ইরানে ‘সাদা বিয়ে’ বাড়ছে - দৈনিকশিক্ষা

ইরানে ‘সাদা বিয়ে’ বাড়ছে

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বিয়ে ছাড়া একসঙ্গে থাকাকে ইরানে বলা হয় 'হোয়াইট ম্যারেজ' বা সাদা বিয়ে। ইরানী সমাজের কড়া ইসলামী আইনে নারী-পুরুষের এভাবে একসাথে থাকা অবৈধ। কিন্তু তারপরও দেশটিতে এই সাদা বিয়ে চলছে।

এ শতাব্দীর প্রথম দশকেও ইরানে কোনো যুবক-যুবতী সাদা বিয়ে করবে এমনটা অকল্পনীয় ছিল। কিন্তু এখন দেশটিতে বিয়ের আগেই একসঙ্গে থাকছে এমন তরুণ যুগলের সংখ্যা কত তার কোনো সরকারি হিসাব নেই। এটি দেশটির ইরানের কট্টরপন্থী প্রশাসনের মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠছে। খবর বিবিসির

ইরানী নারীদের মধ্যে জনপ্রিয় সাময়িকী 'জানান' ২০১৪ সালে এ বিষয়টি নিয়ে একটি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেছিল। তবে এর কয়েক মাস পর ২০১৫ সালের এপ্রিলে কর্তৃপক্ষ 'বিয়ে না করে একসঙ্গে থাকাকে উৎসাহিত করার' অভিযোগে ম্যাগাজিনটি নিষিদ্ধ করে।

ইরানের যুব বিষয়ক ডেপুটি মন্ত্রী মোহাম্মদ মেহদি তন্দগোইয়ান সম্প্রতি ইরনা বার্তা সংস্থাকে বলেছেন, 'অবিবাহিত যুগলদের সন্তানদের একসময় তাদের জন্ম নিবন্ধন সনদ দরকার হবে-যখন তারা স্কুলে ভর্তি হতে যাবে।'

তিনি সতর্ক করে বলেন, বিষয়টির নিষ্পত্তি করতে ব্যর্থ হবার পরিণাম হবে বিপর্যয়কর।

ইরানে বিয়ের অনুষ্ঠান প্রায়ই ব্যয়বহুল হয়, আর এর খরচ দিতে হয় বরের পরিবারকে। আর বিয়ে ভেঙে গেলে স্ত্রীকে 'মাহরিয়েহ' হিসেবে যে অর্থ দিতে হয় - তাও দিতে হয় স্বামীকে। এর অংক হয় বেশ বড়, আর তা না দিতে পারলে জেলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

অধিকাংশ পর্যবেক্ষকই মনে করেন, ইরানে অনেক যুগলই তাড়াহুড়ো করে বিয়ে করতে চায় না এর কারণ হচ্ছে দেশটির ক্রমবর্ধমান বিবাহবিচ্ছেদের হার।

ইরানের একজন সমাজকল্যাণ সংস্থার একাংশের পরিচালক ফারহাদ আঘতার বলছেন, ইরানে প্রতি পাঁচটি বিয়ের একটি বিবাহবিচ্ছেদ হয়। সারা ইরানের মধ্যে রাজধানী তেহরানে বিবাহবিচ্ছেদের হার সবচেয়ে বেশি।

ইরানী সমাজবিজ্ঞানী মেহেরদাদ দারভিশপুর বলেছেন, এটা বলতেই হবে যে ইরানের সমাজের অধিকতর ধার্মিক অংশ বিয়ে ছাড়া নারী-পুরুষের একসঙ্গে থাকা গ্রহণ করে না। কিন্তু বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতই ইরানের মধ্যবিত্ত শ্রেণি ধীরে ধীরে ঐতিহ্যগত বিয়ের তুলনায় এটাকেই বেশি পছন্দ করতে শুরু করেছে। বিয়ের আগে যৌন সম্পর্ক এখন আর কোনো ট্যাবু নয়।

ইরানের আইনে বিয়ের বাইরে কোনো নারী-পুরুষের শারীরিক সংস্পর্শ ঘটলে তা দণ্ডনীয় অপরাধ- যার জন্য ৯৯টি বেত্রাঘাতের মত শাস্তির বিধান রয়েছে। এ কারণে যে যুগলরা এরকম সাদা বিয়ে করেছেন- তারা এটা নানাভাবে গোপন রাখেন যাতে লোকের চোখে তা ধরা না পড়ে।

ইরানের আইনজীবী ও নারী অধিকারকর্মী মেহরাঙ্গিজ কার বলেন, একটা বড় সমস্যা হলো, বিয়ে ছাড়া একসঙ্গে থাকাটা যেহেতু বেআইনি- তাই কোনো সমস্যা হলে এসব যুগলদের আইনি সহযোগিতা পাওয়ার সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, সাদা বিয়ে করেছেন এমন কোনো নারী যদি অত্যাচারিত হন তাহলে তিনি পুলিশের কাছে যেতে পারেন না।  কারণ তাহলে তিনি ও তার সঙ্গী উভয়কেই ব্যাভিচারের দায়ে গ্রেফতার করা হবে।

ইরানের এলিট সমাজ এসব 'সাদা বিয়ের' ফলে জন্ম নেওয়া শিশুদের সমস্যাটি সম্পর্কে সচেতন- কিন্তু তারা এ বিষয়টা নিয়ে খুব কমই প্রকাশ্যে কথা বলেছেন।

ইরানের একজন সংস্কারপন্থী পার্লামেন্ট সদস্য পারবানেহ সালাহশুরি। তিনি গত সেপ্টেম্বরে এক সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলেন, যে নারীরা বিয়ে না করে একসঙ্গে আছেন- তারা গর্ভবতী হলে তাদের সামনে গর্ভপাত ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই।

কিন্তু সালাহশুরির এই মন্তব্যকে 'ভিত্তিহীন দাবি' বলে আখ্যায়িত করে এর তীব্র সমালোচনা করে ফারস নিউজ এজেন্সি।

ইরানে গর্ভপাত অবৈধ- যদি না নারীর জীবন গর্ভধারণের জন্য ঝুঁকিতে পড়ে বা ভ্রুণের কোনো গুরুতর শারীরিক ত্রুটি ধরা পড়ে। এসব বিধিনিষেধের কারণে বাজারে গর্ভপাতের বড়ি পাওয়া যায় না এবং অনেক নারীই অবৈধ পন্থায় গর্ভপাত করাতে বাধ্য হন- যা বিপজ্জনক হতে পারে।

ইরানের দেওয়ানি আইনের ১১৬৭ ধারায় বলা হয়েছে, ব্যভিচারের ফলে জন্মানো শিশু ব্যভিচারকারীর হতে পারবে না। এর অর্থ হচ্ছে, সন্তানের বাবা-মা অবিবাহিত হলে তাদের দম্পতি হিসেবে সন্তানকে রাখার কোন অধিকার থাকবে না এবং জন্মনিবন্ধন সনদে শুধু শিশুটির মা তার নাম লিপিবদ্ধ করার অনুরোধ করতে পারবেন।

ইরানের কর্তৃপক্ষ এভাবে জন্মানো শিশুদের একটি গোপন রেকর্ড রাখে এবং এসব তথ্য ভবিষ্যতে তাদের কিছু কিছু চাকরিতে নিয়োগ পাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি - dainik shiksha মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! - dainik shiksha খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ - dainik shiksha এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে - dainik shiksha মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা - dainik shiksha মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! - dainik shiksha মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0035488605499268