অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন সাবেক ইউএনও মনজুর! - দৈনিকশিক্ষা

অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন সাবেক ইউএনও মনজুর!

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি |

টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার সাবেক নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মনজুর হোসেনের সঙ্গে কলেজ ছাত্রীর অনৈতিক সম্পর্ক ছিল। তার বিরুদ্ধে ওই কলেজছাত্রীর আনা অভিযোগের ‘আংশিক’ সত্যতা মিলেছে। 

টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক কর্তৃক তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজত্ব) সোহানা নাসরিন তদন্ত প্রতিবেদনে এ মন্তব্য করেছেন। 

প্রতিবেদনে তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, মনজুর হোসেনের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি এবং প্রতারণার অভিযোগ সম্পর্কে তার পক্ষে জানা সম্ভব নয়, তবে ওই কলেজছাত্রীর সঙ্গে মনজুর হোসেনের শারীরিক সম্পর্ক ছিল কিনা, তা ডাক্তারি পরীক্ষা/উপযুক্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষার মাধ্যমে অনুসন্ধান করা যেতে পারে।

এর আগে এক কলেজছাত্রী মনজুরের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও প্রতারণার অভিযোগ করেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে। এর পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন শৃঙ্খলা অধিশাখা থেকে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসককে এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। জেলা প্রশাসক ১৪ মার্চ টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সোহানা নাসরিনকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করেন এবং মতামতসহ প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশনা দেন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৭ এপ্রিল টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অভিযোগকারী কলেজছাত্রী, বাসাইলের সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনজুর হোসেন, তার গাড়িচালক বুলবুল মোল্লাসহ ছয়জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। তদন্ত শেষে সোহানা নাসরিন জেলা প্রশাসকের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।  

জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গনি বৃহস্পতিবার (১৯ মে) বিকেলে বলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) কাছ থেকে তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর তার সঙ্গে একমত পোষণ করে ১০ দিন আগে ওই প্রতিবেদন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়েছি।

গত বছর ২০ অক্টোবর দেওয়া কলেজছাত্রীর লিখিত অভিযোগে জানা যায়, মো. মনজুর হোসেন ২০২১ সালে টাঙ্গাইলের বাসাইলে ইউএনও থাকাকালে তার সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচয় হয়। একপর্যায়ে মো. মনজুর হোসেন ভিকটিমকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে নিজের সরকারি বাসভবনে নিয়ে যান এবং বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে জোরপূর্বক শারীরিক সম্পর্ক করেন। এদিকে ওই ছাত্রীর বাবা-মা অসুস্থ থাকায় পারিবারিকভাবে তার অন্যত্র বিয়ে ঠিক হয়। বিষয়টি মনজুর হোসেনকে জানান তিনি। তখন বিয়ের আশ্বাস দিয়ে তাকে বাড়ি থেকে বের করে আনেন মনজুর হোসেন। পরে তিনি টাঙ্গাইল কুমুদিনী কলেজ এলাকায় পাওয়ার হাউজের পেছনে নিজের সব তথ্য গোপন রেখে, মিথ্যা পরিচয়ে একটি বাসা ভাড়া নেন। সেখানে তারা দুইমাস সংসারও করেন। একপর্যায়ে ভিকটিম বিয়ে ও সামাজিকভাবে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য ইউএনওকে চাপ দেন। তখন তিনি ভারতে যাওয়ার পর বিয়ে করবেন বলে তাকে আশ্বাস দেন।

এরপর তারা মেডিক্যাল সার্টিফিকেট দিয়ে জোবায়েত হোসেন নামে ইউএনও’র পরিচিত এক ব্যক্তির মাধ্যমে ভিকটিমের ভিসা করান। এর কিছুদিন পর গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর রাত ১০টায় তারা এসিল্যান্ডের সরকারি গাড়িতে জোবায়েত হোসেন, গাড়ির ড্রাইভার বুলবুল হোসেন ও দুই আনসারসহ বেনাপোলের উদ্দেশে রওনা হন এবং পথে যশোর সার্কিট হাউজে যাত্রাবিরতি করেন। সেখান থেকে বেনাপোল চেকপোস্ট পার হয়ে চিকিৎসার জন্য কলকাতা এয়ারপোর্ট হয়ে হায়দরাবাদে যান। সেখানে হাসপাতালের কাছেই একটি বাসা নেন এবং দু’জনই চিকিৎসা নেন। সেখানে ভিকটিম ইউএনওর ব্যাগ থেকে পাসপোর্ট বের করে জানতে পারেন তিনি বিবাহিত। পরে ইউএনও স্বীকার করেন যে তার দুই সন্তানও আছে। বিষয়টি কেন গোপন করা হয়েছে ইউএনওর কাছে তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি বাংলাদেশ নয়, ভারত। পরে হাসপাতাল থেকে হোটেল এলে জোবায়েত জোর করে ভিকটিমের মোবাইল ছিনিয়ে নেন এবং মনজুরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ভিডিও এবং মেসেজ চ্যাটিংয়ের সব আলামত মুছে দেন। এরপর মনজুর হোসেন সম্পর্কের বিষয়টি কাউকে জানাতে নিষেধ করেন এবং জানালে তাকে মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি দেন। ভারতে ১২ দিন অবস্থানের পর তারা ১২ অক্টোবর বাংলাদেশে ফেরত আসেন। ভারত থেকে ফেরার পর ভিকটিম নিজের বাড়ি ফিরে যান।
পরে ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে দু’জনে দেখা করেন। তখন ফের  স্বামী-স্ত্রী হিসেবে সংসার করার কথা বলেন ইউএনও। কিন্তু দীর্ঘদিন পার হওয়ার পরও মনজুর হোসেন তাকে স্ত্রীর মর্যাদা দেননি। এ অবস্থায় ভিকটিম জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে মনজুর হোসেনের নামে যৌন হয়রানি ও প্রতারণার অভিযোগ করেন।

প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত বছর নভেম্বরে ইউএনও মো. মনজুর হোসেনকে বাসাইল থেকে ঢাকায় বদলি করা হয়। পরে এ বছর ৪ মার্চ কিশোরগঞ্জের ইউএনও হিসেবে তাকে পদায়ন করা হয়েছিল। কলেজছাত্রীর অভিযোগের বিষয়টি গণমাধ্যমে আসার পর তাকে সেখান থেকে গত ৯ এপ্রিল প্রত্যাহার করা হয়।

অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0039029121398926