রাজবাড়ীর পাংশা সরকারি কলেজের ত্রাস, বহুল আলোচিত-সামালোচিত শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা অধ্যক্ষ আতাউল হক খান চৌধুরীকে অবশেষে বদলি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাকে, কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজে ব্যবস্থাপনা বিষয়ের অধ্যাপক পদে বদলি করা হয়েছে। একসময় ঘুষ দুর্নীতির প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরে (ডিআইএ) চাকরি জীবনের অনেকটা সময় পার করা আতাউল হক খান চৌধুরী পাংশা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ পদে থেকে অসম্ভবকে সম্ভব করার মত দুর্নীতি করেছেন। কলেজ সরকারি হলে সুদূর উত্তর আমেরিকায় বসবাসরত একজন শিক্ষকে অ্যাডহক নিয়োগের পাইয়ে দিয়েছিলেন আতাউল। আমেরিকায় থাকা সেই শিক্ষকের নামে বছরের পর বছর এমপিও টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি। অপরদিকে কলেজের লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।
আতাউল হক খান চৌধুরীকে বদলির খবরে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়েছেন কলেজের শিক্ষকরা। কিন্তু দুর্নীতিবাজ এ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তার শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন তারা। গুরুতর অপরাধ করে আগে পার পেয়ে যাওয়া অধ্যক্ষ যেন শুধু বদলি হয়ে এবারও পার পেয়ে না যান তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন তারা।
সম্প্রতি আতাউল হক খান চৌধুরীর বিরুদ্ধে কলেজের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষকরা অভিযোগ করে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানানা, ২০১৯ খিষ্টাব্দের জুন এবং জুলাই মাসে কলেজ ফান্ড থেকে ৮৩ লাখ টাকা পৌরকর পরিষদের নামে ব্যায় দেখানো হলেও প্রকৃতপক্ষে পৌরকর দেয়া হয়েছে ৬০ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। বাকী টাকা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আতাউল হক খান চৌধুরী আত্মসাৎ করেছেন। শিক্ষকদের আত্তীকরণের কাজের নামে তিনি ঘুষ নিয়েছেন ৯ লাখ টাকা। বেতন করানো বাবদ বিভিন্ন সময়ে নিয়েছেন আরও ২০ লাখ টাকা।
শিক্ষকদের অভিযোগ, কারণে অকারণে শিক্ষকদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে তাদের শোকজ করতেন অধ্যক্ষ আতাউল। অধ্যক্ষের আত্মীয়দের দাওয়াত করে কলেজের বিএনসিসি দিয়ে গার্ড অব অর্নার দিয়েছেন তিনি। কলেজেই হয়েছে বিরাট অনুষ্ঠান। বাজেট প্রনয়নের নামে ভূয়া কমিটি গঠন করে হাতিয়ে নিয়েছেন ৯ লাখ টাকা। অনলাইন ফিসের নামে পরিপত্র অনুযায়ী সরকারিভাবে একবার ২০ টাকা আদায় করা হলেও পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থী প্রতি ২০০ টাকা আদায় করেছেন। এছাড়া অনার্স মাস্টার্স শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেও জরিমানা বাবদ অতিরিক্ত টাকা আদায় করেছেন তিনি।
অভিযোগ আছে, ক্যাম্পাসের এসিযুক্ত আধুনিক আসবারপত্র সজ্জিত বাসায় বসবাস করেও বাড়ি ভাড়া উত্তোলন করেছেন আতাউল হক খান। এ ছাড়া পারিবারিক প্রয়োজনে ক্যাম্পাসের দুটি বড় মেহগনি গাছ কেটে নিয়েছেন। বিভিন্ন কমিটির প্রধান হয়ে মোটা অংকের টাকা নেন। বাজেট কমিটি গঠন করে নিয়েছেন দেড় লাখ টাকা। এছাড়া পরীক্ষা পরিচালনা কমিটি থেকে সরকারিভাবে পাঁচ হাজার টাকা নেবার কথা থাকলেও নেন ৭৫ হাজার টাকা। এছাড়া কলেজের ফান্ডে প্রায় আড়াই কোটি টাকার হিসেব মিলছে না। যা আতাউল আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ শিক্ষকদের।
শিক্ষকদের অভিযোগ আতাউল হক খান চৌধুরী শোকদিবসসহ বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠানে কলেজে অনুপস্থিত ছিলেন। বিএনপি নেতা মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ভগ্নিপতি পরিচয় দিতের আতাউল। স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি তিনি বিএনপিকে পৃষ্ঠপোষকতা করেন।
এর আগে কলেজের আইবুর রহমান নামের এক শিক্ষকের নামে আমেরিকায় বসে এমপিও নিয়েছেন আতাউল। তাকে অ্যাডহক নিয়োগ পাইয়ে দিয়েছেন দুর্নীতি করে। কিন্তু অভিযোগ গঠন করা হলেও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাকে তিরষ্কার করেই মুক্তি দেয়া হয় অভিযোগ থেকে। কিন্তু তারপর আরও তিনি ভয়ংকর হয়ে ওঠেন বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষকরা। শিক্ষকদের অভিযোগ আমলে নিয়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ডিও লেটার পাঠিয়েছেন রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্য জিল্লুর হাকিম।
পাংশা সরকারি কলেজের শিক্ষক একাধিক শিক্ষক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আতাউল হক খান চৌধুরীর অপকর্মের হিসেব বলে শেষ করা যাবে না। তবে, শুধু কুড়িগ্রামে বদলি হয়েই যেন অধ্যক্ষ পার না পেয়ে যান। আমরা তার শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানাই। নজিরবিহীন অপরাধ করে তিনি আগেও পার পেয়ে গেছেন। এ দফায় তিনি যেন পার না পেয়ে যান তা নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি।
এসব বিষয়ে শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা আতাউল হক খান চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তা সম্ভব হয়নি। শুক্রবার বিকেলে একাধিকবার তার মোবাইলে ফোন করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।