এক সপ্তাহ যাবত নিখোঁজ রয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী তিথি সরকার। নিখোঁজের আগে তাকে ইসলাম ধর্ম নিয়ে ‘কটূক্তি’ করার অভিযোগে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছিল। একই ঘটনায় রাজধানীর পল্লবী থানায় অফিসার ইনচার্জের (ওসি) সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে তিনি নিখোঁজ হন বলে জানিয়েছে তিথির পরিবার। এ ঘটনায় ওই থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে৷
তিথির পরিবার জানায়, গত ২৪ অক্টোবর রাতে পল্লবী থানার একজন উপ-পরিদর্শক (এসআই) তিথিকে পরের দিন, ২৫ অক্টোবর সকালে থানায় গিয়ে ওসির সঙ্গে দেখা করতে বলেন। পল্লবীর বাসা থেকে ২৫ অক্টোবর সকাল ৯টায় থানার উদ্দেশ্যে বের হন তিথি। এরপর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পুলিশ এখনও তার কোনো সন্ধান জানাতে পারেনি।
এ বিষয়ে পল্লবী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কাজী ওয়াজেদ বলেন, নিখোঁজ ছাত্রীকে এখনও পাওয়া যায়নি। তার সন্ধানে আমাদের একাধিক টিম কাজ করছে। এ ঘটনায় তার পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় একটি জিডি করা আছে। ওই শিক্ষার্থীর বোন থানায় এসে জিডি করেন।
এর আগে একটি ফেসবুক পোস্টে ইসলাম ধর্মকে কটূক্তি করা হয়েছে এমন অভিযোগ এনে তিথিকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়ে ক্যাম্পাসে মিছিল করে কিছু শিক্ষার্থী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তিথির ফেসবুক স্ট্যাটাসের কিছু স্ক্রিন শট ভাইরাল করে তাকে বহিষ্কারের দাবি তোলা হয়। তবে তিথি আগেই তার ফেসবুক আইডি হ্যাকের অভিযোগ করে পল্লবী থানায় জিডি করেছিলেন৷ জিডিতে নিজের ক্ষতিরও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
নিখোঁজ হওয়ার পরদিন অর্থাৎ ২৬ অক্টোবর ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে তাকে সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ছাত্র অধিকার পরিষদের দপ্তর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বরত তিথিকে এ অভিযোগে সংগঠন থেকেও বহিষ্কার করা হয়।
নিখোঁজ ছাত্রীর বড় বোন স্মৃতি সরকার বলেন, তার বোন ক্যাম্পাসের পাশেই রায়সাহেব বাজার মোড়ে মেস বাসায় থাকতেন। তবে করোনার শুরুতে পল্লবীর বাড়িতেই থাকতেন।
তিনি আরও বলেন, আমাদের বাবা অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এ জন্য কেউ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানাতে পারিনি। তবে সে যে সংগঠন করত, তাদের জানানো হয়েছে। সে যে রাজনীতি করত, এটাও আমরা জানতাম না। জানার পরে তাকে নিষেধ করেছিলাম। গত ২৪ অক্টোবর রাতে থানা থেকে একজন এসআই এসে বলেন ২৫ অক্টোবর সকালে তিথি সরকার যেন পল্লবী থানায় গিয়ে ওসির সাথে দেখা করেন। পরে ওসির সাথে দেখা করার জন্য পল্লবীর বাসা থেকে ২৫ তারিখ সকাল ৯টায় বের হন তিথি। এর কিছুক্ষণ পর থেকেই তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরদিন সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজ নিয়ে তাকে না পেয়ে ২৭ অক্টোবর থানায় জিডি করা হয়।
স্মৃতি সরকার আরও জানান, তিথি ২৩ অক্টোবর তার ফেসবুক আইডি হ্যাক হওয়ার কথা জানতে পারেন। তবে কবে হ্যাক হয়েছে তা জানতে পারেননি। এরপর তিনি থানায় একটি জিডি করেন।
তিনি বলেন, আমরা ৪ ভাই বোন৷ মা মারা গেছেন ৫ বছর আগে৷ অসুস্থ বাবা তিথির নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় আরও ভেঙে পড়েছেন। এখন অপেক্ষা করছি কখন তিথিকে পাওয়া যাবে। থানা থেকে আমাদের বলা হয়েছে তারা উদ্ধারের চেষ্টা করছেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মোস্তফা কামাল দৈনিকশিক্ষা ডটকমকে জানান, তার বোন আমাকে কয়েকদিন আগে ফোন করে তিথি নিখোঁজ বলে জানিয়েছেন। আমরা তাকে থানায় অভিযোগ করে পুলিশের সহায়তা নিতে বলেছি। আমাদের কোনো সহায়তার দরকার হলেও জানাতে বলেছি। আমরা তার পরিবারকে সাধ্যমতো সহায়তা করব। এরপর তাদের কেউ আর যোগাযোগ করেনি।
তিথিকে সাময়িক বহিষ্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে তাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে ৷ তবে সে কী ধরনের কটূক্তি করেছে আমি তা বলতে পারব না। এটা আইটি বিশেষজ্ঞরা দেখছেন। এ বিষয়ে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি হয়েছে, তারা এটা দেখছেন। তাদের রিপোর্ট পেলেই জানা যাবে। রিপোর্টের ওপরই নির্ভর করবে তাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে, নাকি তার অস্থায়ী বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হবে।
তিথির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা নিয়ে কোথাও কোনো মামলা হওয়ার খবর জানা যায়নি ৷ প্রক্টর বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে কোনো মামলা হয়নি। তবে কেউ সংক্ষুব্ধ হয়ে করেছেন কিনা তা আমাদের জানা নেই।