যথাযথ কাগজপত্র ছাড়াই আবেদনের তিনমাসের মধ্যে কল্যাণট্রাস্টের টাকা পাওয়া নিয়ে দৈনিক শিক্ষায় প্রকাশিত প্রতিবেদনটি খতিয়ে দেখছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত বছর ৬ আগস্ট প্রতিবেদনটি প্রকাশ হয়। পদাধিকার বলে অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণট্রাস্টের সভাপতি পদে রয়েছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো: মাহবুব হোসেন। যথাযথ কাগজ ছাড়া সেলিমকে কল্যাণট্রাস্ট থেকে টাকা দিলেও অবসর সুবিধা বোর্ড টাকা দেয়নি এখনও।
এক প্রশ্নের জবাবে অবসর সুবিধা বোর্ডের সদস্য-সচিব অধ্যক্ষ শরীফ সাদী সোমবার দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, ‘ টাকার জন্য আবেদন করতে অন্যসব শিক্ষকরা যেসব কাগজ জমা দেন সেইসব কাগজ সেলিম ভূইয়ার নেই। অনিয়ম করে টাকা দিতে পারবো না। অন্যসব শিক্ষকদের জন্য যে নিয়ম সেলিম ভুইয়া তার বাইরে নন।’
তিনি বলেন, ‘প্রথম সেলিম ভুইয়ার কোনো কাগজই নেই, দ্বিতীয়ত: কাগজ জোগাড় করলেও তাকে সিরিয়াল মানতে হবে, মানে অন্যশিক্ষকদের মতোই অপেক্ষা করতে হবে।’
উল্লেখ্য, বিএনপি-জামাত ও তত্তাবধায়ক সরকারের আমলে অবসর সুবিধাবোর্ড ও কল্যাণট্রাস্টের সদস্য-সচিব ছিলেন সেলিম ভুইয়া ও চৌধুরী মুগিছ উদ্দিন মাহমুদ। তখন শিক্ষকদের জমানো কোটি কোটি টাকা তছরুপ করেছেন। শিক্ষকদের কষ্টের টাকা সরকারি ব্যাংক থেকে তুলে নিয়ে বেসরকারি ব্যাংকে জমা রেখে সুদের টাকা নিজেদের পকেটস্থ করেছেন। হঠাৎ দৈনিক পত্রিকার মালিক হয়েছেন, রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা খুলেছেন। ক্ষমতায় থাকাকালে সেলিম ও মুগিছের এসব কুকীর্তি নিয়ে ইংরেজি দৈনিক নিউ এইজের সিনিয়র সাংবাদিক সিদ্দিকুর রহমান খান (বর্তমানে দৈনিক শিক্ষার সম্পাদক) অসংখ্য প্রতিবেদন লিখেছেন। ২০০৪ খেকে ২০১০ পর্যন্ত ইংরেজি দৈনিক নিউ এইজে সেলিম ভুইয়ার নানা অপকর্ম নিয়ে কয়েকডজন প্রতিবেদন লিখেছেন সিদ্দিকুর রহমান খান। অবসর ও কল্যাণের সদস্য-সচিব থাকাকালে কয়েকজন নামধারী সাংবাদিককে কিছু অবৈধ সুবিধা দিয়েছেন তারা। পরবর্তীকালে যারা সদস্য-সচিব হয়েছেন সেইসব সাংবাদিকরা তাদেরও সাথে ছিলেন ও আছেন। সেই ধারা এখনও অব্যাহত রয়েছে। ফলে অধিকাংশ পত্রিকা ও টেলিভিশনে অবসর-কল্যাণ নিয়ে খুব একটা প্রতিবেদন হয় না।
অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণট্রাস্টে সেলিম ভুইয়া তার কয়েকজন আত্মীয়কে চাকরি দিয়েছেন। তারা ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে নতুন সরকারের নতুন সরকারের দেয়া নতুন কমিটির সাথে মিলেমিলে আছেন! নানা অপকর্মে তারা খুবই অভিজ্ঞ!
তিন বছর আগে অবসরে যাওয়ার তিনমাসের মধ্যে কোটিপতি জমি ব্যবসায়ী ও অধ্যক্ষ মুগিছ মাহমুদের বাসায় গিয়ে চেক তুলে দেয়া হয়েছে। সেই রিপোর্টও শুধু দৈনিক শিক্ষায় প্রকাশিত হয়েছে।
আবেদনের তিন মাসের মধ্যেই কল্যাণট্রাস্টের টাকা পেয়েছেন বিএনপি নেতা অধ্যক্ষ (বরখাস্ত) মো. সেলিম ভুইয়া। তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক। তিনি অবসরে গিয়ে কল্যাণট্রাস্ট ও অবসর সুবিধার টাকা চেয়ে আবেদন করেন। আবেদনের সময় তিনি যথাযথ কাগজপত্র জমা দিতে পারেননি। কিছু ভুয়া ও অস্পষ্ট কাগজ জমা দিয়েও আবেদনের তিন মাসের মধ্যে তিনি কল্যাণট্রাস্টের টাকা পেয়েছেন।
অধ্যক্ষ হিসেবে সেলিম ভুইয়ার নিয়োগ ও এমপিওভুক্তি অবৈধ। তত্তাবধায়ক সরকারের আমলে তদন্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। দৈনিক শিক্ষার হাতে সব কাগজ রয়েছে। তিনি বরখাস্ত ছিলেন। নিজ কলেজের ৫০ কোটি টাকা ব্যক্তিগত মোটর-পার্টস ব্যবসার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে রেখেছেন। অবসর-কল্যাণের টাকার জন্য করা আবেদনে তাই বলতে গেছে সব কাগজই ভুয়া।
আরো পড়ুন: