অনশনরত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অপ-প্রচারে লিপ্ত পাঁচ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা! - দৈনিকশিক্ষা

অনশনরত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অপ-প্রচারে লিপ্ত পাঁচ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা!

নিজস্ব প্রতিবেদক |

এমপিওভুক্তির দাবীতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনশনরত শত শত শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অপ-প্রচারে লিপ্ত থাকার অভিযোগ উঠেছে বি সি এস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের পাঁচজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এই পাঁচজনের একজন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে এবং অপর চারজন ঘুষ-দুর্নীতির দূর্গ হিসেবে শিক্ষা প্রশাসনে পরিচিত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরে’ কর্মরত। তারা ২০০৫ খ্রিস্টাব্দে বিএনপি-জামাত শাসনামলে ২৪তম বিসি এস পরীক্ষার মাধ্যমে সরকারি কলেজের প্রভাষক হিসেবে চাকরিতে ঢুকেছেন। আওয়ামী লীগ আমলেও শিক্ষা প্রশাসনের ভালো পদে ‘বিশেষ কৌশলে’ টিকে রয়েছেন তারা। ওই সময়ে বি সি এস পরীক্ষায় হাওয়া ভবনের তালিকা, প্রশ্নফাঁস, টাকার বিনিময়ে ক্যাডারে চাকরি ছিলো নৈমিত্তিক ঘটনা।

এই পাঁচ কর্মকর্তা  প্রচার করছেন অনশরত শিক্ষকদের দাবী মেনে নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী তবু তারা অনশন ভাঙ্গছেন না। এভাবে অনশনরত শিক্ষকরা মন্ত্রীর অনুরোধ অমান্য করছেন। এই পাঁচ কর্মকর্তা দাবী করছেন, অনশনরতদের মধ্যে অনেকেরই রাজনৈতিক পরিচয় খতিয়ে দেখা উচিত। এত প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করতে সরকারের অনেক টাকা  লাগবে যা অপচয়ের শামিল। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী নেই, গ্রামাঞ্চলে অবস্থিত ইত্যাদি ইত্যাদি।  

অনশনরত শিক্ষকরা দৈনিকশিক্ষাকে জানান, মঙ্গলবার বিকেল ও বুধবার সকালে কয়েকদফায় এসেছেন শিক্ষা ক্যাডারের পাঁচ কর্মকর্তা।  তারা নন-এমপিও শিক্ষকদের কাছে দাবী করেছেন, মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করানোর ব্যবস্থা করতেই তাদেরকে পাঠানো হয়েছে।

বুধবার সকাল দশটার দিকে শিক্ষা ক্যাডারের তিনজন কর্মকর্তা অনশনরত শিক্ষকদের অনশন শেষ করে বাড়ী ফিরে যেতে অনুরোধ করেন। কেন এখানে (প্রেসক্লাবের সামনে) বসে রয়েছেন? বার বার একই কথা বলায় অনশনরত শিক্ষকরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের আচরণ ও কথায় তারা বিরক্ত হন। উপস্থিত সাংবাদিকরা জানতে চান তাদের পরিচয়। এরপর দ্রুত শিক্ষা ভবনের দিকে চলে যান ওই কর্মকর্তারা।

দৈনিকশিক্ষার এক প্রশ্নের জবাবে শিক্ষা ক্যাডারের ওই পাঁচজনের একজন কর্মকর্তা বলেন, বেসরকারি শিক্ষকদের একজন প্রবীন নেতাও চেষ্টা করছেন মন্ত্রীর আশ্বাসে শিক্ষকদের বিশ্বাস স্থাপন করাতে। আমাদেরকেও বলা হয়েছে একটু চেষ্টা করতে। তাই একটু কথা বলার চেষ্টা করলাম অনশনরতদের সঙ্গে। বোঝার চেষ্টা করলাম তাদের দাবী যৌক্তিক কি-না।

আপনারা ক্যাডার শিক্ষক, আর অনশনরতরা বেসরকারি নন-এমপিও। তবু আপনাদের কেন এ্যতো চিন্তা? দৈনিকশিক্ষার এমন প্রশ্নের জবাবে  ডিআইএতে কর্মরত একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আসলে মন্ত্রী মহোদয়ের কারণে এত সমালোচনার পরও  ডিআইএতে রয়েছি। এখন এইসব বেসরকারি শিক্ষকরা মন্ত্রীর আশ্বাসে বিশ্বাস স্থাপন করছেন না, এতে আমাদের একটু তো কেমন লাগে।’

পাঁচদিন যাবত পাঁচ হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী অনশন করছেন। এই পাঁচ হাজার  প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি, স্থাপন ও শিক্ষক  নিয়োগে বি সি এস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারাই পালন করেছেন মূখ্য ভূমিকা।

উল্লেখ্য, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার ৯৭ শতাংশ বেসরকারি হলেও এরশাদ জমানার এক সামরিক ফরমান বলে   মাধ্যমিক ও উচচশিক্ষা অধিদপ্তর, শিক্ষাবোর্ডসহ  শিক্ষা প্রশাসনের সর্বত্র বি সি এস শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের দৌরাত্ম। তারা বেসরকারি শিক্ষকদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেন। আবার বেসরকারি স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠায় পরিদর্শকের দায়িত্ব পালন করেন তারা, নিয়োগ বোর্ডে মোটা খাম ছাড়া নিয়োগ চূড়ান্ত করেন না। আবার তারাই বেসরকারি শিক্ষকদের নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন-স্কেলের বিরোধীতা করেন শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা। মাধ্যমিকের জন্য আলাদা অধিদপ্তর স্থাপনের বিরোধীতা করেন শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা। সরকারের কলেজ জাতীয়করণের প্রক্রিয়া থমকে আছে শিক্ষা ক্যাডার সমিতির বিরোধীতায়।

আবার বেসরকারি কলেজ সরকারি হলে ওই কলেজের পদগুলো দখল করেন শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারাই। আবার আত্তীকৃত কলেজ শিক্ষকদের নন-ক্যাডার রাখার দাবীতে লাখ লাখ শিক্ষার্থীকে জিম্মি করেন তারাই।

উল্রেখ্য, সেনা শাসক জিয়াউর রহমান সস্তা জনপ্রিয়তার আশায় বি সি এস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার চালু করেন। কিন্তু পররাষ্ট্র, ট্যাক্স, প্রশাসন ও পুলিশসহ মেধাবীদের পছন্দের ক্যাডারের মতো সুযোগ-সুবিধা পাননা শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা। তাই তারা কলেজে পাঠদানে মনোযোগী না হয়ে অফিসে চাকরি করতে মরিয়া হয়ে থাকেন। বছরের পর বছর এভাবে চলার ফলে সরকারি কলেজগুলোর পড়াশোনা লাটে উঠেছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে ঝুঁকছেন অনেকেই।

মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি - dainik shiksha মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! - dainik shiksha খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ - dainik shiksha এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে - dainik shiksha মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা - dainik shiksha মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! - dainik shiksha মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0074849128723145