অনিয়মে হাবুডুবু খাচ্ছে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি, শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধসহ ১৮ সুপারিশ - দৈনিকশিক্ষা

অনিয়মে হাবুডুবু খাচ্ছে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি, শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধসহ ১৮ সুপারিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক |

অনিয়মে হাবুডুবু খাচ্ছে বেসরকারি এশিয়ান ইউনিভার্সিটি। আইনের অধিকাংশ ধারা লঙ্ঘন করে পরিচালিত হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত উপাচার্য নেই ৯ বছর। প্রতিষ্ঠার পর একদিনের জন্যও নিয়োগ করা হয়নি উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ। এছাড়া প্রধান প্রশাসনিক পদ নিবন্ধকসহ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, হিসাব পরিচালক, প্রক্টর এবং অন্য গুরুত্বপূর্ণ পদেও নেই কর্মকর্তা। প্রতিষ্ঠাতার ছেলে আছেন বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান পদে। একই ব্যক্তি পাশাপাশি আরও তিনটি পদে আছেন। চলছে সনদ বাণিজ্য। এছাড়া শিক্ষার্থীদের অবৈধ স্বাক্ষরে ইস্যু করা হচ্ছে সনদ। এভাবে নামসর্বস্ব প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো নিয়েই বছরের পর বছর চলছে প্রতিষ্ঠানটি।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) এক তদন্তে এসব তথ্য উঠে এসেছে। রোববার ওই তদন্ত প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত অসংখ্য অভিযোগ জমা দিয়েছেন। চাকরি থেকে বহিষ্কার, আর্থিক দুর্নীতি, জঙ্গি অর্থায়ন, বিদেশে অর্থ পাচার, জুম অ্যাপ ব্যবহার করে জঙ্গিদের সঙ্গে মিটিং, সনদ বাণিজ্য এবং বিভিন্ন অনিয়ম সংক্রান্ত বিষয় উল্লেখ করা হয় ওইসব অভিযোগপত্রে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সংস্থাটি উল্লিখিত তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে। ১৯৯৬ সালে বিএনপির আমলের শেষদিকে বিশ্ববিদ্যালয়টি অনুমোদন পায়।

এ প্রসঙ্গে কমিটির প্রধান ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. আবু তাহের বলেন, বিভিন্ন ধরনের আর্থিক, প্রশাসনিক ও একাডেমিক অনিয়ম চলছে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে। ট্রাস্টি সদস্যরা অবৈধভাবে বসে আছেন বিভিন্ন পদে। বছরের পর বছর আর্থিক নিরীক্ষা করা হয় না। এসব বিষয়ে বেশকিছু সুপারিশসহ প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, আইনানুযায়ী আচার্য বা রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত উপাচার্যের স্বাক্ষরে বিশ্ববিদ্যালয় সনদ দেবে ছাত্রছাত্রীদের। কিন্তু গত ৯ বছর উপাচার্য না থাকায় অবৈধ স্বাক্ষরে সনদ দিয়ে যাচ্ছে তারা। ২৪ বছর নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ। বিওটির চেয়ারম্যান জাফর সাদেক একসঙ্গে অভ্যন্তরীণ মান নিশ্চায়ন সেলের (আইকিউএসি) পরিচালক, একটি অনুষদের ডিন এবং একটি বিভাগের পরিচালক। এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বাংলায় অনার্স ও মাস্টার্স প্রোগ্রামে ৫৬৫ শিক্ষার্থীর জন্য আছে মাত্র এক জন শিক্ষক। ইনফরমেশন সায়েন্স অ্যান্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্টে ২৩৭ শিক্ষার্থীর জন্য এক জন, ইসলামিক হিস্ট্রি অ্যান্ড সিভিলাইজেশনে ৫১২ শিক্ষার্থীর বিপরীতে দুজন, বিএড ও এমএড প্রোগ্রামে ৮৬ জনের বিপরীতে এক জন শিক্ষক। এর আগে মন্ত্রণালয় এবং ইউজিসির যৌথ তদন্তে বিশ্ববিদ্যালয়টির বিরুদ্ধে বাংলা বিভাগের সনদ বাণিজ্যের প্রমাণ পাওয়া যায়। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন বিভাগে যথাযথ যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ন্যূনতম প্রয়োজনীয় শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে নেই। এর মধ্যে সাতটি বিভাগের অবস্থা বেশি করুণ। সেগুলো হলো : বিএ (অনার্স) ইন বাংলা, এমএ ইন বাংলা, এমএসএস ইন ইনফরমেশন সায়েন্স অ্যান্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট, বিএ (অনার্স) ইন ইসলামিক হিস্ট্রি অ্যান্ড সিভিলাইজেশন, এমএ ইন ইসলামিক হিস্ট্রি অ্যান্ড সিভিলাইজেশন, বিএড ও এমএড। এসব প্রোগ্রামে আসন্ন স্প্রিং সেমিস্টার থেকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রাখা যেতে পারে।

এতে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধসহ ১৮ দফা সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে : ৩১ জানুয়ারির মধ্যে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ প্যানেল মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে। একই সময়ের মধ্যে ইউজিসির ডিজিটাল লাইব্রেরির সদস্য হওয়ার আবেদন করতে হবে। নিয়মবহির্ভূতভাবে বিওটি চেয়ারম্যান বিশ্ববিদ্যালয়ে সেসব পদে আছেন সেখান থেকে তাকে ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে অব্যাহতি নিতে হবে।

এ প্রসঙ্গে ইউজিসি সদস্য (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়) অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়টির বিরুদ্ধে সনদ বাণিজ্যের অভিযোগ আছে। এছাড়া আরও বেশকিছু অভিযোগ আছে। তদন্তের সুপারিশের আলোকে পদক্ষেপ নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আমরা দেখব নির্দেশিত সময়ের মধ্যে তারা সুপারিশ বাস্তবায়ন করে কিনা। নইলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তদন্ত দলের এক সদস্য বলেন, যেসব বিষয়ের বাজার চাহিদা বেশি, বিভিন্ন ধরনের পেশাজীবীর পদোন্নতির জন্য বিশেষায়িত সনদ লাগে, সেসব বিষয়ে প্রোগ্রাম বেশি প্রতিষ্ঠানটিতে। কিন্তু এসব বিষয়ে পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। তাদের বেতন দেওয়া হয় ১২ থেকে সাড়ে ১২ হাজার টাকা। করোনার দোহাই দিয়ে অনেক শিক্ষক ছাঁটাই করা হয়েছে। এ কারণে কয়েকজন মামলা করেছেন। ওই সদস্য আরও বলেন, গ্র্যাজুয়েটরা এতদিন কী শিখলেন, আর সেই নামেমাত্র শিক্ষার ডিগ্রি দিয়ে সরকারের কাছ থেকে পদোন্নতি ও এমপিওসহ বিভিন্ন ধরনের যে সুবিধা নিয়েছে কিংবা সেটা কতটা বৈধ হয়েছে-সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা জরুরি। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠার পর আজ পর্যন্ত কত সনদ দিয়েছে এবং এর বিপরীতে আয়ের অর্থ কোথায় গেছে বা আছে, কীভাবে ব্যয় হয়েছে-সেসব অনুসন্ধানে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির মাধ্যমে তদন্তের পদক্ষেপ নেওয়া দরকার। এর আগে নানা অভিযোগের কারণে প্রতিষ্ঠানটির সমাবর্তনে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি যাননি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, জুম অ্যাপ দিয়ে ক্লাস নেওয়ার সুবিধার অপব্যবহার করে জঙ্গিদের সঙ্গে মিটিং সংক্রান্ত অভিযোগ আছে ইউজিসির কাছে। সাবেক উপাচার্য আবুল হাসান মো. সাদেক তার নামের আগে এতদিন অধ্যাপক ব্যবহার করতেন। এখন ‘ইমেরিটাস’ উপাধি ব্যবহার করছেন। কোথা থেকে কীভাবে এলো এই উপাধি তা জানেন না কেউ। তিনি বিওটির সাবেক চেয়ারম্যান ও বর্তমান সদস্য। নিজেকে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন।

এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার যোগাযোগ করেও বিশ্ববিদ্যালয়টির বিওটি চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ জাফর সাদেকের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার - dainik shiksha মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034101009368896