এমপিও শিক্ষকদের ইনক্রিমেন্ট নিয়ে হ-য-ব-র-ল - দৈনিকশিক্ষা

এমপিও শিক্ষকদের ইনক্রিমেন্ট নিয়ে হ-য-ব-র-ল

রুম্মান তূর্য |

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের ৫ শতাংশ বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট নিয়ে হ-য-ব-র-ল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পাঁচ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেতে এমপিও নীতিমালায়  চাকরির ৬ মাস পূরণ হওয়ার শর্ত থাকলেও উচ্চতর গ্রেড ও বিএড স্কেল পাওয়া স্কুল কলেজের এবং মাদরাসার শিক্ষকদের ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হয়নি। উচ্চতর গ্রেড পাওয়ার পরে শিক্ষকদের বেতন ফিক্সেশন হয়ে বেতন বাড়ার কথা বলা হলেও বেতন কমেছে অনেকের। আর বেতন বাড়ার পর মাদরাসার ইবতেদায়ি প্রধানরাও ইনক্রিমেন্ট পাননি। কামিল ডিগ্রি অর্জনের পর বেতন বৃদ্ধি পাওয়া মাদরাসার সহকারী মৌলভীদেরও ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হয়নি। দীর্ঘদিন অপেক্ষার পর ইনক্রিমেন্ট না পাওয়া শিক্ষকরা হতাশ। তারা দৈনিক আমাদের বার্তাকে তাদের ক্ষোভের কথা জানিয়েছেন। আর ডজনখানেক শিক্ষক সংগঠন থাকলেও এখনো পর্যন্ত শিক্ষকদের ইনক্রিমেন্ট জটিলতা নিয়ে কোনও কথা বলেননি নেতারা। 

এ ব্যাপারে দৈনিক আমাদের বার্তাকে শিক্ষা প্রশাসনের কর্তারা জানিয়েছেন, শিক্ষকদের ইনক্রিমেন্ট না পাওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখে জটিলতা নিরসন করা হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়ম মো. গোলাম ফারুক বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে জানিয়েছেন। আর মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কেএম রুহুল আমীন ইনক্রিমেন্ট নিয়ে জটিলতা নিরসনে শিক্ষকদের অধিদপ্তরে আবেদন করার পরামর্শ দিয়েছেন। 

গত মঙ্গলবার স্কুল কলেজ এবং কারিগরি শিক্ষকদের জুলাই মাসের বেতনভাতা ছাড় হয়। আর গত সোমবার ছাড় হয় মাদরাসার শিক্ষকদের জুলাই মাসের এমপিওর চেক। কিন্তু এমপিও শিট পেয়ে মাথায় হাত পড়েছে অনেক শিক্ষকের। 

স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের ইনক্রিমেন্ট জটিলতা: 

বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষকরা দৈনিক আমাদের বার্তার কাছে অভিযোগ করেছেন, বিএড স্কেল, উচ্চতর গ্রেড পাওয়া শিক্ষকদের ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হয়নি। উচ্চতর গ্রেড পাওয়ার পর ফিক্সেশন না হওয়ায় অনেক শিক্ষকের বেতন কমেছে। 

নীলফামারীর ডোমার মহিলা কলেজের প্রভাষক দুলাল চন্দ্র রায় দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানান, ১০ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেডের জন্য আবেদন করে জুলাই মাসে ৯ম থেকে ৮ম গ্রেড পাই। কিন্তু আমার বেতন ভাতার সরকারি অংশের সঙ্গে ইনক্রিমেন্ট যোগ হয়নি। আমার আরও দুজন সহকর্মীর একই অবস্থা, যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। 

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী বলদিয়া ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক মো. মাঈদুল ইসলাম মুকুল দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানান, শিক্ষকতার ১০ বছর পূর্তিতে জুলাই মাসের এমপিওতে ৯ম থেকে ৮ম গ্রেডে পদোন্নতি পেয়েছি। কিন্তু ২০২১ অর্থবছরের ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি যোগ করা হয়নি। কেউ কেউ বলছেন, উচ্চতর স্কেলে উন্নীত হওয়ার অন্তত ৬ মাস পর ইনক্রিমেন্ট যোগ হয়। কিন্তু গত মে মাসের এমপিওতে যারা ৮ গ্রেডে পদোন্নতি পেয়েছেন তাদের জুলাই মাসের এমপিওতে ইনক্রিমেন্ট যোগ হয়েছে। এমপিও নীতিমালায় প্রবৃদ্ধি পেতে ৬ মাস চাকরির বয়স হওয়ার শর্ত দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বলা হয়নি উচ্চতর গ্রেড পেলে শিক্ষকদের ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হবে না। তবুও আমরা ইনক্রিমেন্ট পাইনি।

যদিও এমপিও নীতিমালায় বলা হয়েছে, চাকরির বয়স ৬ মাস পূর্ণ হলেই শিক্ষকরা ইনক্রিমেন্ট পাবেন। উচ্চতর গ্রেড পাওয়ার ৬ মাসের মধ্যে শিক্ষকদের ইনক্রিমেন্ট প্রাপ্যতা নিয়ে কিছুই বলা হয়নি নীতিমালায়। 

উচ্চতর গ্রেডে ফিক্সেশন না হয়ে বেতন কমে যাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন অনেকেই। রংপুর অঞ্চলের কলেজ শিক্ষক কিংশুক দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানান, উচ্চতর গ্রেড পেয়ে ৮ম গ্রেড পাওয়া কলেজ শিক্ষকদের বেতন ৯ম গ্রেডের চেয়ে ১৩০ টাকা কমেছে। ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়ে ৯ম গ্রেডের বেসিক ২৬ হাজার ৭৬০ টাকা হওয়ার কথা। কিন্তু রংপুর অঞ্চলের ৮ম গ্রেডের বেসিক ২৬ হাজার ৬৩০ টাকা ধরা হয়েছে। অন্যদিকে, ঢাকা ও রাজশাহী অঞ্চলে ৮ম গ্রেড পাওয়া শিক্ষকদের এমপিও শিটে বেসিক এসেছে ২৭ হাজার ৯৭০ টাকা। এ বৈষম্যের প্রতিকার চাই।

এমপিও নীতিমালার ১১.৭ ধারায় বলা হয়েছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীগণ উচ্চতর স্কেল বা পদোন্নতি পেলে তার মূল বেতন বর্তমান বেতনের চেয়ে কোন ক্রমেই কম হবে না। অর্থাৎ মূল বেতন নির্ধারিত হবে বেতন স্কেল-২০১৫ অথবা সর্বশেষ জাতীয় বেতন স্কেলের সঙ্গে মিলিয়ে প্রাপ্য উচ্চতর স্কেল যে ধাপে মিলবে সে ধাপে নির্ধারিত হবে। ধাপ না মিললে পরবর্তী ধাপে নির্ধারিত হবে।

কিন্তু বাস্তবে সেটা করা হয়নি বলে অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষকরা। তারা দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেছেন, এখানে জুলাই মাসে ৯ম গ্রেডে ২২ হাজার টাকা স্কেলের একজন প্রভাষকের পাওয়া মোট বেতন ছিল ২৬ হাজার ৭৬০ টাকা। অপরদিকে ৮ম গ্রেডে ২৩ হাজার টাকা স্কেলে বেতন দেওয়া হয়েছে ২৬ হাজার ৬৩০ টাকা। যা তার উচ্চতর স্কেল পাওয়ার চেয়ে ১১০ টাকা কম। একদিকে আগের গ্রেডের চেয়ে বর্তমান গ্রেডে এসে প্রভাষকরা ১১০ টাকা কম বেতন পেয়েছেন। আবার স্কেল পরিবর্তনের জন্য পাওয়া ১ হাজার টাকার কী হলো-প্রশ্ন তুলেছেন প্রভাষকরা। 

মাদরাসার জটিলতা 

আর মাদরাসার শিক্ষকরা অভিযোগ করে দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, উচ্চতর গ্রেড পাওয়া শিক্ষকরা, কামিল স্কেল পেয়ে ১০ গ্রেডে বেতন পাওয়া শিক্ষকরা, বেতন বৃদ্ধি হওয়া ইবতেদায়ি প্রধানরা ইনক্রিমেন্ট পাননি। 

মাদরাসা শিক্ষক মামুন আবদুল্লাহ ও আহমেদ সাব্বির সেলিম হোসেন দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানান, ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর মাসের বিলে বিএড স্কেল প্রাপ্ত হয়। ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসের এমপিওতে ইনক্রিমেন্ট যুক্ত হয়। কিন্তু ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসের এমপিওতে ইনক্রিমেন্ট থেকে বঞ্চিত করা হয়। 

আমু ভূঞার হাট হাছানিয়া দাখিল মাদরাসার সহকারী মৌলভী শেখ ফরিদ দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট পেয়েছি। কিন্তু ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসের এমপিওর সঙ্গে আমরা অনেকে ইনক্রিমেন্ট পাইনি। এই ইনক্রিমেন্ট আমাদের প্রাপ্য।  
ফেনি সদরের ফাজিলপুর মুজিবিয়া ইসলামিয়া আলিম মাদরাসার সহকারী মৌলভী মো. আলাউদ্দিন দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানান, তিনি ১০ কোডে বেতন পান। ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে ইনক্রিমেন্ট পেলেও চলতি অর্থবছরে ইনক্রিমেন্ট পাননি। 

দাখিল মাদরাসার শিক্ষকরাও উচ্চতর গ্রেড পাওয়ার পরে এমপিও পাননি বলে দৈনিক আমাদের বার্তাকে জানিয়েছেন। মাহমুদুল হাসান নামের এক দাখিল মাদরাসার আইসিটি শিক্ষক বলেন, মে মাসে উচ্চতর স্কেল পেয়েছি। আমার বন্ধু মাধ্যমিক স্কুলের চাকরি করে। সেও মে মাসে উচ্চতর স্কেল পেয়েছে। দুজনের স্কেলই ২২ হাজার টাকা ছিল। জুলাই মাসের স্কুলের স্কেলে ইনক্রিমেন্ট যুক্ত হয়ে ২৩ হাজার টাকা হয়েছে,  কিন্তু আমার স্কেলে ইনক্রিমেন্ট যুক্ত হয়নি। ২২ হাজার টাকাই রয়ে গেছে।

ইবতেদায়ি প্রধানরা বলেন, জুলাই মাসের বেতন পাওয়ার পর দেখতে পেলাম ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট যুক্ত হয়নি। কেন যুক্ত হয়নি আমরা বুঝতে পারছি না। গত মার্চ মাসের এমপিও থেকে আমাদের বেতন ১৫তম গ্রেড থেকে ১১তম গ্রেডে উন্নীত হয়েছে। আমাদের নিয়োগ নতুন নয় বা ইনডেক্সও পরিবর্তন হয়নি। এ পরিস্থিতিতে আমাদের ইনক্রিমেন্ট প্রাপ্য। কিন্তু আমাদের ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হয়নি। 

মাদরাসা শিক্ষকরা বলছেন, দশম গ্রেড থেকে নবম গ্রেডে বেতন উন্নীত হওয়া সহকারী শিক্ষকরা ইনক্রিমেন্ট পাননি। যেসব সহকারী শিক্ষক বা সহকারী মৌলভীর বেতন ১১তম গ্রেড বর্তমানে দশম গ্রেডে উন্নীত হয়নি তারাও ইনক্রিমেন্ট পাননি। তাদের কারও চাকরি নতুন নয়। তারা উচ্চতর গ্রেড পেয়েছেন। নতুন নিয়োগ বা নতুন ইনডেক্স পাননি।

যা বলছেন শিক্ষা প্রশাসনের কর্তারা: 

জানতে চাইলে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কেএম রুহুল আমীন গতকাল বুধবার দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, ইনক্রিমেন্ট নিয়ে জটিলতার বিষয়টি শিক্ষকদের মাদরাসা অধিদপ্তরকে জানানোর অনুরোধ করছি। আমাদের সফটওয়ারে কী কী সমস্যা আছে, আমরা তা দেখব। শিক্ষকরা অধিদপ্তরে আবেদন করলে তাদের জটিলতা নিরসন করা হবে। কয়েকজন শিক্ষকের ইনক্রিমেন্ট সমস্যা ইতোমধ্যে দূর করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।   

জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, আমি বিষয়টি ভালোভাবে জানার চেষ্টা করছি। বিষয়টি না জেনে মন্তব্য করতে পারছি না। কেন শিক্ষকরা ইনক্রিমেন্ট পাননি তা খতিয়ে দেখবেন বলেও আশ্বস্ত করেছেন তিনি।

জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0046679973602295