কয়েকটি কলেজ অধ্যক্ষ ও স্টাফ কাউন্সিলকে ব্যবহার করে এবারও ভোট আদায়ের অপকৌশল নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে একটি প্যানেলের বিরুদ্ধে। এছাড়া একটি প্যানেলের পক্ষে বিদেশে পলাতক মন্মথ রঞ্জন বাড়ৈ ভোট চাওয়ার বিষয়টিও ভোটাররা ভালোভাবে নিচ্ছেন না। বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রথম ও একমাত্র যৌন কেলেংকারিতে বরখাস্ত রেজিস্ট্রার মো. মনিরুলের একটি প্যানেলের পক্ষে ভোট চাওয়াকে ভালোভাবে দেখছেন না শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা। বরখাস্ত রেজিস্ট্রার মনিরুলের স্ত্রী কোষাধ্যক্ষ পদে লড়ছেন।
তবে, বরাবরের মতোই এসব অপচেষ্টা শেষ পর্যন্ত ভেস্তে যাবে বলে মনে করছেন ক্যাডার কর্মকর্তারা। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার সমিতির ভোট আগামীকাল ২০ মার্চ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, হুমকি ও ধমকে এবার একটু খামতি আছে। বিগত নির্বাচনে শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষকে এই হুমকি-ধমকিতে ব্যবহার করতে পারলেও এবার তা পারছে না শাহেদ-রেহেনা প্যানেল। সভাপতি প্রার্থী অধ্যাপক মো. শাহেদুল খবির চৌধুরীর বিষয়ে মাউশি অধিদপ্তরের বর্তমান মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদের অবস্থান ক্যাডারের সবাই অনেক আগে থেকেই অবগত। তবু সরকারি কলেজগুলোর অধ্যক্ষরা যেন কোনো ভুল মেসেজের মধ্যে না থাকে তা পরিস্কার করে দিয়েছেন শনিবার সকালে। এক ভার্চুয়াল সভায় মহাপরিচালক তার অবস্থান পরিস্কার এবং নির্ভয়ে ও নিরপেক্ষভাবে ভোট গ্রহনের নির্দেশনা দিয়েছেন অধ্যক্ষদের। এছাড়া ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ ও বিদায়ী সভাপতি অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্যাহ খোন্দকারের অবস্থান ক্যাডারের সব সদস্যের কাছেই পরিষ্কার। তিনি আজমতগীর-জাফর প্যানেলের পক্ষে কাজ করছেন। মাতাল অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হয়ে পুরো ক্যাডারের ইজ্জতনষ্টকারীকে রুখে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে কয়েকটি কলেজ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শিক্ষা ক্যাডারের কয়েকজন কর্মকর্তা ও একাধিক প্যানেলের একাধিক পদপ্রার্থী ফেসবুকে নানা অভিযোগ করেছেন। অভিযোগের মধ্যে একটি প্যানেলের পক্ষে ভোট না দিলে দৈনন্দিন হাজিরায় ভ্যাজাল লাগানোর হুমকিসহ নানা বিষয় রয়েছে। এছাড়া নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকটি কলেজ অধ্যক্ষ বলেছেন, একজন সভাপতি প্রার্থী পরোক্ষভাবে এসিআরে কম নম্বর দেয়ার হুমকি দিয়েছেন।
এছাড়া কোষাধ্যক্ষ প্রার্থী কামালের বিরুদ্ধে ৫ বছর আগের ৪৩ লাখ টাকার ফান্ডের হিসাব না দেয়ার বিষয়টি ফেসবুকের আলোচনায় রয়েছে। টাকার হিসেব চাওয়ায় তিনি সিনিয়রদের প্রতি বিরূপ মন্তব্যও করেছেন মর্মে অভিযোগ পাওয়া গেছে। একটি নিবন্ধনহীন ও নেতিবাচক রাজনৈতিক দলের সমর্থক হওয়ায় বিষয়টিও ভোটাররা অবগত।
কোষাধ্যক্ষ পদে আরেক প্রার্থী সরকারি তিতুমীর কলেজের উপাধ্যক্ষের বিরুদ্ধেও নানা অভিযোগ রয়েছে। চাকরিজীবনের পুরোটাই তিনি ঢাকায় কাটিয়েছেন। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের করা কোচিংবাজ শিক্ষকের তালিকায় প্রথমেই ছিলো তার নাম।
এদিকে নজরদারির মধ্যে রয়েছেন কয়েকটি কলেজ অধ্যক্ষ। দৈনিক শিক্ষাডটকম ও দৈনিক আমাদের বার্তাসহ কয়েকজন সাংবাদিক ডজনখানেক কলেজ অধ্যক্ষের অডিও-ভিডিও ক্লিপ জোগাড় করেছেন। শাহেদ-রেহেনা প্যানেলের পক্ষে ভোট চাওয়ার অডিও-ভিডিও ক্লিপ মহাপরিচালকের কাছে জমা পড়ার খবর পাওয়া গেছে।
নজরদারির মধ্যে থাকা কলেজগুলো : পটিয়া সরকারি কলেজ, সরকারি কমার্স কলেজ চট্টগ্রাম, কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ, পাটগ্রাম সরকারি জসিমুদ্দিন কলেজ, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ, চাঁদপুর সরকারি কলেজ, লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ, চৌমুহনী এস এ কলেজ, নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজ, কোটচাঁদপুর খন্দকার মোশাররফ কলেজ ও যশোর সরকারি সিটি কলেজ।
আগামীকাল রোববার নির্বাচন। তৃতীয় এবং সর্বশেষ জরিপে জনপ্রিয়তায় সভাপতি পদে অধ্যাপক অলিউল্লাহ মো. আজমতগীর এবং মহাসচিব পদে সৈয়দ জাফর আলীর পাল্লা ভারী। কোষাধ্যক্ষ পদে চন্দ্র শেখর হালদার মিল্টন এবং দপ্তর সম্পাদক হিসেবে রূপক রায় এগিয়ে। নির্বাচন নিয়ে শিক্ষা বিষয়ক দেশের একমাত্র জাতীয় পত্রিকা দৈনিক আমাদের বার্তা ও ডিজিটাল পত্রিকা দৈনিক শিক্ষাডটকম পরিচালিত তৃতীয় নির্বাচনি জরিপে এমনই আভাস পাওয়া গেছে।
গত ১১ থেকে ১৮ মার্চের মধ্যে তৃতীয় জরিপটি পরিচালিত হয়। তৃতীয় জরিপেও দৈনিক আমাদের বার্তা ও দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিনিধিরা বিচ্ছিন্নভাবে সারাদেশের ৩০০ জন ভোটারের মতামত জানতে চান। এসব ভোটারের কাছে চারটি পদে লড়াইরত প্রার্থীদের জনপ্রিয়তার বিষয়ে নির্ধারিত প্রশ্ন করা হয়।