বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার রায় আগামীকাল ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এ ঘোষণা করা হবে। ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা তাকে পিটিয়ে হত্যা করে।
আলোচিত এ হত্যা মামলার সব আসামির ফাঁসি চায় আবরারের পরিবার। অপরাধীদের কঠিন শাস্তি নিশ্চিত করলে আর কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মেধাবী শিক্ষার্থীদের এভাবে চলে যেতে হবে না বলে মনে করেন আবরারের মা রোকেয়া খাতুন। শুক্রবার সকালে আবরারের বাবার কুষ্টিয়া শহরের পিটিআই সড়কের বাসায় সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত থাকবেন আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ ও ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ। শনিবার দুপুরে বাসে কুষ্টিয়া থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা হবেন তারা। তবে খুনিদের চেহারা সহ্য করতে পারবেন না বলে সঙ্গে যাচ্ছেন না মা রোকেয়া খাতুন।
তিনি বলেন, ওদের সর্বোচ্চ শাস্তি না হলে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হত্যাকাণ্ড চলতেই থাকবে। আজ আমার ছেলে গিয়েছে, কাল আরেক মায়ের কোল খালি হবে। আমার মতো আর যেন কোনো মায়ের কষ্ট নিতে না হয়। চোখ মুছতে মুছতে রোকেয়া খাতুন বলেন, আমার ছেলেকে ওরা গুলি করে মারতে পারত, তাহলে ওর এত কষ্ট হতো না।
আবরারের ছোট ভাই ফাইয়াজ বলেন, আমরা সর্বোচ্চ শাস্তির রায় আশা করছি। রায় ঘোষণা শুনতে আব্বার সঙ্গে আমিও ঢাকায় যাব। সঙ্গে পরিবারের আরও অনেকে যাবেন।
২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে পরের দিন ৭ অক্টোবর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ।
ওই বছরের ১৩ নভেম্বর ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক ওয়াহেদুজ্জামান।
মামলার তদন্ত চলাকালে ২৫ আসামির মধ্যে ২১ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
তারা হল-বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, সহ-সভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার, ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিওন, উপ-সমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল, উপ-আইন সম্পাদক অমিত সাহা, শাখা ছাত্রলীগ সদস্য মুনতাসির আল জেমি, মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির ও ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, আবরারের রুমমেট মিজানুর রহমান মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত, মনিরুজ্জামান মনির, আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মাজেদুর রহমান, শামীম বিল্লাহ, মোয়াজ আবু হুরায়রা, এএসএম নাজমুস সাদাত এবং এসএম মাহমুদ সেতু।
পরে হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্তদের সংগঠন থেকে তাদের বহিষ্কার করে ছাত্রলীগ।
গ্রেফতার হওয়া ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, অমিত সাহা, মিজানুর রহমান মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত ও এসএম মাহমুদ সেতু ছাড়া বাকি সবাই এজাহারভুক্ত আসামি। মামলার আট আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
তারা হলেন- ইফতি মোশাররফ সকাল, মেফতাহুল ইসলাম জিওন, অনিক সরকার, মুজাহিদুর রহমান, মেহেদি হাসান রবিন, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, মনিরুজ্জামান মনির ও এএসএম নাজমুস সাদাত।
মোর্শেদ অমত্য ইসলাম নামের পলাতক এক আসামি পরে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করে। আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠান।
তাই এখন পলাতক রয়েছে তিন আসামি। তারা হলো-মোর্শেদুজ্জামান জিসান, এহতেশামুল রাব্বি তানিম ও মোস্তবা রাফিদ। এর মধ্যে মোস্তবা রাফিদের নাম এজাহারে ছিল না।
কারাগারে থাকা ২২ আসামি ১৪ মার্চ আত্মপক্ষ সমর্থনে নিজেদের নির্দোষ দাবি করে। অপর তিন আসামি পলাতক থাকায় আত্মপক্ষ শুনানি করতে পারেনি। এরপর কয়েক আসামি নিজেদের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্যও দেয়। রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ ২৮ নভেম্বর এই মামলার রায়ের তারিখ ঘোষণা করা হয়।
