বিমানের সিবিএ সভাপতি মশিকুর রহমান পদোন্নতি ফিরিয়ে দিয়েছেন। তাকে গত ৩১ মার্চ পঞ্চম গ্রেড থেকে ষষ্ঠ গ্রেডে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পদোন্নতির চিঠি হাতে পাওয়ার পরই তিনি তা প্রত্যাখ্যান করে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে চিঠি দিয়েছেন।
পদোন্নতি প্রত্যাখ্যানের বিষয়টি অস্বীকার করে মশিকুর রহমান পদোন্নতিতে অনিয়মের অভিযোগে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন বলে জানিয়েছেন। গতকাল বুধবার তিনি বলেন, ‘আমি চিঠিতেই বলেছি কী কারণে পদোন্নতি প্রত্যাখ্যান করেছি। পদোন্নতি প্রত্যাখ্যানের চিঠিতেই বলে দিয়েছি আমি বিমান শ্রমিক লীগের এবং বিমান সিবিএর পদত্যাগী সভাপতি।’
গত ১৬ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত বিক্রয় ও বিপণন বিভাগে সহকারী ব্যবস্থাপক পদে ৮২টি শূন্য পদের বিপরীতে জুনিয়র কমার্শিয়াল অফিসার এবং গ্রাহকসেবা বিভাগে সহকারী ব্যবস্থাপকের ১১৮টি শূন্য পদের বিপরীতে জুনিয়র গ্রাউন্ড সার্ভিস অফিসারকে পদোন্নতির জন্য সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়। ৩১ মার্চ বিক্রয় ও বিপণন বিভাগে সহকারী ব্যবস্থাপক পদে ২৪ এবং গ্রাহকসেবা বিভাগে সহকারী ব্যবস্থাপক পদে ৩১ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়। পদোন্নতি দেওয়া সব পদই ষষ্ঠ গ্রেডের। পদোন্নতিপ্রাপ্তদের মধ্যে মশিকুর রহমান ছাড়াও আরও কয়েকটি শ্রমিক সংগঠনের নেতা রয়েছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন বিমান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. শাজাহান, সহসভাপতি মাহবুবুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম প্রমুখ। মশিকুর রহমান ছাড়া অন্য সিবিএ নেতা ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা পদোন্নতি গ্রহণ করেছেন। পদোন্নতি পাওয়ার পর এসব নেতা সংশ্লিষ্ট সংগঠন থেকে নিজেদের সরিয়েও নিয়েছেন।
মশিকুর রহমান বিমানে জনপ্রিয় শ্রমিক নেতা। তিনি দীর্ঘদিন থেকে এ শ্রমিকদের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। এর আগে তিনি বিমানে দুই দফা পদোন্নতি গ্রহণ করেছেন। সেসব পদোন্নতি গ্রহণের সময় তিনি কোনো আপত্তি উত্থাপন করেননি।
বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘কারও পদোন্নতি ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি সিইওর দেখার বিষয় নয়।’ তিনি বিমানের প্রশাসন শাখার সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। কিন্তু প্রশাসন শাখার কোনো কর্মকর্তা বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
সিবিএ হচ্ছে কম্বাইন্ড বার্গেনিং এজেন্ট বা সম্মিলিত দরকষাকষির ফোরাম। বিভিন্ন বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দরকষাকষি করে সিবিএ। অতীতে বিভিন্ন বিষয়ে বিমান সিবিএ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। দেশের বিভিন্ন সংস্থার সিবিএ নেতারা সাধারণত পদোন্নতি নিতে চান না। পদোন্নতি নিয়ে কর্মকর্তা হয়ে গেলে তাদের পক্ষে সিবিএ করা সম্ভব হয় না। শ্রম আইন অনুযায়ী কর্মকর্তাদের সিবিএ করার কোনো সুযোগ নেই। এ কারণে তারা পদোন্নতি গ্রহণে আপত্তি জানান বলে প্রচলিত ধারণা।
মশিকুর রহমানের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, আপনি ষষ্ঠ গ্রেডে উঠে গেলে সিবিএ করতে পারবেন না। সিবিএ ধারাবাহিকভাবে চালিয়ে নেওয়ার জন্যই কি পদোন্নতি প্রত্যাখ্যান করেছেন? জবাবে মশিকুর রহমান বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ আমার পদোন্নতি প্রত্যাখ্যানের চিঠি মঞ্জুর করলেও আমি আর সিবিএ সভাপতি নেই। অনেকের ধারণা থাকতে পারে যে, আমি মনে হয় সিবিএগিরি করব। এটা লোভনীয় পদ বা শ্রমিক লীগের সভাপতি থাকব এটা যেন না হয়। সেটা আমি পদোন্নতি প্রত্যাখ্যানপত্রে পরিষ্কার করে বলে দিয়েছি। আমি আর ট্রেড ইউনিয়ন করব না। আমি একজন শ্রমিক হিসেবেই থাকব। কর্মচারী আগে যেভাবে ছিলাম। কিন্তু সভাপতি হিসেবে নয়।’
কিন্তু সাধারণ শ্রমিক হিসেবেও তো আপনি আবার অ্যাকটিভিটি শুরু করতে পারেন এ প্রশ্নের জবাবে মশিকুর রহমান বলেন, সেটা তো পরের বিষয়, আমি কী করব না করব। আমি জুনিয়র গ্রাউন্ড অফিসার হিসেবেই থাকব।’
পদোন্নতি না নেওয়ার কোনো সুযোগ আছে কি না জানতে চাইলে মশিকুর রহমান বলেন, ‘যেখানে এতগুলো লোককে ফেল করানো হয়েছে, যা গ্রহণযোগ্য নয়। আমার বিবেক বাধা দিয়েছে। আমার অনেক সিনিয়র লোকজন রয়েছেন, তাদের ফেল করানো হয়েছে। অতীতেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু আগে পদ ছিল না প্রার্থী বেশি ছিল। কিন্তু এবার পদ আছে, প্রার্থীদের ফেল করানো হয়েছে। আমি মনে করি এটা একটা অন্যায় আমি এটা মানব না।’
মশিকুর রহমান পদোন্নতি প্রত্যাহারের চিঠিতে জানান, দুঃখের বিষয় বিক্রয় ও বিপণন বিভাগে এখনো ৫৮টি শূন্য পদ থাকা সত্ত্বেও চারজনকে এবং গ্রাহকসেবা বিভাগে ৮৭টি শূন্য পদ থাকা সত্ত্বেও ২২ জনকে পদোন্নতি প্রদান করা হয়নি, যা মোট প্রার্থীর ৪২ শতাংশ। এটা বাংলাদেশ বিমানের একটা বিরল ঘটনা। তবে অতীতেও অনেক যোগ্য প্রার্থীকে কর্তৃপক্ষ পদোন্নতি দিতে পারেনি। কেননা শূন্য পদের চেয়ে যোগ্য প্রার্থী অনেক বেশি ছিল। বা তাদের অনৈতিক কর্মকা- কর্তৃপক্ষের কাছে অযোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। কিন্তু এবারের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। ২৫ বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন বিমানকর্মীকে মাত্র পাঁচ মিনিটের একটি সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে মূল্যায়ন শেষে ফেল করিয়ে কর্তৃপক্ষ বড় দাগের একটা প্রশ্ন সৃষ্টি করেছেন। সাক্ষাৎকার বোর্ডে গ্রাহকসেবা বিভাগের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কোনো পেশাদার কর্মকর্তা ছিলেন না। এর ফলে প্রার্থীদের শুধু বাহ্যিক অবয়ব, বাচনভঙ্গি এবং ফাইলনির্ভর তথ্য মূল্যায়ন করা হয়েছে। ব্যক্তিগত ফাইলে সাধারণত ভুল-ত্রুটি, নেতিবাচক মন্তব্যই লিপিবদ্ধ থাকে। প্রশংসাসূচক কোনো তথ্য থাকে না। অতিমারী করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে যে ১৩ জন বিমানকর্মী প্রাণ হারিয়েছেন তারা সবাই গ্রাহকসেবা, কার্গো ও প্রকৌশল বিভাগের কর্মী। এতেই প্রমাণ হয় এ বিভাগগুলো ঝুঁকিপূর্ণ। যাদের পদোন্নতিবঞ্চিত করা হয়েছে তাদের প্রায় সবাই করোনা আক্রান্ত হয়েছিল। কিন্তু ফ্রন্টলাইনার এসব বিমানকর্মীকে বঞ্চিত করা হয়েছে।