বেতন বৈষম্য নিরসনের দাবীতে প্রাথমিকের হাজার হাজার সহকারি শিক্ষক ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তাদের অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। আজ শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) সকাল দশটার দিকে অনশন শুরু হয়। সন্ধ্যায় পাওয়া সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, দাবি পূরণ না হলে অনশনেই থাকবেন শিক্ষকরা। আজ শনিবার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত হাজার হাজার শিক্ষকের অবস্থান লক্ষ্য করা গেছে শহীদ মিনারে। অনেকেই শুয়ে বসে সময় কাটাচ্ছেন এবং দাবি পূরণে বক্তাদের সাথে স্লোগানে অংশ নিচ্ছেন।
প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের নিচের ধাপে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারি শিক্ষকদের বেতন দাবি করছেন তারা। অনশনরত শিক্ষকরা জানিয়েছেন, আগের বেতন স্কেলগুলোতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের এক ধাপ নিচে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকরা বেতন পেতেন। কিন্তু ২০১৫ সালের বেতন কাঠামোতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকদের সঙ্গে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের ব্যবধান তিন ধাপ। এখন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকরা ১৪তম গ্রেডে (মূল বেতন ১০ হাজার ২০০) বেতন পাচ্ছেন। আর প্রধান শিক্ষকরা পাচ্ছেন ১০তম গ্রেডে (মূল বেতন ১৬ হাজার টাকা)। সহকারী শিক্ষকরা এই বৈষম্য নিরসনে প্রধান শিক্ষকদের এক ধাপ নিতে ১১তম গ্রেড (১২ হাজার ৫০০ টাকা মূল বেতন) চান। এর সঙ্গে বাড়ী ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা রয়েছে।
অনশন কর্মসূচিতে সহকারী শিক্ষক সমাজ, সহকারী শিক্ষক সমিতি, সহকারী শিক্ষক ফাউন্ডেশন, সহকারী শিক্ষক সমাজ-২, সরকারি সহকারী শিক্ষক সমিতি, সহকারি শিক্ষক সমাজ-৩, সহকারী শিক্ষক সমিতি-২, সহকারী শিক্ষক ফোরাম, সহকারী শিক্ষক ফাউন্ডেশন ও বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির ব্যানারে শিক্ষকরা অংশ নিয়েছেন। এছাড়া প্রধান শিক্ষক সমিতির চারটি সংগঠন এই কর্মসূচিতে ঐক্য প্রকাশ করেছে।
শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে শিক্ষকরা পাটি, পত্রিকা বিছিয়ে বসে রয়েছেন। পুরুষদের সঙ্গে দূর-দূরান্ত থেকে নারীও এসেছেন আমরণ কর্মসূচিতে। তাদের সঙ্গে রয়েছে কাপড়-চোপড়ের ব্যাগ।
অনশনের ফাঁকে ফাঁকে দেয়া বক্তৃতায় তাদের দাবী না মানলে বার্ষিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ বন্ধ ও বই বিতরণ বন্ধের হুমকি দিচ্ছেন। কাফনের কাপড় পরেও অংশ নিয়েছেন একাধিক শিক্ষক। বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারি শিক্ষক মহাজোটের ব্যানারে পালিত হচ্ছে অনশন কর্মসূচি।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এই অনশন কর্মসূচিতে অংশ নিতে তারা বাস, লঞ্চ, ট্রেনযোগে ঢাকায় এসেছেন। অনেকেই শনিবার রাতে ঢাকায় পৌঁছেছেন।
কয়েকজন শিক্ষক নেতার সাথে কথা বললে তারা জানান, ‘আজ রাতেও শহীদ মিনার প্রাঙ্গন ছেড়ে যাচ্ছি না। দাবি না পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা এখানে অবস্থান করব।’ রোববারও (২৪শে ডিসেম্বর) সেখানে শিক্ষকরা অনশন কর্মসূচি পালন করবেন বলে নেতৃবৃন্দ নিশ্চিত করেন।
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক অনলাইন সমিতির সভাপতি কাজী আবু নাসের আজাদ বলেন, সরকারি প্রাথমিক স্কুলের সহকারি শিক্ষকরা এক দফা দাবিতে আমরণ অনশন। তিনি বলেন, আন্দোলন প্রত্যাহারে গত সপ্তাহে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) আবু হেনা মোস্তফা কামাল তার দপ্তরে সহকারি শিক্ষক প্রতিনিধিদের ডেকেছিলেন। কোনো সমাধান ছাড়াই বৈঠক শেষ হয়েছে। বৈঠকে শিক্ষক প্রতিনিধিরা দাবির বিষয়টি ডিজি স্যারকে জানিয়েছি। তিনি দাবিটি বিবেচনায় নেয়ার আশ্বাস দিয়ে আমাদের আন্দোলন প্রত্যাহারের প্রস্তাব দেন। তবে এতে আমরা সন্তষ্ট নই। এ কারণে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অনশন কর্মসূচিতে আমরা জড়ো হয়েছি।
প্রাথমিক শিক্ষক অধিকার সুরক্ষা ফোরামের আহবায়ক মো. সিদ্দিকুর রহমান সহকারি শিক্ষকদের এক দফা আন্দোলনের সাথে সকল শিক্ষক সংগঠনকে মত পার্থক্য ভুলে সবাইকে যোগ দেয়ার আহ্বান জানান।
একাধিক সহকারি শিক্ষক জানান, মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময় থেকে এখন পর্যন্ত প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে সহকারি শিক্ষকের বেতনের পার্থক্য এক থেকে তিন ধাপ পর্যন্ত রয়েছে। প্রধান শিক্ষকদের প্রস্তাবিত বেতন দশম গ্রেডে দেয়া হলে এ বৈষম্য আরও বেড়ে চার ধাপে উন্নীত হবে। তাই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের নিচের ধাপে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারি শিক্ষকদের বেতন দাবি করছেন তারা।
এ বিষয়ে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, দাবি-দাওয়া নিয়ে সহকারি শিক্ষকদের কয়েকজন প্রতিনিধিকে ডাকা হয়েছিল। তাদেরকে দাবির বিষয়টি বিবেচনার আশ্বাস এবং তারা যাতে ক্লাস ছেড়ে আন্দালনে না যান সেই প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।