আর কোন শিক্ষার্থী-শিক্ষক যেন হারিয়ে না যায় - দৈনিকশিক্ষা

আর কোন শিক্ষার্থী-শিক্ষক যেন হারিয়ে না যায়

মো. সিদ্দিকুর রহমান |

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৃণমূলের গরীব মেহনতি মানুষের সন্তানদের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে ৩৭ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেছিলেন। একই ধারাবাহিকতায় তাঁরই সুযোগ্য কন্যা ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে ২৬১৯৩টি বেসরকারি বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেন। বর্তমান জননেত্রী শেখ হাসিনার শিক্ষাবান্ধব সরকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভৌত অবকাঠামো ও সকল ধরনের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করে যাচ্ছে। তা সত্ত্বেও বর্তমানে শতকরা ২০ ভাগ শিশু করোনা মহামারীর পর বিদ্যালয় থেকে হারিয়ে গেছে। করোনায় নিম্ন আয়ের মানুষের অনেকের আয়ের পথ বন্ধ হওয়ায় তাদের সন্তানদের পারিবারিক কাজ বা শিশু শ্রমে নিয়োজিত করতে হয়েছে। অনেক মেয়ে শিক্ষার্থী বাল্য বিবাহের শিকার হয়েছে। বিশ্বব্যাপী করোনার ভয়াবহ থাবায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শতকার ৮০ ভাগ উপস্থিতি আমার দৃষ্টিভঙ্গিতে মোটামুটি সন্তোষজনক। তদুপরি হোম ভিজিটের মাধ্যমে তাদের বিদ্যালয়ে আনার সবধরনের কার্যক্রম চালাতে হবে। অতিদরিদ্র পরিবারের তালিকা তৈরি করে সেসব পরিবারকে বিশেষ অনুদান প্রদান করে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীকে ধরে রাখার উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

করোনা মহামারীতে আনুমানিক এক তৃতীয়াংশ কিন্ডারগার্টেন বন্ধ হয়ে গেছে। শিক্ষক হওয়ার ব্রত নিয়ে অনেকেই নামমাত্র বেতনে কিন্ডারগার্টেনে শিক্ষকতা করতেন। কোচিং কিংবা বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিক্ষার্থী পড়িয়ে কোনরকম জীবনযাপন করতেন। স্কুল বন্ধ হওয়ায় জীবিকার সন্ধানে অনেক শিক্ষক দিনমজুর, কলা, তরকারি বিক্রিসহ হরেক রকম পেশায় আবদ্ধ হয়ে পড়ে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা অনেকের প্রাথমিক শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছেন। এদেশের শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সকল নাগরিকের অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, বাসস্থানসহ সকলের দেখভাল করার দায়িত্বে তিনি রত। প্রাথমিক শিক্ষক সংকট আজ মহামারীর মত আকার ধারণ করেছে। শিক্ষক নিয়োগের এ দীর্ঘসূত্রিতা শিক্ষক নিয়োগে লিখিত পরীক্ষার ধীর গতির কারণে এ বছরেও শিক্ষার্থীরা শিক্ষক সংকটে ভুগবে। কাজকর্ম চলছে অনেকটা আমলাতান্ত্রিক ধীর গতিতে। এ প্রক্রিয়ায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দের নিয়োগ প্রার্থীরা। তারা দীর্ঘ ৪ বছর পর ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে লিখিত পরীক্ষায় উপযুক্ত হওয়ার পরও অসংখ্য পদ শূন্য রেখে আবার নতুন নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়। আবার চলে ২ বছর সময়ক্ষেপণের পালা। এভাবে ২/৪ বছর সময়ক্ষেপণে ‘শিশুদের ব্যাঙের উপর ঢিল মারার মত’ খেলা আর কত চলবে ? ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে শিক্ষক হওয়ার বাসনা নিয়ে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মৌখিক পরীক্ষার নামে তাদের স্বপ্ন ভেঙে খান খান হয়ে যায় এবং শিক্ষকতায় আবেদন করার বয়স হারিয়ে যায়।

কিন্ডারগার্টেন স্কুলের মতো তাদের মনের একান্ত বাসনা ছিল প্রাথমিকের শিক্ষক হওয়া। দীর্ঘ সময়ক্ষেপণে তাদের স্বপ্নপূরণ ব্যাহত হওয়ার বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি প্রত্যাশা কী অযৌক্তিক ? আর কোন শিক্ষক-শিক্ষার্থী যাতে হারিয়ে না যায় এ প্রেক্ষাপটে কতিপয় সুপারিশ উপস্থাপন করছি-

১. কিন্ডারগার্টেন সহজশর্তে রেজিস্ট্রেশনের আওতায় আনতে হবে।
২. শিশু মনোবিজ্ঞান বহির্ভূত পাঠদান বন্ধ করতে হবে।
৩. কিন্ডারগার্টেন স্কুলের সরকারি নিয়ন্ত্রনে এনে বর্তমান সরকার যুগোপযোগী পাঠ্যক্রমের আওতায় আনতে হবে।
৪. কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকদের বিশেষ ভাতা দিতে হবে। যাতে চরম সংকটেও তাঁরা শিক্ষকতা পেশায় টিকে থাকতে পারেন।
৫. কিন্ডারগার্টেন শিক্ষকদের ইউ.আর.সি ও ডিপ.ই.এড প্রশিক্ষণের সুযোগ দিতে হবে।
৬. খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডসহ সকল জাতীয় ও বিশেষ দিবস পালন বাধ্যতামূলক থাকতে হবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী, সচিব, ডিজি প্রাথমিক শিক্ষার নিকট বিনীত নিবেদন এই যে, আর যেন কোন শিক্ষার্থী-শিক্ষক দুর্যোগে হারিয়ে না যান। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখবেন। এ ভরসা করছি।

লেখক : সভাপতি, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ

উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ - dainik shiksha স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে - dainik shiksha শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.006601095199585