ইন্টারনেটে একান্ত ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও ছড়ানোর মাধ্যমে আপনজনদের হাতে যৌন নিপীড়নের শিকার হন ৬৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ ভুক্তভোগী। এর মধ্যে ৩৩ দশমিক ৭৭ শতাংশ ক্ষেত্রে ভুক্তভোগী ও অপরাধীর মধ্যে প্রেমঘটিত এবং ৩৫ দশমিক ৭১ শতাংশ ঘটনায় অপরাধী ভুক্তভোগীর পূর্বপরিচিত। সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের এক গবেষণায় এ তথ্য জানানো হয়েছে। রোববার (১৮ এপ্রিল) এক ওয়েবিনারে ‘বাংলাদেশে প্রযুক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমে যৌন নিপীড়ন’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।
সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চ্যাপ্টারের গবেষণা সেলের সদস্যরা জাতীয় ও আঞ্চলিক পত্রিকা থেকে সংগৃহীত গত বছরের (জানুয়ারি-ডিসেম্বর) ১৫৪টি অপরাধের ঘটনা বিশ্লেষণ করে এ প্রতিবেদন তৈরি করে। সংগঠনের রিসার্চ সেলের আহ্বায়ক ও ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষক মনিরা নাজমী জাহান বলেন, ‘সাইবার স্পেসে যৌন নিপীড়নের ক্ষেত্রে ৯২ দশমিক ২০ শতাংশ ভুক্তভোগী নারী। এর মধ্যে ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সীরা সবচেয়ে বেশি (৫৬ দশমিক ৪৯) নিপীড়নের শিকার। অপ্রাপ্ত বয়স্কের (১৮ বছর) ক্ষেত্রে এ হার ৩২ দশমিক ৪৭।’
গবেষণায় বলা হয়, সবচেয়ে বেশি যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঢাকা বিভাগে, ৩৩ দশমিক ১২ শতাংশ। এরপরেই চট্টগ্রামে, ১৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ। জেলা অনুযায়ী যৌন নিপীড়নের অধিকাংশ ঘটনা ঘটেছে বিভাগীয় শহরে।
এতে আরও বলা হয়, ব্যক্তিগত ছবি-ভিডিও প্রচারের ভয় দেখিয়ে যৌন নিপীড়নমূলক অপরাধ প্রবণতার মধ্যে যৌন হয়রানি, ধর্ষণ, আত্মহত্যা, আত্মহত্যার চেষ্টা, যৌন পণ, হত্যাচেষ্টার মতো ঘটনার পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৬২ দশমিক ৯৯ শতাংশ হয়রানিমূলক যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে। ধর্ষণের শিকার ভুক্তভোগী ১৫ দশমিক ৫৮, যৌন পণ ১৩ দশমিক ৬৪, আত্মহত্যা ৩ দশমিক ২৫, আত্মহত্যার চেষ্টা ১ দশমিক ৯৫, খুনের চেষ্টা শূন্য দশমিক ৬৫ ও অন্যান্য ১ দশমিক ৯৫ শতাংশ।
প্রযুক্তির অপব্যবহার নিয়ন্ত্রণে উন্নত দেশগুলোর আদলে নারী ও শিশুদের ইন্টারনেট ব্যবহারসংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন এবং সচেতনতা তৈরিসহ ১১টি সুপারিশ করেছে সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন।
ফাউন্ডেশনের সভাপতি কাজী মুস্তাফিজের সভাপতিত্বে ওয়েবিনারে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নূর মোহাম্মদ, ঢাবির অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান খন্দকার ফারজানা রহমান, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক প্রকৌশলী সৈয়দ জাহিদ হোসেন, ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার নিরাপত্তা ও অপরাধ ইউনিটের সিনিয়র সহকারী কমিশনার সাইদ নাসিরুল্লাহ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানজিম আল ইসলাম প্রমুখ অংশ নেন।