অনিয়মের আবর্তে বন্দি বগুড়া আর্ট কলেজে চলছে দৈন্যদশা - দৈনিকশিক্ষা

অনিয়মের আবর্তে বন্দি বগুড়া আর্ট কলেজে চলছে দৈন্যদশা

বগুড়া প্রতিনিধি |

রংতুলির আঁচড়ে সব কিছু রাঙিয়ে দেওয়াটাই তাদের কাজ। শিক্ষার্থীদের পদভারে আর্ট কলেজ হয়ে ওঠে সাতরঙা। কিন্তু নানা অনিয়মের আবর্তে বন্দি বগুড়ার আর্ট কলেজে চলছে দৈন্যদশা। কলেজ পরিচালনা কমিটি নিয়ে দ্বিধাবিভক্তি, আদালতের নির্দেশনা না মানা, শিক্ষকদের মধ্যে দলাদলি, টাকার বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের অন্যায় সুযোগ দেওয়াসহ লাখ লাখ টাকা তছরুপের অভিযোগ উঠেছে ওই প্রতিষ্ঠান পরিচালনাকারীদের বিরুদ্ধে।

অভিযোগ রয়েছে, করোনার অনেক আগ থেকেই ক্লাস পরীক্ষা অনিয়মিত ছিল। চুক্তিবদ্ধ অনিয়মিত ছাত্র-ছাত্রীদের টাকার বিনিময়ে ভর্তি ও পরীক্ষার সুযোগ করে দেওয়া হয় এ কলেজে। একইভাবে বেশি নম্বর দিয়ে তাদের কাঙ্ক্ষিত ফল পাইয়ে দিতে গোপন চুক্তি করা হয়। এতে করে নিয়মিত মেধাবী শিক্ষার্থীরা তাদের আশানুরূপ ফল না পেয়ে ক্লাস করার আগ্রহ হারাচ্ছে। দিন দিন উপস্থিতিও কমছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, বেশি টাকা আদায় থেকে শুরু করে নানাভাবে হয়রানির সম্মুখীন হচ্ছে তারা। স্বনামধন্য একটি প্রতিষ্ঠানে সৃজনশীলতা শিখতে এসে উল্টো তাদের শিক্ষাজীবন অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে কলেজটি একেবারেই জীর্ণ। প্রতিষ্ঠানের নেই কোনো সীমানাপ্রাচীর। প্রধান ফটক ভেঙে যাওয়ার পর নতুন করে আর তৈরি করা হয়নি। টিনের জরাজীর্ণ ঘরে বৃষ্টি এলেই পানি পড়ে। আঁকাআঁকির কাজে ব্যবহৃত উপকরণ ও ছবি সংরক্ষণ করা যায় না। কলেজের কোনো মাঠ নেই। নিজস্ব ২০ শতাংশ ফাঁকা জায়গার বেশির ভাগই দেখা যায় গরুর গোবর শুকানোসহ বহিরাগতদের নির্মাণসামগ্রী রাখার কাজে ব্যবহার করতে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে থাকতে না পেরে ছাত্র-ছাত্রীরা একসময় নিজেদের টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে শ্রেণিকক্ষ সংস্কার করেছিল। এখন কলেজের সীমানাপ্রাচীর ও মূল গেট সংস্কার না করায় রাতে ক্যাম্পাসে অবাধে অসামাজিক কার্যকলাপ চলে।

একাধিক শিক্ষক জানায়, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে উম্মে হাবিবা দায়িত্ব নেওয়ার পর কলেজের উন্নয়নকাজে ভাটা পড়ে। প্রতিষ্ঠানটি টিকিয়ে রাখতে সরকারি-বেসরকারি কোনো অনুদান পাওয়ার চেষ্টাও করা হয়নি। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ উম্মে হাবিবা (নন-আর্টিস্ট) এই কলেজেরই সাধারণ ইতিহাস বিষয়ের শিক্ষক। বিশেষায়িত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে দেশের চারুকলা মহাবিদ্যালয়গুলোর জন্য ২০০৩ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রথম জনবল কাঠামো তৈরি করা হয়েছিল। সেখানে প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের একাডেমিক ও প্রশাসনিক প্রধান পদ দুটি চারুকলা বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত রাখা হয়। অথচ সেই বিধি লঙ্ঘন করে ২০১৩ সালের ১ ডিসেম্বর  তুচ্ছ অভিযোগে বগুড়া জেলা প্রশাসন অফিস আদেশে প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ আর্টিস্ট হেলেনা খানম ইরানীকে সাময়িক বরখাস্ত করে। পরবর্তী সময়ে অস্থায়ীভাবে নন-আর্টিস্ট সাধারণ ইতিহাস বিষয়ের শিক্ষক উম্মে হাবিবাকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেন। যদিও বিশেষায়িত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসারে নন-আর্টিস্ট কাউকে অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়ার সুযোগ ছিল না। হেলেনা খানম সেই আদেশ চ্যালেঞ্জ করে আদালতে রিট করেন। পরে ২০১৮ সালের ৪ এপ্রিল হাইকোর্ট অধ্যক্ষ হেলেনা খানম ইরানীকে সাময়িক বরখাস্ত ও উম্মে হাবিবার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ অবৈধ বলে ঘোষণা দেন। পরে এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ উম্মে হাবিবা আদালতের নির্দেশনা চ্যালেঞ্জ করে বগুড়ার প্রথম সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে একটি মামলা করেন। গত ২০ অক্টোবর এই আদালত থেকে আলাদা রায়ে হাইকোর্টের রায়কেই বলবত রাখা হয়।

হাইকোর্টের রায়ের প্রায় দুই বছর হয়ে গেলেও এখনো সেই নির্দেশনা অনুসারে প্রতিষ্ঠাতা বৈধ অধ্যক্ষ হিসেবে হেলেনা খানম তাঁর দায়িত্ব বুঝে পাননি। অবৈধ ঘোষণা হওয়ার পরও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তাঁর চেয়ারটি আঁকড়ে রেখেছেন।

সিনিয়র প্রভাষক আব্দুর রহিম রাবু বলেন, বিভিন্ন সময় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের প্রতি শিক্ষকরা অনাস্থা ও তাঁর বিরুদ্ধে নানা সময়ে করা অভিযোগগুলো কখনো তদন্ত করে দেখা হয়নি। করোনাকালীন সরকারের আর্থিক অনুদান পাওয়া তো দূরের কথা, নিয়ম অনুসারে নন-এমপিও কোনো শিক্ষকের নাম শিক্ষা পরিসংখ্যান ব্যুরোর তালিকায় (ব্যানবেইজ) অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এ কারণে তাঁরা করোনা প্রণোদনা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

বগুড়া আর্ট কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ উম্মে হাবিবা বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা থাকলেও ভারপ্রাপ্ত হিসেবে অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনে কোনো বাধা নেই। আর কলেজে ছাত্র উপস্থিতি ও পরিবেশ ভালো আছে। তাঁর বিপক্ষে একটি দল সব সময়ই সক্রিয় থাকার কারণে তারাই কলেজ সম্পর্কে ভুল তথ্য প্রচার করছে।

প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ - dainik shiksha প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার - dainik shiksha তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার - dainik shiksha স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন - dainik shiksha নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034720897674561