মুন্সিগঞ্জে ‘ধর্ম অবমাননার’ অভিযোগে গ্রেফতার স্কুলশিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলকে অবলিম্বে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। সমিতির নেতারা বলেছেন, রাষ্ট্রের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করে ঘোলা জলে মাছ শিকারের জন্য সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে একটি মহল অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। হৃদয় মণ্ডলের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনা এরই অংশ।
আজ শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে এসব কথা বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া।
এদিকে একই দাবি জানিয়েছেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী) ও বিজ্ঞান চর্চা কেন্দ্রের নেতারা। এক যৌথ সমাবেশে তাঁরা মুন্সিগঞ্জে ‘ধর্ম অবমাননার’ অভিযোগে গ্রেফতার স্কুলশিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের মুক্তি দাবি করেন।
মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার বিনোদপুর রাম কুমার উচ্চবিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও গণিতের শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের বিরুদ্ধে ইসলাম ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে গত ২২ মার্চ মামলা হলে ওই দিনই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। ২৩ মার্চ ও ৪ এপ্রিল আদালতে হৃদয় মণ্ডলের জামিন চাওয়া হলেও আদালত তাঁর জামিন নামঞ্জুর করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘পরিকল্পিতভাবে ধর্ম অবমাননার দায়ে ফাঁসিয়ে মুন্সিগঞ্জ সদরের বিনোদপুর রাম কুমার উচ্চবিদ্যালয়ের বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলকে গ্রেফতারের খবরে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। শিক্ষক সমিতি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে৷ একই সঙ্গে ভুক্তভোগী শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের অবিলম্বে মুক্তি দাবি করছে। হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল ২১ বছর ধরে ওই বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। এমন প্রবীণ একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর মাধ্যমে মামলা করানো হয়েছে, যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে প্রতীয়মান হয়। এ ছাড়া তড়িঘড়ি করে জামিন–অযোগ্য ধারায় মামলা করাও রহস্যজনক। হৃদয় মণ্ডলের জামিনের শুনানিকালে এখন জামিন দিলে জীবনের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে বাদীপক্ষের আইনজীবী যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটি উদ্বেগজনক। যেকোনো নাগরিকের নিরাপত্তার দায়িত্ব রাষ্ট্রের।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, শিক্ষকের শিক্ষাদানের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে। এ ধরনের অপতৎপরতা সমূলে উৎপাটন করা না গেলে যেকোনো শিক্ষকের পক্ষে স্বাধীনভাবে শ্রেণিশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়বে। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে খুঁজে বের করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানায় সমিতি।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট
এই শিক্ষকের মুক্তির দাবিতে বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ছাত্র ফ্রন্ট (মার্ক্সবাদী) ও বিজ্ঞান চর্চা কেন্দ্রের যৌথ সমাবেশ হয়।
সমাবেশে ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাশেদ শাহরিয়ার বলেন, হৃদয় মণ্ডলের সঙ্গে ঘটনাটি যেভাবে ঘটেছে, তাতে একটা পরিকল্পনার ছাপ পাওয়া যায়। রাষ্ট্রের দায়িত্ব ছিল এই শিক্ষককে নিরাপত্তা দেওয়ার। তা না করে রাষ্ট্র তাঁকে কারাগারে বন্দী করেছে এবং জামিন দেয়নি। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন এলাকায় এমন ঘটনা একের পর এক ঘটছে।
রাশেদ শাহরিয়ার আরও বলেন, এখন দেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে টিসিবির ট্রাকে মানুষ লাইন ধরছে। এমন হাহাকার পরিস্থিতিতে মুন্সিগঞ্জ, নওগাঁসহ নানা স্থানে বিভিন্ন ঘটনা ঘটিয়ে সেগুলোকে জনগণের দুরবস্থা ধামাচাপা দেওয়ার কাজে ব্যবহার করছে বর্তমান সরকার।
ছাত্র ফ্রন্টের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিজ্ঞান চর্চা কেন্দ্রের সংগঠক আরাফাত সাদ বলেন, দেশে ধর্মীয় মৌলবাদ ও কুসংস্কার দিন দিন বাড়ছে। বর্তমান সরকার একদিকে হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছে, অন্যদিকে নিজেদের মৌলবাদবিরোধী বলে দাবি করছে। বাংলাদেশের ৫০ বছরে কোনো সরকার দেশে বিজ্ঞানভিত্তিক চিন্তার প্রসার না ঘটিয়ে মানুষকে মৌলবাদ ও কুসংস্কারের দিকেই ঠেলে দিয়েছে।