়ারম্যান, যশোর শিক্ষা বোর্ড

 

কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস - dainik shiksha কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় - dainik shiksha ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব - dainik shiksha একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034520626068115