আমলাদের অধীনে প্রাথমিকের মৌখিক পরীক্ষাও - দৈনিকশিক্ষা

আমলাদের অধীনে প্রাথমিকের মৌখিক পরীক্ষাও

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

আমলাদের অধীনে চলে গেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষা। অথচ প্রতিটি জেলায় এই পরীক্ষা নিতে জেলা প্রশাসক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে থাকতেন স্ব-স্ব জেলার সর্বজন গ্রহণযোগ্য একজন শিক্ষাবিদ, বিদ্বান কিংবা বিদ্যোৎসাহী সদস্য। কিন্তু চলমান শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় এ রকম আর হচ্ছে না। এর পরিবর্তে নতুন যুক্ত হয়েছেন পিটিআইয়ের সুপারিনটেনডেন্ট। আর এদের নেতৃত্বে থাকবেন জেলা প্রশাসক। এ ক্ষেত্রে তিনি যা বলবেন তাই হবে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বলেছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতার স্বার্থে মৌখিক পরীক্ষার জন্য নতুন বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বাদ পড়েছেন স্ব-স্ব জেলার বিদ্বান ব্যক্তি। শনিবার (২১ মে) ভোরের কাগজ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায় সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এমন পদক্ষেপের কারণে নিয়োগে দুর্নীতি ও অনিয়ম বন্ধের সম্ভাবনা নেই। কারণ, একাধিক জেলা প্রশাসক বলেছেন, এমপি, মন্ত্রী ও সিনিয়র সচিবদের তদবিরে তারা এক অসহায় পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন। পাশাপাশি স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারাও ব্যাপক চাপ তৈরি করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সারাদেশের অন্তত ৪০ জন জেলা প্রশাসক প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও প্রাথমিক গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়ে বলেছেন, প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগে গঠিত মৌখিক পরীক্ষার বোর্ডে থাকা বিদ্বান/বিদ্যোৎসাহী/অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের মাধ্যমে ব্যাপক দুর্নীতি হচ্ছে। স্থানীয় রাজনীতিকদের চাপে অনেক সময় কোর্টের পিপি কিংবা স্থানীয় রাজনীতিককে বিদ্বান/বিদ্যোৎসাহী নাম দিয়ে মৌখিক পরীক্ষা বোর্ডে নিয়োগ দিতে হয়। এতে নানা রকমের দুর্নীতি হয়। মূলত, জেলা প্রশাসকদের এমন চিঠি পেয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শিক্ষক নিয়োগ কমিটি তাদের বাদ দিয়ে গত ১৮ মে তিন সদস্যের নতুন মৌখিক পরীক্ষা বোর্ড গঠন করে। এতে জেলা প্রশাসককে প্রধান করা হয়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সদস্য সচিব এবং পিটিআই সুপারকে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম গতকাল বলেন, প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগ মৌখিক পরীক্ষায় ‘বিদ্বান’ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বহু দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন জেলা প্রশাসকরা। তাদের প্রস্তাবনার পরিপ্রেক্ষিতে মৌখিক পরীক্ষার বোর্ড নতুন করে গঠনের আদেশ দেয়া হয়েছে। এতে কী দুর্নীতি কমবে?

এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মৌখিক পরীক্ষা বোর্ডে দুর্নীতি হলে আগে ওই বিদ্বান/ বিদ্যোৎসাহী/ অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষককে আইনের আওতায় আনা যেত না। কিন্তু নতুন বোর্ডের তিনজনই সরকারি কর্মকর্তা। তারা যদি দুর্নীতি করেন তাহলে তাদের শাস্তির আওতায় আনা যাবে। মূলত, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতার কারণেই এমন পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। তাহলে এখন পুরোটাই আমলা নির্ভর হয়ে গেল? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টিকে নেতিবাচকভাবে দেখা ঠিক হবে না।

টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গনি গতকাল বলেন, রাজনৈতিক আনুকূল্যেই বিদ্যোৎসাহী নিয়োগ হয়। তবে তাদের সবাই খারাপ নন।

সরকারের নতুন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সিস্টেমের’ দিক দিয়ে মৌখিক পরীক্ষা নিতে নতুন বোর্ড গঠন ঠিক আছে। বিশেষ করে পিটিআই সুপারকে মৌখিক পরীক্ষার বোর্ডে অন্তর্ভুক্ত করায় যোগ্য প্রার্থী বাছাই করা যাবে। 


এদিকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আদেশে দেখা গেছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের ২০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। এর মধ্যে শিক্ষাগত যোগ্যতার জন্য ১০ এবং ব্যক্তিত্ব, প্রকাশ ক্ষমতা, সাধারণ জ্ঞান ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে ১০ নম্বর থাকবে।

এভাবেই শিক্ষক নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষার নম্বর বণ্টন সংশোধন করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত বুধবার মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, শিক্ষাগত যোগ্যতার ১০ নম্বরের মধ্যে এসএসসি ফলে ৪, এইচএসসির ফলে ৪ এবং স্নাতকের ফলে ২ নম্বর থাকবে। কোনো প্রার্থী এসএসসি-এইচএসসি বা সমমানে প্রথম বিভাগ বা জিপিএ ৩ বা তার বেশি পেলে ৪ নম্বর পাবেন। প্রার্থী ২য় বিভাগ বা জিপিএ-২ এর বেশি ও ৩ এর কম পেলে পাবেন তিন নম্বর। আর তৃতীয় বিভাগ বা জিপিএ ১ এর বেশি ও ২ এর কম পেলে পাবেন ২ নম্বর। আর স্নাতকে প্রথম বিভাগ বা সিজিপিএ ৩ এর (৪ স্কেলে) বেশি পেলে ২ নম্বর পাবেন। দ্বিতীয় বিভাগ বা সিজিপিএ ২ দশমিক ২৫ থেকে ৩ পেলে ১ নম্বর পাবেন। ব্যক্তিত্ব, প্রকাশ ক্ষমতা, সাধারণ জ্ঞান ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য ১০ নম্বর থাকবে শিক্ষক নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষায়।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এবার মোট তিন দফায় প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গতকাল শুক্রবার দ্বিতীয় দফার পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। আগামী ৩ জুন তৃতীয় দফার পরীক্ষা নেয়া হবে। এরই মধ্যে প্রথম দফায় ২২ জেলার নেয়া শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। গতকাল নেয়া লিখিত পরীক্ষার ফলাফলও চলতি সপ্তাহে প্রকাশ করা হবে। জেলা প্রশাসকদের লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হওয়া জেলাগুলোতে দ্রুত মৌখিক পরীক্ষা শুরুর প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।

টাঙ্গাইল শহরের কালেক্টরেট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ কেন্দ্র ও পুলিশ লাইন্স উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার কেন্দ্র পরিদর্শন করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় কোনো অনিয়ম বা আপত্তিকর কিছু হলেই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রথম ধাপ স্বচ্ছতার মাধ্যমে হয়েছে। আজকের (গতকাল) পরীক্ষাও স্বচ্ছতার মাধ্যমে হয়েছে। আমরা সুন্দর ও স্বচ্ছ একটি নিয়োগ কার্যক্রম জাতিকে উপহার দিতে চাই।

তবে গতকালের পরীক্ষায় অনেকেই অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছেন। এর মধ্যে মোবাইল ফোন সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষা দেয়ার অভিযোগে মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন নামের একজন প্রার্থীকে কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। নওগাঁ পৌরসভার জনকল্যাণ মডেল উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রে মোবাইল ফোন নিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছিলেন ওই প্রার্থী। বিষয়টি নজরে এলে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে প্রার্থী মো. আব্দুল্লাহ আল মামুনকে এক মাসের কারাদণ্ড দেন দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট মো. নাহারুল ইসলাম। একই অভিযোগে রাজবাড়ী জেলায় ১২ জন এবং কিশোরগঞ্জে ১ জনকে কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ - dainik shiksha স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে - dainik shiksha শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0052459239959717