বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী-অভিভাবকরা তিলে তিলে গড়ে তুলেছিলেন সাভার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ। জাতীয়করণ ঘোষণার পর হঠাৎ কলেজটিতে নাজিল হয়েছে কুখ্যাত বাড়ৈ সিন্ডিকেট সদস্য ও শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা ইমরুল হাসান। পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের নানা অপকর্মের এই হোতাকে সাভার কলেজে পদায়ন দেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়স্থ বাড়ৈ সিন্ডিকেটের সদস্যরাই। ইমরুল শুরু করেন লুটপাট। যা বালিশ কাণ্ডকেও হার মানায়। বেসরকারি আমলে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শুরু করেন নানা ষড়যন্ত্র। এই ইমরুলকে ঢাকা অফিসার্স ক্লাবের সদস্য বানানোর আবেদনে প্রস্তাবক ছিলেন শিক্ষা অধিদপ্তরের গুলিবিদ্ধ এক পরিচালক। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে এখনও বাড়ৈ সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে। তাই ইমরুলের বিরুদ্ধে আনীত কোনো অভিযোগের তদন্ত বা শাস্তি হচ্ছিল না। শেষতক মাঠে নেমেছেন কলেজটির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। গতকাল সোমবার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে অধ্যক্ষ অপসারণের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করছেন কলেজটির শিক্ষার্থীসহ শিক্ষকরা।
সোমবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে সাভারে সাভার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ক্যাম্পাসে এই মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন তারা। একই সাথে কলেজের অধ্যক্ষ ইমরুল হাসান এর বিরুদ্ধে দুর্নীতি স্বজনপ্রীতি অর্থ আত্মসাৎ ক্ষমতার অপব্যবহার অসদাচরণ ইত্যাদি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দেখিয়ে সাভার সরকারি কলেজের বিভাগীয় প্রধান শিক্ষকগন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর বরাবর একটি অভিযোগ দেন। অভিযোগে সাভার থেকে শিক্ষা ভবনে একদিন একবার যাওয়ার খরচ তিন হাজারের টাকা নেয়ার তথ্যপ্রমাণ দেয়া হয়েছে। ইমরুলের এ কাণ্ডকে স্থানীয় অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও কলেজের শিক্ষকরা রুপপুর পারমানবিক কেন্দ্রের প্রকল্পে বালিশ কান্ডের সাথে তুলনা করে অবিলম্বে ইমরুলকে গ্রেপ্তার দাবি করেছেন।
এই অভিযোগের অনুলিপি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিপ্রতিমন্ত্রী সহ সচিব মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা মন্ত্রণালয় এর দপ্তরে পাঠান।
অভিযোগে বলা হয়, প্রায় ১০ হাজারেরও বেশি ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যার এই প্রতিষ্ঠানটির ১৩৬ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ৪৫ জন কর্মচারী এবং ১২টি বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স কোর্স চালুকৃত একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান। এখানে শিক্ষা ক্যাডারের ইমরুল হাসানকে অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেয়া হয়। কলেজের অন্যান্য শিক্ষক কর্মচারী যথারীতি স্বপদে থেকে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলেও ইমরুল হাসান যোগদান করার পর থেকে কলেজের অর্থ লুটপাট, শিক্ষকদের সাথে অসদাচরণ, বিভিন্ন নীতিমালা ও নিয়ম-কানুন বহির্ভূত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন।
সাভার থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরে যাতায়াতের জন্য ইমরুল কলেজ ফান্ড থেকে ১ লাখ ৭ হাজার টাকা লুটে নেন। ভাউচার পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় একদিনে সাভার থেকে ঢাকায় আসতে খরচ দেখানো হয়েছে ২ হাজার ৬০০ থেকে তিন হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত।
প্রচলিত নিয়মে অন্যান্য শিক্ষকদের পাওনা না দিয়ে এককভাবে অর্থ আত্মসাৎ করেন, তাদের ন্যায্য পাওনা দাবি করলে শিক্ষকদের বেতন বন্ধের হুমকি দেন। তিনি কলেজের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী ঘোষণা করেন।
অভিযোগে বলা হয়, অধ্যক্ষ তার নিজ জেলার কর্মচারীদের নানারকম প্রাধান্য দিয়ে থাকেন যাতে কলেজের আর্থিক দিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং তার এলাকার একজন ছেলেকে পিয়নের দায়িত্বে রেখে, তার স্ত্রীকে দিয়ে কলেজের ক্যান্টিন পরিচালনা করেন, কিন্তু তাদের কাছ থেকে ক্যান্টিনের কোন ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিল গ্রহণ করেন না। এসব বিষয়ে কথা বললে তিনি শিক্ষকদের সাথে সর্বদা অসদাচরণ করেন।
ইতোমধ্যে তিনি কলেজের উপাধ্যক্ষকে বিভিন্ন ইস্যুতে মানসিক চাপ প্রদান করে গালাগালি ও অশোভন আচরণ করেন। এ ধরনের ব্যবহারের জন্য কলেজের কাউন্সিলর সহ সকল শিক্ষক তীব্র প্রতিবাদ করলে প্রাথমিকভাবে হাতজোড় করে ক্ষমা চাইলেও পরবর্তীতে তিনি তা আবার পুনরাবৃত্তি করছেন।
এছাড়াও অভিযোগপত্রে অভিযোগকারী কলেজের বিভাগীয় প্রধানগণ বলেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ড সংগঠিত করায় ইমরুল হাসান তার পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন বলে আমরা মনে করি। তাই তাকে অপসারন করে একজন সৎ যোগ্য অধ্যক্ষ প্রেরণ করে কলেজটির ঐতিহ্য এবং সুন্দর পরিবেশ অক্ষুন্ন রাখার আবেদন করেন তারা।
এব্যাপারে অধ্যক্ষ ইমরুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, সাভার বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ীই। শুধু সাভার বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গায় সাভার সরকারি কলেজ নামে পুনঃ নামকরণ করা হয়েছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অযৌক্তিক এবং ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন তিনি।