উচ্চ মাধ্যমিকের লাখ লাখ আসন সমন্বয় করা জরুরি - দৈনিকশিক্ষা

উচ্চ মাধ্যমিকের লাখ লাখ আসন সমন্বয় করা জরুরি

মো. রহমত উল্লাহ্‌ |

একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য ১৪৮টি প্রতিষ্ঠানে কেউ ভর্তির জন্য আবেদন করেনি। মোট সাড়ে ৭ হাজার কলেজ ও মাদরাসার মধ্যে কাম্যসংখ্যক আবেদন না পাওয়া প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা হবে সহস্রাধিক। এটি নিশ্চয়ই শিক্ষাক্ষেত্রের একটি বড় দুঃসংবাদ! চলতি ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ১৬ লাখ ৯০ হাজার ৫২৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য প্রথম ধাপে আবেদন করেছে ১৩ লাখ ৪২ হাজার ৭১৩ জন। এর বিপরীতে ভর্তির জন্য আসন রয়েছে ২১ থেকে ২২ লাখ। এই হিসাবে এবার একাদশ শ্রেণিতে ফাঁকা থাকবে ৮ লাখের বেশি আসন! এমনটি যে শুধু এবারই ঘটছে তা কিন্তু নয়। দীর্ঘদিন ধরেই ক্রমবর্ধমান হারে বেড়ে চলেছে এই পরিকল্পনাহীন দুরাবস্থা!

অপ্রয়োজনীয় আসন কমানোর তাগিদ দিয়ে গত ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দে একই ইস্যুতে যখন আমি লিখেছিলাম তখনও একাদশ শ্রেণিতে ফাঁকা ছিল ৭ লাখের বেশি আসন। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে ভাবেননি কেউ! ফাঁকা আসন কমানোতো দূরের কথা; বরং বাড়িয়ে অতিরিক্তের ওপর আরও অতিরিক্ত ১ লাখ আসন সৃষ্টি করা হয়েছে! ফাঁকা আসনের এই হিসেবটি একটু লম্বা করা হলে দেখা যাবে, এখন যারা দ্বাদশ শ্রেণিতে আছে তাদের সময়েও ফাঁকা ছিল প্রায় ৮ লাখ আসন; যা এখনো ফাঁকা। তাহলে দেখা যাচ্ছে একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণি মিলে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ফাঁকা বা প্রয়োজনের অতিরিক্ত আসন প্রায় ১৬ লাখ! কী অস্বাভাবিক চিত্র!                             

শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা গর্ব করে বলছেন, একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য আসন সংকট নেই। অথচ প্রয়োজনের অতিরিক্ত লাখ লাখ আসন ধরে রাখার জন্য প্রয়োজনের অতিরিক্ত যে বিপুল সংখ্যক শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে এবং এদের পিছনে যে ক্রমবর্ধমান হারে মোটা অংকের টাকা প্রতি অর্থবছরে ব্যয় হচ্ছে তা নিয়ে যেনো কারো কোন মাথাব্যথাই নেই! মোট আসনের এক তৃতীয়াংশ প্রতি বছর ফাঁকা বা অতিরিক্ত থাকার অর্থ দাঁড়াচ্ছে এ খাতে বার্ষিক মোট ব্যয়ের তিন ভাগের একভাগই অপ্রয়োজনীয়। অপরদিকে এ স্তরে বিদ্যমান শিক্ষক-কর্মচারী ও প্রতিষ্ঠানের তিন ভাগের একভাগই প্রয়োজনের অতিরিক্ত। যা শিক্ষার এই স্তর সরকারিকরণের চরম অন্তরায়।  
      
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, পরিকল্পনাহীনভাবে সিট-শাখা ও কলেজ-মাদরাসা বাড়িয়ে কেন এত এত ফাঁকা আসন বৃদ্ধি করা হয়েছে ও হচ্ছে? এ পরিস্থিতিতে দেশের সব উচ্চ মাধ্যমিক প্রতিষ্ঠান কাম্য শিক্ষার্থী না পাওয়াটাইতো স্বাভাবিক। প্রশাসন একদিকে লাখ লাখ অতিরিক্ত আসন সৃষ্টি করবেন এবং অপরদিকে দেশের প্রায় সকল কলেজ-মাদরাসায় কাম্যশিক্ষার্থী ভর্তির জন্য তাগাদা দিবেন তা কী করে যৌক্তিক হয়? 

একটা উদাহরণ দেই। ঢাকা শহরের মোহাম্মদপুরেতো বিশেষায়িত এবং এমপিওভুক্ত কলেজ-মাদরাসার কোন অভাব ছিল না। অথচ এই মোহাম্মদপুরেই অনুমতি দেয়া হলো মাইলস্টোন ও ক্যাব্রিয়ান কলেজের শাখাসহ আরও অনেক নতুন প্রতিষ্ঠান। এত এত সরকারি কলেজ, মডেল কলেজ, মিশন কলেজ, স্কুল এন্ড কলেজ, বিশেষ কলেজ, প্রাইভেট কলেজ, কারিগরি কলেজ ও মাদরাসা যে এলাকায় থাকবে সে এলাকায় এমপিওভুক্ত কলেজ-মাদরাসায় তো সিট ফাঁকা থাকবেই। কাম্য শিক্ষার্থীর অভাব থাকবেই। এতো গেলো রাজধানী শহরের কথা। সারা দেশের বিভাগীয় ও জেলা শহরের চিত্র কমবেশি একই রকম। প্রায় উপজেলাতেই বিদ্যমান উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের ডজনাধিক কলেজ-মাদরাসা।

 অনিয়মের প্রতিযোগিতায় নেমে অপ্রয়োজনীয় আসন ও কলেজ-মাদ্রাসা বাড়ানোর ফলে প্রতিবছর উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের যে লাখ লাখ সিট ফাঁকা থাকছে এর দায় নিশ্চয়ই শিক্ষকদে নয়। যারা অযৌক্তিকভাবে একই এলাকায় এত এত কলেজ-মাদরাসার অনুমোদন নিলেন ও দিলেন তারা কোনভাবেই এড়াতে পারেন না এর দায়। অথচ আজ মান-সম্মান বিকিয়ে শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়েও সকল শিক্ষক বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পাচ্ছে না, পাবে না কাম্য শিক্ষার্থী। সুস্থ মনে পাঠদানের স্থলে চাকরি হারানোর বা বেতন না পাওয়ার ভয়ে শিক্ষক থাকবেন তটস্থ। এভাবে কোনদিনই নিশ্চিত হবে না সুশিক্ষা। এক্ষেত্রে জরুরি প্রয়োজন সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রণয়ন ও এর আপোষহীন বাস্তবায়ন।  
               
লেখক : অধ্যক্ষ মো. রহমত উল্লাহ্, কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, ঢাকা।

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0054628849029541