উচ্চতর গ্রেড পেয়ে বেতন কমছে মাদরাসা প্রভাষকদের - দৈনিকশিক্ষা

উচ্চতর গ্রেড পেয়ে বেতন কমছে মাদরাসা প্রভাষকদের

জহির উদ্দিন হাওলাদার |

সমস্যার আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে মাদারাসা শিক্ষাব্যবস্থা। মাদারাসার জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০১৮ প্রকাশের পর থেকেই মাদারাসায় কর্মরত শিক্ষকদের মাঝে চরম অসন্তোষ কাজ করছে। শিক্ষকরা প্রতিনিয়ত ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করছেন, প্রতিবাদ জানাচ্ছেন কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাদের কোন কথাই রাখছেন না। শিক্ষকদের সব দাবি উপেক্ষা করে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ নভেম্বর অস্পষ্ট ও অসংগতিতে ভরা একটি সংশোধনী প্রকাশ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ।

জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী চাকরিকাল ৮ বছর পূর্তিতে ৫০ শতাংশ প্রভাষক সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাবেন এবং পদোন্নতি বঞ্চিত প্রভাষকরা চাকরিকাল ১০ বছর পূর্তিতে ৯ম গ্রেড থেকে ৮ম গ্রেডে বেতন ভাতার সরকারি অংশ পাবেন। এই নিয়মে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের মার্চের এমপিওতে দেখা যায় একজন প্রভাষক উচ্চতর গ্রেড পেয়ে ৮ম গ্রেডে বেতন উত্তোলন করতে পারবেন ২৩ হাজার ৩৪৩ টাকা। অথচ ৯ম গ্রেডে ইনক্রিমেন্ট যুক্ত হয়ে তার বর্তমান বেতন ২৪ হাজার ৪৩২ টাকা। অর্থ্যাৎ উচ্চতর গ্রেড পাওয়ায় একজন প্রভাষকের বেতন ১ হাজার ৮৯ টাকা কমে যাচ্ছে। এটি একটি অযৌক্তিক ও অমানবিক ঘটনা। 

প্রজাতন্ত্রের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারীর বেতন-ভাতা কমার দৃষ্টান্ত আগে কখনও দেখা যায়নি। এরকম দুঃখজনক ঘটনার জন্য মাদরাসার জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালার অস্পষ্টতা, অসংগতি এবং মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের উদাসিনতাই দায়ী। স্কুল-কলেজের নতুন নীতিমালায় কোন শিক্ষক-কর্মচারীর উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তিতে বেতন কমলে পরবর্তী উচ্চ ধাপে বেতন নির্ধারনের নির্দেশনা ও বিএড স্কেলকে উচ্চতর গ্রেড বিবেচনা না করার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা থাকলেও মাদরাসার সংশোধিত নীতিমালায় এরকম কোন ব্যাখ্যা দেখা যায় না। ফলে প্রভাষকদের বেতন কমার মত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
 
একই যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা থাকা সত্বেও একজন প্রভাষক সহকারী অধ্যাপক হবেন আর অপরজন পদোন্নতি না পাওয়ার একবুক যন্ত্রণা নিয়ে অতিরিক্ত আরও ২ বছর শিক্ষকতা করে ৯ম গ্রেড থেকে ৮ম গ্রেড পাবেন এবং আগের চেয়ে কম বেতন উত্তোলন করবেন এমনটা কোনভাবেই কাম্য নয়।

উল্লেখ্য, ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত (২০১৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত সংশোধিত) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালায় স্পষ্টভাবে বলা ছিল সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি না পাওয়া প্রভাষকদের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতার ৮ বছর পূর্তিতে ৯ম গ্রেড থেকে সরাসরি ৭ম গ্রেডে বেতন ভাতার সরকারী অংশ প্রাপ্য হবেন। এই নীতিমালা মোতাবেক কোন প্রভাষককে ৮ম গ্রেডে বেতন দেয়া হতো না। শুধুমাত্র নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক, দাখিল মাদরাসার সহকারী সুপারিটেনডেন্ট এই তিনটি পদের শিক্ষকদের ৮ম গ্রেডে বেতন ভাতা প্রদান করা হতো এবং গ্রন্থাগারিকদেরকে সিলেকশন গ্রেড হিসাবে ৯ম থেকে ৮ম গ্রেড দেয়া হতো। 

শিক্ষা বিষয়ক দেশের একমাত্র ডিজিটাল পত্রিকা দৈনিক শিক্ষার লাইভ আলোচনা, নিউজ এবং ইউটিউব চ্যানেলের কমেন্টে দেখা যায় হাজার হাজার প্রভাষক এ ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ও করছেন এবং ৮ম গ্রেড প্রত্যাখ্যানের ঘোষণা দিয়েছেন। 

শিক্ষকদের সব দাবি উপেক্ষা করায় এবং উচ্চতর গ্রেডে বেতন কমে যাওয়ায় শিক্ষকদের মধ্যে চরম হতাশা ও ক্ষোভ দানা বাঁধছে। এই ক্ষোভ যে কোনো সময় আন্দোলনে রূপ নিলেও নিতে পারে। তাই শিক্ষকদের এই সংকট সমাধানে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ এবং মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর দ্রুত সময়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবেন- এমনটাই শিক্ষক সমাজের প্রত্যাশা। 

লেখক : জহির উদ্দিন হাওলাদার, সভাপতি, বাংলাদেশ মাদ্রাসা জেনারেল টিচার্স এসোসিয়েশন

 

পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন কলেজ পরিচালনা পর্ষদ থেকে ঘুষে অভিযুক্ত সাংবাদিককে বাদ দেওয়ার দাবি - dainik shiksha কলেজ পরিচালনা পর্ষদ থেকে ঘুষে অভিযুক্ত সাংবাদিককে বাদ দেওয়ার দাবি পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0035991668701172