প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গত ছয় মাস ধরিয়া উপবৃত্তির টাকা পাইতেছে না। এই সকল শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ কোটি ৪০ লক্ষ। তাহারা কবে নাগাদ এই অর্থ পাইবে তাহাও কেহ নিশ্চিত করিয়া বলিতে পারিতেছেন না। করোনা ভাইরাসের এই মহামারির সময় উপবৃত্তির টাকা পাইলে অনেক গরিব পরিবারের বিশেষ উপকার হইত; কিন্তু প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এই ব্যাপারে যথাসময়ে কার্যকর উদ্যোগ না নেওয়ায় তৈরি হইয়াছে এই সংকট। উপবৃত্তির টাকা না পাওয়ায় অভিভাবকেরা বারংবার খোঁজখবর করিতেছেন; কিন্তু তাহারা প্রতিবারই হতাশ হইয়া ফিরিয়া আসিতেছেন। মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত সম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়।
সম্পাদকীয়তে আরও জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষার বিস্তার ও মানোন্নয়নের লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দিয়া আসিতেছে সরকার। ইহার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ঝরিয়া পড়া কমিয়াছে। ক্লাসে উপস্থিতি বাড়িয়াছে এবং শতভাগ ভর্তি নিশ্চিত হইয়াছে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন আজিকার শিশু শিক্ষার্থীরাই বাস্তবায়নে সহায়তা করিবে বিধায় এই উপবৃত্তি আরো কয়েক বত্সর অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। মন্ত্রণালয়ের সচিব ও প্রকল্পের কর্মকর্তারা বলিতেছেন, মূলত প্রকল্পের মেয়াদ গত ডিসেম্বরে শেষ হওয়ায় কিছুটা জটিলতার সৃষ্টি হইয়াছে। করোনা পরিস্থিতিতে ইহার মেয়াদ বৃদ্ধির প্রক্রিয়া আটকাইয়া গিয়াছে। একনেকের বিশেষ সভায় ইহার মেয়াদ বাড়াইতে হইবে; কিন্তু এখন সেই সভা করা যাইতেছে না। উল্লেখ্য, ১৯৯৩ সালে এই লক্ষ্যে শিক্ষার জন্য খাদ্য কর্মসূচি (১৫ কেজি গম) ও স্কুল ফিডিং, ১৯৯৯ সালে উপবৃত্তি প্রকল্প ও ২০১৮ সালে মিড ডে মিল চালু করা হয়। বর্তমানে প্রতি মাসে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির এক জন শিক্ষার্থী ৫০ এবং প্রাথমিক শ্রেণির এক জন শিক্ষার্থী ১০০ টাকা করিয়া উপবৃত্তি লাভ করিতেছে। এই অর্থ তাহাদের মায়ের মোবাইল অ্যাকাউন্টে পাঠানো হইতেছে।
বর্তমানে উপবৃত্তি প্রকল্পটি তৃতীয় পর্যায়ে রহিয়াছে। উপবৃত্তির অর্থ বৃদ্ধিসহ চতুর্থ পর্যায়ে ইহার মেয়াদ বাড়ানোর চেষ্টা করা হইতেছে। আমরা আশা করি, এই চেষ্টা অচিরেই সফল হইবে। তবে জরুরি ভিত্তিতে কীভাবে প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়াইয়া প্রায় দেড় কোটি শিক্ষার্থীর নিকট বকেয়াসহ উপবৃত্তির অর্থ প্রেরণ করা যায়, সেই ব্যাপারে আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করিতেছি। বলিবার অপেক্ষা রাখে না, এই উপবৃত্তি যাহারা পাইয়া থাকেন, তাহাদের একটি বড়ো অংশের অতি জরুরি এই অর্থ। উপবৃত্তির অর্থ তাহারা যথাসময়ে না পাইলে অনেকেরই শিক্ষাজীবন ঝরিয়া পড়ার সম্ভাবনা থাকিয়া যাইবে।