আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) দীর্ঘদিন ধরে র্যাগিংয়ের নামে নির্যাতন আর অপমানের মতো ঘটনা ঘটে আসছিল বলে জানা যায়। তড়িৎ কৌশল বিভাগের ১৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদও এমন নৃশংস নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জেনেও র্যাগিং বা নির্যাতন বন্ধে উদ্যোগী হয়নি বলে তখন ব্যাপক আলোচনা হয়। বুধবার (২১ অক্টোবর) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন মাসুদ রানা।
প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, গত বছর ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের দ্বিতীয় তলার সিঁড়ি থেকে অচেতন অবস্থায় আবরার ফাহাদকে উদ্ধার করা হয়। পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনার পরের দিন ৭ অক্টোবর আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ চকবাজার থানায় হত্যা মামলা করেন।
এ ঘটনার পর ওই বছর ৩ ডিসেম্বর একটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বুয়েট কর্তৃপক্ষ জানায়, র?্যাগিংয়ের কারণে কোনো ছাত্রের মৃত্যুর অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অভিযুক্ত ছাত্রকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চিরতরে বহিষ্কার করবে। এ ছাড়া অভিযুক্ত ছাত্রের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন কর্মকর্তা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করবেন।
কিন্তু আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার অভিযোগপত্রে বুয়েট কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলার বিষয়টি উঠে আসেনি। গত ১৩ নভেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক ওয়াহিদুজ্জামান ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। অভিযোগপত্রে ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘গণমাধ্যমে আমাদের কথা বলা নিষেধ আছে।’
মামলার অভিযোগপত্রে থেকে জানা যায়, আসামিদের মধ্যে আটজন আদালতে দণ্ডবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। ১৩ জন ১৬১ ধারায় পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ ছাড়া সাক্ষীদের মধ্য থেকে দুজন ১৬৪ ধারায় এবং ৩০ জন ১৬১ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। সাক্ষীদের মধ্যে বুয়েটের শিক্ষক, শেরেবাংলা হলের প্রভোস্ট, চিকিৎসক ও নিরাপত্তাকর্মীও আছেন। এ ছাড়া অভিযোগপত্রে মামলার সব ঘটনাপ্রবাহ বিস্তারিত দেওয়া আছে। যেখানে প্রতিটি বিষয় স্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে। অথচ অভিযোগপত্রে এ ধরনের ঘটনা রোধে বুয়েট কর্তৃপক্ষের গাফিলতি বা অবহেলার বিষয়টি তুলে ধরা হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবরারের বাবা মো. বরকত উল্লাহ বলেন, ‘অভিযোগপত্রে বুয়েট কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলার বিষয়টা উঠে আসার দরকার ছিল। কিন্তু আমি ওই সময়ে বুঝতে পারিনি যে বুয়েটে র?্যাগিং হতো বা শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন করা হয়। আমার ছেলে হত্যার পর জানতে পেরেছি অনেকে এই নির্যাতনের শিকার হয়েছে। আসলে এখানে বুয়েট কর্তৃপক্ষের গাফিলতি আছে। যদি কর্তৃপক্ষ আগে থেকেই ব্যবস্থা নিত তাহলে এ ধরনের ঘটনা ঘটত না।’ তিনি আরো বলেন, ‘এ ঘটনায় হল কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলার কথা শুনেছি। কিন্তু এ বিষয়ে অভিযোগপত্রে কিছুই উল্লেখ করা হয়নি। আমার মনে অভিযোগপত্রে ত্রুটি আছে। এ বিষয়টা কোনোভাবে তুলে আনা যায় কি না সেটা নিয়ে আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলব।’
বুয়েটের নিয়োগ করা আইনজীবী এহেসানুল হক সমাজী বলেন, ‘আপাতদৃষ্টিতে আবরার হত্যা মামলার অভিযোগপত্রে কোনো ত্রুটি নেই। কারণ এ মামলায় আদালত বিচার করবেন যে ঘটনার তারিখে ও সময়ে, ঘটনাস্থলে আসামিরা যৌথ উদ্দেশ্যে আবরার ফাহাদকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে কি না এবং কোনো আলামত ছিল কি না।’