ক্যাডার সার্ভিসে যোগ দেয়া শিক্ষানবিশদের বিভাগীয় পরীক্ষার সিলেবাস অভিন্ন করা হচ্ছে। এ বিষয়ে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে নথি চালাচালির পর অবশেষে তা অনুমোদনের জন্য তৃতীয় দফায় আজ প্রশাসনিক উন্নয়নসংক্রান্ত সচিব কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে চাকরিতে যোগ দেয়ার পর ৪ বছরের মধ্যে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) শিক্ষানবিশ ক্যাডার কর্মকর্তাদের বিভাগীয় পরীক্ষা নিয়ে থাকে। এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে চাকরি স্থায়ী বা স্থায়ী হিসাবে গণ্য হয়। যে কারণে ক্যাডার কর্মকর্তাদের বিভাগীয় পরীক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সূত্র জানায়, সচিব কমিটি প্রস্তাবের পক্ষে মত দিলে সব ক্যাডারের শিক্ষানবিশ কর্মকর্তাদের জন্য ১ম ও ২য় পত্রের সিলেবাস হবে অভিন্ন। এছাড়া ৩য় পত্রের পরীক্ষা হবে সংশ্লিষ্ট ক্যাডার সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে। প্রথম পত্রে আইন, বিধি ও পদ্ধতি (পুস্তক ব্যতীত) বিষয়ে সব ক্যাডারের জন্য অভিন্ন প্রশ্ন করা হবে। দ্বিতীয় পত্র হিসাব (পুস্তকসহ) বিষয়ে সব ক্যাডারের জন্য অভিন্ন প্রশ্ন থাকবে। তবে তৃতীয় পত্রে পরীক্ষা হবে সংশ্লিষ্ট ক্যাডারের কাজকর্ম বিষয়াদি (পুস্তক ব্যতীত) নিয়ে। এছাড়া বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডার কর্মকর্তাদের ৩য় পত্রে (অতিরিক্ত পুস্তকসহ) ১০০ নম্বরের পরীক্ষা দিতে হবে।
পরীক্ষার জন্য প্রতিটি প্রশ্নপত্রের পূর্ণমান হবে ১০০ নম্বর এবং উত্তর লেখার জন্য সময় দেয়া হবে ৩ ঘণ্টা। প্রত্যেক পত্রের পাশ নম্বর হবে ৬০। যারা পরীক্ষায় পাশ করবেন তাদের পরিচিতিসহ নাম গেজেট আকারে প্রকাশ করবে জাতীয় সিভিল সার্ভিস কমিশন (পিএসসি)। প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রের প্রশ্ন কমিশন কর্তৃক মনোনীত কর্মকর্তারা প্রস্তুত করবেন। তৃতীয়পত্রের প্রশ্ন প্রস্তুত করবেন পিএসসির চাহিদার ভিত্তিতে ক্যাডার নিয়ন্ত্রণকারী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কর্তৃক মনোনীত কর্মকর্তারা।
কোনো শিক্ষানবিশ বিভাগীয় পরীক্ষায় (সব বা কোনো নির্দিষ্ট পত্রে) অকৃতকার্য হলে তাকে পাশ করার জন্য প্রয়োজনে একাধিকবার পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ দেয়া হবে। বিধিমালায় বাতিল ও হেফাজতকরণ সংক্রান্ত উপবিধি ৯-এ বলা হয়েছে, নতুন এ বিধি কার্যকর হওয়ার পর এর আগে ক্যাডার কর্মকর্তাদের বিভাগীয় পরীক্ষার বিষয়ে জারিকৃত বিধিসমূহ বাতিল বলে গণ্য হবে।
এ বিধিতে বিভাগীয় পরীক্ষার সময়সূচির উপবিধি-৪ এ বলা হয়েছে, প্রতি বছর দুবার সম্ভব হলে জুন ও ডিসেম্বর মাসে বিভাগীয় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। প্রয়োজনে কমিশন পরীক্ষার সময়সূচি ও আনুষঙ্গিক তথ্যাদি সম্পর্কে সরকারকে অবহিত করবে। কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। তবে যদি কোনো মহামারি বা দৈব-দুর্বিপাক অথবা বিশেষ পরিস্থিতির কারণে উল্লিখিত সময়ে পরীক্ষা গ্রহণ করা সম্ভব না হয়, সেক্ষেত্রে কমিশন সুবিধাজনক সময়ে পরীক্ষা গ্রহণ করতে পারবে।
অভিন্ন প্রশ্নপত্রে সব ক্যাডারের বিভাগীয় পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে পিএসসি থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রথম প্রস্তাব পাঠানো হয় ২০০৫ সালের ৪ অক্টোবর। সেখানে মূল বক্তব্য হিসাবে বলা হয়, ক্যাডার সার্ভিসের শিক্ষানবিশদের বিভাগীয় পরীক্ষার বিধিমালা এবং সিলেবাস বিভিন্ন ক্যাডারের জন্য বিভিন্ন ধরনের হওয়ায় পরীক্ষা গ্রহণ ও ফলাফল প্রকাশে পিএসসিকে নানা জটিলতা ফেস করতে হয়। এ কারণে অভিন্ন সিলেবাসে পরীক্ষা নেয়ার প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয় ২০০৫ সালের ৪ অক্টোবর। এরপর ৩ বছর ধরে এই প্রস্তাব পর্যালোচনা করে বিধি প্রণয়নের জন্য ২০০৮ সালে এসে উপকমিটি গঠন করে মন্ত্রণালয়। ২০০৯ সালের ১৬ নভেম্বর এ সংক্রান্ত প্রস্তাবিত বিধি প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটিতে উপস্থাপন করা হয়। এরপর সচিব কমিটি ২০১০ সালের ১১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত এক সভায় বেশ কিছু সংশোধনী দিয়ে নথি ফেরত দেয়। সে অনুযায়ী পিএসসি থেকে খসড়া সংশোধন হয়ে আসার পর আইন মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হয় ২০১০ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর। আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ ১ম ও ২য় পত্রের সিলেবাস ২০১৬ সালের ১৫ জুন ভেটিং করে। তৃতীয় পত্রের বিবরণের স্থান শূন্য রেখে ক্যাডারভিত্তিক পৃথকভাবে অন্তর্ভুক্ত করতে যথাযথ তথ্যসহ খসড়া সিলেবাস চূড়ান্ত করার পরামর্শ দেয়। এরপর এ বিষয়ে ২০১৮ সালের ২০ ডিসেম্বর নিয়োগবিধি পরীক্ষণসংক্রান্ত উপকমিটির বৈঠক বসে। সর্বশেষ গত বছর ৮ সেপ্টেম্বর উপকমিটি উল্লিখিত বিধির খসড়া চূড়ান্ত করে। এভাবে চিঠি চালাচালি আর পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে পিএসসির এ বিধি সংশোধন করতে ঘাটে ঘাটে ১৫ বছর সময় পার হয়েছে, যা সংশ্লিষ্টদের অনেককে হতবাক করেছে।