আমি একজন অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে একটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছি। আজ আমি কিছু কথা বলতে চাই। যারা এই পদে কর্মরত আছি আমরা অনেক অবহেলিত ও বৈষম্যের শিকার। এখন আমাদের পদ ও পদবি নিয়ে কথা বলবো।
চাকরিতে যোগদানের সময় কর্মকর্তারা বলতেন, একজন অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর হচ্ছে একটি প্রতিষ্ঠানের প্রাণ। আসলে এখন সেটা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি। একজন অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর হচ্ছেন একটা অফিসের কামলা। কথাটা শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই সত্যি কথা। সেই চাকরির নিয়োগ থেকে শুরু করে এখনো অবধি বৈষম্যের চাকায় পিষ্ট হচ্ছি।
আমাদের দুইটা পদবি নিয়ে কাজ করতে হয়। ১.অফিস সহকারী, ২. কম্পিউটার অপারেটর। দেশে কম্পিউটার চালু হবার আগে এই পদটির নাম ছিল অফিস সহকারী বা নিম্ন মান সহকারী। কিন্তু কম্পিউটারের ব্যবহার শুরু হবার পরে এই পদটির সাথে আর একটি পদ শুভংকরের ফাঁকির মতো যুক্ত করে দেয়া হয়েছে।
এখন আসি এই পদের কাজের কথায়। একজন অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর কাজের কোনো অন্ত নেই। অন্য যে কোনো ধরনের পদের চাকরিজীবীদের কাজের একটা নির্দিষ্ট সীমা থাকে। কিন্তু আমাদের তা নেই। প্রতিষ্ঠানের সব গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে হয়। যেমন - কম্পিউটার কম্পোজ, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রস্তুত করা, ছাত্রছাত্রীদের রেজাল্ট শিট তৈরি করা, মাসের শেষে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন শিট তৈরি করা, ইমেইল চেক করা, সভা আহ্বানের জন্য নোটিশ করা, ছাত্র /ছাত্রীদের রেজিস্ট্রেশনকরণ ও আইএমএস এর কাজ ইত্যাদি। এমনকি আমাদের নিয়মিত ক্লাসও নিতে হয়। কখন স্কুল ছুটি আর কখন খোলা তা আমাদের দেখলে কেউ বুঝতেই পারবে না। আমরা ও তো মানুষ। আমরা রোবট নই। এত কাজের পরেও কাউকে তুষ্ট করা যায় না।
এখন আসি ঝুঁকির বৈষম্যের বেলায়। বর্তমান এই করোনা মহামারির মধ্যেও আমাদেরকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিয়মিত প্রতিষ্ঠানে যেতে হয়। অফিসিয়াল কাজে বিভিন্ন যায়গায় ঘুরাফেরা করতে হয়। অথচ আমাদের কোনো ধরনের ঝুঁকি ভাতা নেই। আমরাও তো বাঙ্গালি। আমরাও বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখি। তাহলে কেন আমাদের এই বৈষম্যের নিরসন হবে না?
আমরা যারা বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে আছি আমরা হচ্ছি সরকারের দেশ ডিজিটালাইজেশন করবার অন্যতম মূল হাতিয়ার। দেশকে বহু দূর নিয়ে যাব। কিন্তু, আমাদের দিকে কারো এতটুকু নজর নেই। কয় টাকা বেতন আমাদের? সেটি আপনাদের না হয় না-ই বললাম। সত্যি আমরা চরম বৈষম্যের শিকার। আমাদের বৈষম্যের দ্রুত অবসান চাই।
লেখক : মো. আব্দুস সালাম, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর, বিজরুল দ্বি মুখী উচ্চ বিদ্যালয়, বগুড়া।
[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন।]