রাজধানীর উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের নানা অনিয়মের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবুল হোসেন ও গভর্নিং বডির সভাপতি আরিফুর রহমান টিটুর বিরুদ্ধে অসৎ উদ্দেশ্য সাধন ও আর্থিক লাভের আশায় সরকারি নির্দেশনা লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগটি তদন্তে কর্মকর্তা নিয়োগ করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর।
জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির কয়েকজন শিক্ষার্থী ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবুল হোসেন ও গভর্নিং বডির সভাপতি আরিফুর রহমান টিটুর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেনের কাছে জমা দেন। অভিযোগটি আমলে নিয়ে তা তদন্ত করতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সে নির্দেশনার আলোকে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে।
জানা গেছে, অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক, উপপরিচালক সহকারী পরিচালককে। অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে কর্মকর্তাদের।
জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবুল হোসেন ও গভর্নিং বডির সভাপতি আরিফুর রহমান টিটুর বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় তৈরি হয়েছে। তাদের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষকদের মধ্যে গ্রুপিং তৈরি হয়েছে। কমেছে শিক্ষার মান। এমনকি যেই প্রতিষ্ঠানটি ভর্তির জন্য শিক্ষার্থী পাচ্ছেনা বলেও জানা গেছে। প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষক নিয়োগে বাণিজ্য, কেনাকাটায় অনিয়ম, শিক্ষকদের সাময়িক বরখাস্ত করে পুনর্বহাল, ফেল করা শিক্ষার্থীদের প্রমোশন দিয়ে টাকা আদায়সহ নানা অনিয়ম চলছে। তবে এ ব্যাপারে কোনো শিক্ষক মুখ খুলতে চাচ্ছেন না। প্রতিবাদ করলে সাময়িক বরখাস্ত করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ শিক্ষকদের।
গত জুলাই মাসে ২২ জন শিক্ষক ও আটজন কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হলেও সে নিয়োগে সরকারি বিধি বিধান মানা হয়নি। শিক্ষক নিবন্ধন সনদ থাকার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা মানা হয়নি। এসব নিয়োগে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে।
জানা যায়, প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ আবুল হোসেন পাঁচ বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি বড় অঙ্কের বেতন-ভাতা উত্তোলন করছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে অধ্যক্ষ নিয়োগে বারবার তাগাদা দেয়া হলেও এ বিষয়ে কর্ণপাত করছে না গভর্নিং বডি। অভিযোগ রয়েছে, নানা অনিয়ম চালিয়ে যেতেই বর্তমান গভর্নিং বডির সভাপতি স্থায়ী অধ্যক্ষ নিয়োগে আগ্রহী নয়। এমনকি প্রতিষ্ঠানের গচ্ছিত কোটি কোটি টাকার ফান্ড এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে হস্তান্তর করেও আর্থিক সুবিধা নিচ্ছেন তারা।
গত ২১ অক্টোবর ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক ড. মো. হারুন-অর-রশিদ ঢাকা জেলা শিক্ষা অফিসারের তদন্তের পরিপ্রেক্ষিতে এক চিঠিতে প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সভাপতির কাছে অনিয়মের ব্যাখ্যা ও ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। কিন্তু সেসবের তোয়াক্কা করছে না গভর্নিং বডি।
কলেজ পরিদর্শক স্বাক্ষরিত চিঠিতে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক দিয়ে পাঠদান করানো, একাডেমিক কার্যক্রম সহকারী প্রধান শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে পরিচালনার বিষয়টি নিশ্চিত করা, অনিয়মতান্ত্রিক নিয়োগ ও দায়িত্ব দেয়া বন্ধ এবং সরকারি বিধি অনুসরণ করে জরুরি ভিত্তিতে অধ্যক্ষের শূন্য পদ পূরণ করতে বলা হয়।
জানা গেছে, প্রতিষ্ঠান প্রধানের পদে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবুল হোসেনের দায়িত্ব বিধি মোতাবেক দেয়া হয়নি। পদোন্নতির বিধান না থাকলেও অনিয়মতান্ত্রিকভাবে সহকারী শিক্ষক পদ থেকে প্রভাষক পদে, প্রভাষক পদ থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে তাকে। পদোন্নতিপ্রাপ্ত পদের নির্ধারিত ও প্রাপ্য বেতন স্কেলের অনেক ওপরের স্কেলে বেতন-ভাতা দেয়া হয়েছে। ফলে, প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। সৃষ্ট-অনুমোদিত পদ, প্রয়োজনীয় শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের কাম্য যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও জনবল কাঠামোর বাইরে অপ্রয়োজনীয় অনেক শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।