আমার শিক্ষক সরদার ফজলুল করিম - দৈনিকশিক্ষা

আমার শিক্ষক সরদার ফজলুল করিম

একেএম আবদুল আউয়াল মজুমদার |

একজন মানুষের নানা পরিচিতি থাকে। যেমন, আমরা কারো সন্তান, কারো বাবা-মা ইত্যাদি। তবে আমার একটি উল্লেখযোগ্য পরিচয় হলো- আমি দার্শনিক, জ্ঞানতাপস,  মনীষী সরদার ফজলুল করিমের ছাত্র। সরদার স্যার আমার প্রিয় শিক্ষক, আমার প্রিয় মানুষ। আমার শিক্ষকদের মধ্যে তিনিই আমার জীবনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব বিস্তার করে আছেন। স্বীয়কর্মের প্রতি তাঁর নিষ্ঠা, তাঁর আদর্শবাদিতা, তাঁর নির্মোহতা আমাকে  সৎ চিন্তায়, সৎ কর্মে উৎসাহিত করে, ন্যায্যতাকে সমর্থন করতে উৎসাহ জোগায়। 

সরদার স্যার ছিলেন একজন বিপ্লবী, একজন সমাজ চিন্তুক, একজন আদর্শ শিক্ষক,  একজন আত্মবঞ্চিত মানুষ। তাঁর ছাত্র হতে পেরে আমি গর্বিত। এমন নিবেদিত প্রাণ শিক্ষক এখন বিরল।

তাঁর শিক্ষার বদৌলতে চাকরি করার সময় সেকেন্ডের কাঁটা ধরে অফিসে হাজির হতাম। সেকেন্ডের কাঁটা ধরে অফিস ত্যাগ করতাম। অফিসের টেবিলটা থাকতো একেবারে পরিচ্ছন্ন। ফাইল আসা মাত্র বিদ্যুতের গতিতে বের হতো। কোনোদিনই কোনো ফাইল অনিষ্পন্ন রেখে বাসায় ফিরিনি। ন্যায্যতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত দিতেও কখনো হাত কাঁপেনি। এ ক্ষেত্রেও সরদার স্যারের ভূমিকা রয়েছে। এসব কাজ সম্পাদনকালে তিনজন মানুষের প্রোট্রেট আমাকে উৎসাহ জোগাতো -  আমার মা, আমার মেজো জেঠা ও সরদার স্যার। তাঁদের ন্যায়নীতিবোধ ও  জীবনাচারের দৃষ্টান্ত ছিলো আমার পথ নির্দেশক।

এখন কোন ধরাবাঁধা জীবন নেই। সারাদিনই ঘরে থাকি। তবে নিয়মের তেমন পরিবর্তন হয় নি। এখনো সময় ধরেই চলি। এটা অভ্যাস এবং ইতিবাচক শিক্ষার ফল। সরদার স্যারের মতো নিয়মনিষ্ঠ মানুষের স্মৃতি আমার আজীবনের সম্পদ।

এখানে আমার শিক্ষক ড. এমাজউদ্দীনের নামটিও উল্লেখ করতে হয়। তাঁর মধ্যে  আমি কখনো নেতিবাচক কিছু দেখিনি। তাঁর কাছে যখন যে কাজে গেছি, তিনি পরম স্নেহে করে দিয়েছেন। উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশ যাবার কালে কী আনন্দের সাথে  letter of appreciation দিয়েছিলেন। 

ভিন্ন মত থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে নিজ নিজ মত ও পথের প্রতি অনুগত ও বিশ্বস্ত থাকাটাই হলো গুরুত্বপূর্ণ। এটি দিয়ে একজন মানুষের আদর্শিক দৃঢ়তার  পরিচয় পাওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে আমার দু' শিক্ষকই সফল ছিলেন। 

সরদার স্যারের আদর্শ ছিল সাম্যবাদ। তিনি আমৃত্যু তাঁর আদর্শের প্রতি একান্তভাবে  নিবেদিত ছিলেন। তিনি কখনো আদর্শচ্যূত হয় নি। তিনি তাঁর রাজনৈতিক আদর্শের জন্য বিদেশে উচ্চ শিক্ষা বৃত্তি ফিরিয়ে দেন, জেল খাটেন। কিন্তু আদর্শের সাথে আপস করেন নি। লোভ-লালসা তাঁকে কাবু করতে পারেনি। সাদামাটা জীবনই ছিল তাঁর বৈশিষ্ট্য।  আত্মবঞ্চিত থাকার ক্ষমতা ছিল তাঁর অর্জন। এমনটি কয়জন হতে পারে! 

এখন কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে সুশাসনের উপর বক্তৃতা দিতে যাওয়া হয়।  কয়েক দিন আগে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলাম। ১০০ জন অনুষদ সদস্য  উপস্থিত ছিলেন। দু' ঘন্টার বক্তৃতা। একঘণ্টা আমার নিজের বক্তব্য এবং একঘণ্টার প্রশ্নোত্তর।

প্রশ্নোত্তর পর্বে একজন অধ্যাপক প্রশ্ন করেন, শিক্ষার্থীদের কিভাবে সঠিক পথের দীক্ষা দেয়া যায়? আমার জবাব ছিল, প্রথমে শিক্ষার্থীদের কাছে আদর্শ শিক্ষক ও ভালো মানুষ হিসেবে রোল মডেল হোন, অত:পর তাঁদেরকে দীক্ষা দিতে থাকুন, সুফল পাবেন। আমার রোল মডেলদের একজন সরদার ফজলুল করিম।

সরদার স্যার এবং এমাজ স্যার রাজনৈতিক দর্শনে আলাদা আলাদা জগতের মানুষ ছিলেন। তবে শিক্ষক হিসেবে তাঁরা শিক্ষার্থীদের প্রতি নিবেদিত ছিলেন। 

সরদার স্যার ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে জাতীয় অধ্যাপক পদে ভূষিত হন। তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক এবং স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হন।

গত ১৫ জুন সরদার স্যারের নবম মৃত্যুবার্ষিকী গেলো। তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা। তিনি  ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ জুন এ পৃথিবী থেকে চির বিদায় নেন। তাঁকে আজিমপুর  গোরস্থানে দাফন করা হয়। 

লেখক : একেএম আবদুল আউয়াল মজুমদার, সাবেক সচিব ও জাতীয় অধ্যাপক সর্দার ফজলুল করিমের ছাত্র 

 

ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.022628784179688