করোনাকালে শিক্ষার্থীদের অনলাইনে ক্লাস করতে হচ্ছে। কিন্তু নেটওয়ার্কসহ নানান ধরনের অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে অনুন্নত দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি। কোনো কোনো দেশে নেটওয়ার্ক সিগন্যাল পেতে রীতিমতো উঠতে হয় পাহাড়ে। আবার ঘরে চালে ওঠা একেবারেই মামুলি ব্যাপার।
সংবাদ মাধ্যম দ্যা গার্ডিয়ান জানাচ্ছে, ফিলিপাইনের শিক্ষার্থীরা নেওয়ার্ক পেতে এমনই নানান ভোগান্তি পোহান। দেশটির লেগুনা প্রদেশের কয়েকজন শিক্ষার্থীর বরাত দিয়ে সংবাদ মাধ্যমটি জানাচ্ছে, ইন্টারনেট ব্যবহার করতে তারা নিয়মিতই পাহাড়ে ওঠে।
এ অবস্থায় কোনো কোনো শিক্ষার্থী বিরুপ আবহাওয়া থেকে বাঁচতে পাহাড়ের উপর ছাউনি দিয়ে অস্থায়ী ঘরও বানিয়ে নিয়েছে। পড়ার চাপ থাকলে তাদের সে ঘরেই কখনো কখনো রাতে থাকতে হয়।
এটি শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে সম্পূর্ণই আলাদা। রোজমাইন গোনজাগা নামে একজন শিক্ষার্থী দ্যা গার্ডিয়ানকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় খোলার জন্য আমি ব্যাকুল হয়ে ছিলাম। কারণ আমার পুরো জীবনই পাহাড়ে আটকে গেছিল।
১০ বছর বয়সী আরেক শিক্ষার্থী বলেন, যখন থেকে মহামারির কারণে বাসায় থেকে পড়ালেখা করতে হচ্ছে, তখন থেকেই তাকে ইন্টারনেট পেতে নিয়মিত ঘরের চালে উঠতে হয়। স্থানীয় সরকার তাকে ক্লাস করার জন্য একটি ট্যাব দিয়েছে। কিন্তু নেটওয়ার্ক খারাপ হওয়ায় সেটি ঘর থেকে ব্যবহার করা যায় না।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ করোনা আক্রান্তের ঘটনা ঘটেছে ফিলিপাইনে। সে কারণে স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েও আবার সেটি স্থগিত করা হয়েছে। অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ করা বা রেডিও-টেলিভিশনে ক্লাস করা ১৮ কোটি জনসংখ্যার দেশটির শিক্ষার্থীদের কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে। দেশটির ২০ ভাগেরও কম শিক্ষার্থীর বাসায় ভাল ধরনের নেটওয়ার্ক রয়েছে।
নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী এ্যানি সাবিনো বলেন, আমি এখন প্রায়ই খুব দেরি করে ঘুম থেকে উঠি। কারণ স্কুলের পড়া শেষ করে অনেক রাতে ঘুমাতে হয়। রাতে সিগন্যাল কিছুটা ভাল থাকায় রাতে অ্যাসাইনমেন্ট করি।
সব শিক্ষার্থীকে স্থানীয় সরকার স্মার্টফোন বা ট্যাব দিতে পারেনি। আবার সবার পরিবারের পক্ষেও সেসব ডিভাইস কিনে দেয়া সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় অনেক শিক্ষার্থীই কোনো শারীরিক পরিশ্রমের কাজে যুক্ত হয়েছে যাতে সেখান থেকে টাকা রোজগার করে মোবাইল বা ট্যাব কিনতে পারে।
এমনই একজন শিক্ষার্থী দেশটির সান জুয়ান প্রদেশের মার্ক জোসেফ আনদাল। আনদাল জানায়, সে স্মার্টফোন কিনতে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করছে। একই সাথে সে ভালো সিগন্যাল পেতে পাহাড়ের উপরে ঘর বানিয়ে ফেলেছে। পাহাড়ে উঠেও কখনো সিগন্যাল চলে গেলে আনদাল তার প্লাস্টিক টুলটি হাতে নিয়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় চলে যায়। কখনো বৃষ্টি হলে সে এক হাতে মোবাইল ধরে অন্য হাতে বৃষ্টি থেকে বাঁচতে ছাতা ধরে রাখে।
এর চেয়ে করুণ অবস্থাও আছে। লাভলি জো ডে কাস্ট্রো নামে ৫ম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থী দ্যা গার্ডিয়ানকে জানায়, সে বাসায় অনলাইনে ক্লাস করতে পারে না। সেখানে নানান ধরনের মানুষ আসে এবং বাসায় কাজের জন্য শব্দ হয়। এ অবস্থায় সে কবরস্থানে চলে যায়। এবং পুরানো কবরের পাথরের উপরে বসে ক্লাস করে।
তবে সব কিছু ছাড়িয়ে অনেক শিক্ষার্থী স্কুল থেকে ঝরে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। নিয়মিত টিউটর পাওয়ার অভাবে তাদের পড়ালেখা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।