অভিযুক্ত সুলতানই রাবির উপ-উপাচার্য, ছাত্র-শিক্ষক-জনপ্রতিনিধিদের ক্ষোভ - দৈনিকশিক্ষা

অভিযুক্ত সুলতানই রাবির উপ-উপাচার্য, ছাত্র-শিক্ষক-জনপ্রতিনিধিদের ক্ষোভ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে উপ-উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন 'বিতর্কিত ও দুর্নীতিতে অভিযুক্ত' অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম টিপু। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের সাবেক সদস্য। তার এই নিয়োগ নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্রলীগের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধি। তারা বলছেন, শুধু দুর্নীতিতে অভিযুক্ত হওয়া আর বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা নয়, অধ্যাপক সুলতান স্বাধীনতাবিরোধী পরিবারের সন্তান।

মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মোঃ আবদুল হামিদের অনুমোদনক্রমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সরকারি সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখার উপসচিব নূর-ই-আলম স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে অধ্যাপক সুলতানকে উপ-উপাচার্য হিসেবে নিয়োগের তথ্য জানানো হয়। তার নিয়োগ ১৭ জুলাই থেকে কার্যকর হবে।

ঘটনা ২০১৯ সালের। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অর্থায়নে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক নির্মাণের দায়িত্ব পেয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবমাননাসহ ৯০০ কেজি তামা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে অধ্যাপক সুলতানের বিরুদ্ধে। এরপর তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটি তদন্তে তামা আত্মসাতের প্রমাণ পায় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করে। স্মৃতিফলকে এক হাজার ৪০০ কেজি তামা ব্যবহার করার কথা থাকলেও ব্যবহার করা হয় মাত্র ৪৯২ কেজি।

এই স্মৃতিফলক নির্মাণকাজের জন্য বরাদ্দ ৭৬ লাখ ৪৮ হাজার ৪১৫ টাকা কাজ শুরুর আগেই তুলে নেওয়া হয় বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। অধ্যাপক সুলতান সে সময় তদন্ত কমিটিকে খরচের ভাউচার দেখাতে পারেননি। স্মৃতিফলকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি নিচে স্থাপন করার কারণে তার বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুকে অবমাননার অভিযোগ আনা হয়। সে সময় ছাত্রলীগ ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাদের আন্দোলনের মুখে স্মৃতিফলক নির্মাণকাজ বন্ধ রাখা হয়। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অধ্যাপক সুলতানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হলেও সেই পরামর্শ আর বাস্তবায়ন করেননি তৎকালীন উপাচার্য।

এ ছাড়া একই বছর উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়ার একটি কল রেকর্ড ফাঁস হলে এর বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন বেশ কয়েকজন শিক্ষক। তারা তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক সোবহান প্রশাসনের সময়ের নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে আন্দোলনে নামেন। গঠন করেন 'দুর্নীতিবিরোধী শিক্ষক সমাজ' নামে আন্দোলন মঞ্চ। এর আহ্বায়ক হন অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম টিপু। নিয়মিত আন্দোলনের পাশাপাশি তিনি তৎকালীন উপাচার্যের অনিয়ম তদন্তে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে নিয়মিত অভিযোগ দিয়ে আলোচনায় আসেন।

অধ্যাপক সুলতানের বড় ভাই অধ্যাপক সোলায়মান আলী সরকার। তার সম্পর্কে জানা যায়, দর্শন বিভাগের এই অধ্যাপক ১৯৭১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ছিলেন। অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধকালীন তিনি রাবির আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি দেখাশোনা করতেন। তিনি তৎকালীন উপাচার্য ও পাকিস্তানি বাহিনীর দোসর হিসেবে পরিচিত অধ্যাপক এমএ বারীর আস্থাভাজন ছিলেন। সেজন্য উপাচার্য অধ্যাপক সোলায়মান আলীকে প্রক্টরের দায়িত্ব দেন। অধ্যাপক এমএ বারী জিয়াউর রহমান সরকারের সময় পুনরায় উপাচার্য নিয়োগ পেলে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও মুক্তিযোদ্ধাদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

এ বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক ও নাট্যকার মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মলয় ভৌমিক বলেন, 'মুক্তিযুদ্ধের সময় তৎকালীন উপাচার্য সরাসরি পাকিস্তানের দালালি করেছে। তার ইন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করেছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। কতজনকে সে সময় হত্যা করেছে তার তালিকা আমরা এখনও পাইনি। সেই পাকিস্তানি দালাল উপাচার্যের সময়ে প্রক্টর ছিলেন সোলায়মান আলী সরকার। এটা স্পষ্ট, তিনি ওই উপাচার্যের আদর্শে আদর্শিত না হলে এত বড় পদে নিয়োগ পেতেন না। তার ভাই অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম টিপু।' তিনি আরও বলেন, 'আমার অভিযোগ কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়। কিন্তু এমন আদর্শের কেউ দায়িত্ব পাক এটা কাম্য নয়। মুক্তিযুদ্ধের শক্তির সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় এমন আদর্শের কেউ নিয়োগ পাওয়াটা একজন মুক্তিযোদ্ধার জন্য খুবই কষ্টের।'

রাবির অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ও প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ সনৎকুমার সাহা বলেন, 'বয়স হয়ে গেছে, মুক্তিযুদ্ধকালীন অনেক স্মৃতিই মনে করতে পারি না। আমার মতে, ক্লিন ইমেজের ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া উচিত।'

রাকসুর সাবেক ভিপি ও রাজশাহী-২ আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, 'অধ্যাপক টিপুর পারিবারিক ব্যাকগ্রাউন্ড মুক্তিযুদ্ধের আদর্শবিরোধী। তিনি বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময় শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। তিনি বিএনপির হয়ে কাজ করেছেন। তার ভাই প্রক্টর থাকাকালে পাকিস্তানি বাহিনীর গুপ্তচর হিসেবে কাজ করেছে।' তিনি আরও বলেন, এমন ব্যক্তির নিয়োগ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহীর শিক্ষা ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।'

'বিতর্কিত নিয়োগপ্রাপ্ত' ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের প্রতিবাদ :অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম টিপুকে উপ-উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়ায় গতকাল দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলকের সামনে মানববন্ধন করেছেন সম্প্রতি বিতর্কিতভাবে এডহকে নিয়োগ পাওয়া ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

সূত্র: দৈনিক সমকাল। 

জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0035221576690674