একই আঙিনায় মসজিদ ও মন্দির। মিলেমিশে চলছে হিন্দু-মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের ইবাদত-উপাসনা। সময়মতো হচ্ছে আযান ও নামাজ। আবার নিয়ম করে চলে পূজা-অর্চণাও। সামনের মাঠে হয় ওয়াজ মাহফিল, সেই মাঠেই আবার বসে পূজা উপলক্ষে মেলা। এ যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য এক দৃষ্টান্ত। একপাশে পুরান বাজার জামে মসজিদের দ্বিতল ভবন, অন্যপাশে কালিবাড়ি মন্দির। দুই ভবনের দেয়ালের দূরত্ব মাত্র দুই ফুট। সামনে আছে একটিই মাঠ। ধর্মীয় সম্প্রীতির অনন্য এ দৃষ্টান্তের অবস্থান লালমনিরহাট জেলা শহরের পুরান বাজার এলাকায়।
স্থানীয়রা জানান, মসজিদের আযান শুরু হওয়ার আগেই মন্দিরের পূজা-অর্চনা বন্ধ হয়। আজান শুনে মুসলমান ধর্মাবলম্বীরা মসজিদে ঢুকে নামাজ শেষ করেন। এরপর শুরু হয় মন্দিরে পূজা। প্রতি বছর দুর্গাপূজার সময়েও এর কোনো হেরফের হয় না। এক আঙিনা থেকে যেমন আযানের ধ্বনি শোনা যায় তেমনি ওই আঙিনাতেই শোনা যায়ে শঙ্খ। এ নিয়ে জেলাবাসী গর্ব করেন। বছরজুড়েই দেশ-বিদেশ থেকে মানুষ ছুটে আসেন অনন্য এ দৃষ্টান্ত দেখতে।
পুরান বাজার জামে মসজিদের ইমাম মোহাম্মদ আলাউদ্দিন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ঐতিহ্যবাহী পুরান বাজার মসজিদের পাশেই দুইটি প্রতিষ্ঠান এক সঙ্গে। মসজিদের আগে মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবুও এখানে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সব শ্রেণির মানুষ স্বাধীনভাবে ঘুরে যান। আমরা তাদের সব কাজে সহযোগিতা করি। তারাও আমাদের সহযোগিতা করেন। নামাজের সময় মন্দিরের ঢাক-ঢোল বন্ধ রাখা হয়। আযান ও নামাজের সময়টুকু পূজার ঢাক-ঢোলসহ অন্যান্য শব্দযন্ত্র বন্ধ রাখেন। ফলে কোনো বিশৃঙ্খলা ছাড়াই যুগ যুগ ধরে এ সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে ধর্মীয় উৎসব পালন করছেন তারা।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় কালীবাড়ী মন্দিরের সভাপতি ও প্রধান পুরোহিত শংকর চক্রবর্তী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, ১৮৩৬ খ্রিষ্টাব্দে মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে এলাকাটির নামকরণও করা হয় কালীবাড়ী। পরে এখানে বাজার গড়ে উঠলে বাজারের ব্যবসায়ী ও শহরের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মন্দিরের পাশেই প্রতিষ্ঠা করেন পুরান বাজার জামে মসজিদ। সেই থেকে এক উঠানে চলছে দুই ধর্মের দুই উপাসনালয়ের কার্যক্রম। সামান্যতম বিশৃঙ্খলাও হয় না এখানে। জন্মের পর থেকে এভাবে চলতে দেখছেন তিনি।
পশাপাশি দাঁড়িয়ে থাকা মসজিদ ও মন্দিরের প্রাঙ্গণটি দেখতে গত সোমবার সন্ধ্যায় পুরান বাজারে আসেন ঢাকাস্থ নেপাল দূতাবাসের ডেপুটি চিফ অব মিশন (উপ প্রধান মিশন) মি. কুমার রাই ও রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য। এ সময় রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা যে যুগে, আমি মনে করেছি এটা আমাদের জন্য একটা উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হতে পারে। পারস্পারিক সহযোগিতায় ধর্মীয় আচার পালন করে আসছেন স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মানুষরা। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এ বন্ধন বলে দেয় বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষরা মুসলিমের সাথে মিলে মিশে রয়েছে।