হাইকোর্টে বিভাগের এক বিচারপতির ছেলের আইনজীবী সনদ নিয়ে রিট মামলায় আইনজীবী সৈয়দ সাইয়েদুল হক সুমন ও ইশরাত হাসানকে জরিমানা করায় প্রতিকী প্রতিবাদ জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা। প্রতিবাদ হিসেবে দুই আইনজীবীকে জরিমানার দুইশত টাকা পরিশোধ করতে ১ টাকা করে দিচ্ছেন তারা।
সোমবার (৯ নভেম্বর) সকালে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সভাপতির কক্ষের সামনে রাখা বক্সে সাধারণ আইনজীবীরা টাকা রেখে প্রতিকী প্রতিবাদ করেন। যে কবিতা ফেসবুকে শেয়ার করার জন্য আদালত অবমাননার রুল জারি করা হয়েছে, বক্সের গায়ে সেই কবিতা সেঁটে দেয়া হয়।
কর্মসূচিতে ব্যারিস্টার অনিক আর হক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন,আমাদের দুইজন আইনজীবীকে সুকুমার রায়ের কবিতা ও একটি সিনেমার ঘটনা ফেসবুকে লেখার জন্য কনটেম্পট ইস্যু করা হয়েছে এবং তাদেরকে একশ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। আমরা মনে করি এটা শুধু দুই আইনজীবীকে করা হয়নি। আমাদের সুপ্রিম কোর্টের সব আইনজীবীকে এ জরিমানা করা হয়েছে। এ কারণে প্রতিকী প্রতিবাদ করছি।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্য নির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট মহসিন কবির রকি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমরা মনে করি এই জরিমানা দুই আইনজীবীকে করা হয়নি,সবাইকে করা হয়েছে। তাই দায়ভার আমরা নিজের কাঁধে নিয়েছি। প্রতিবাদ স্বরুপ প্রতিকী ভাবে এক টাকা করে দিচ্ছি। যে টাকা উঠবে সেখানে থেকে আমরা জরিমানা দেব।
একজন সাবেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, জাজমেন্ট নিয়ে আমাদের কোন বক্তব্য নেই। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে,যারা এটার পিটিশনার ছিল তারা ফেসবুকে একটা কবিতা শেয়ার করেছিল। এ কারণে তাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করা হয়েছে। এই মামলায় তাদেরকে জরিমানা করা হয়েছে। এটা খারাপ লেগেছে। ওদের সাপোর্ট করার জন্য প্রতিকী হিসেবে এক টাকা করে দিয়েছি।
এর আগে গতকাল আইনজীবী তালিকাভুক্তিকরণ পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ ব্যারিস্টার জুম্মন সিদ্দিকীকে সরাসরি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের গেজেট প্রকাশ বৈধ বলে রায় ঘোষণা করে হাইকোর্ট। পাশাপাশি রিটকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইয়েদুল হক সুমন ও অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসানকে একশত টাকা করে জরিমানা করা হয়। এ ধরনের রিট করে আদালতের সময় নষ্ট করার জন্য এ জরিমানা করা হয়েছে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়। বিচারপতি গোবিন্দ্র চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি মোহাম্মাদ উল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় দেন।
এদিকে এ রিট মামলার শুনানির এক পর্যায়ে ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইয়েদুল হক সুমন ও অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসানের বিরুদ্ধে আদালত অবমানার রুলও জারি করেন আদালত।
আদালত অবমাননা প্রসঙ্গে ব্যারিস্টার সুমন বলেন, অনেক আগে হাইকোর্টের এক বিচারপতির ছেলেকে নিয়ে পোস্ট দিয়েছিলাম,এ কারণে আদালত অবমাননার রুল জারি করেছেন।
অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান বলেন,আমি কবি সুকুমার রায়ের ‘বিচার’ কবিতার কয়েকটি পংক্তি ফেসবুকে লিখেছি। আদালত মনে করেছেন এটা অবমমাননা হয়েছে,তাই রুল জারি করেছেন।
গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর এক বিচারপতির ছেলেকে সরাসরি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে জারি করা গেজেটের কার্যক্রম স্থগিত করেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি সরাসরি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে গেজেট প্রকাশ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত। বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
গত বছরের ২১ নভেম্বর বার কাউন্সিলের আইনজীবী অন্তর্ভুক্তির পরীক্ষায় বারবার অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরও হাইকোর্টের এক বিচারপতির ছেলেকে সরাসরি হাইকোর্টের আইনজীবী ঘোষণার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট দায়ের করা হয়। আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন ও ইশরাত হাসান বাদী হয়ে এ রিট দায়ের করেন।
রিট আবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল পরীক্ষায় কয়েকবার অংশ নিয়েও কৃতকার্য হতে পারেনি হাইকোর্টের এক বিচারপতির ছেলে মো. জুম্মান সিদ্দিকী। অথচ গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর জুম্মান সিদ্দিকীকে সরাসরি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে গত বছরের ৩১ অক্টোবর গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। তাই রিটে ওই গেজেট এবং ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ বার কাউন্সিল অর্ডারের ২১(১)(খ) ও ৩০(৩) ধারা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। জুম্মান সিদ্দিকীসহ বার কাউন্সিলের সংশ্লিষ্টদের রিটে বিবাদী করা হয়।