প্রায় দুই হাজার দুইশ নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্তি করতে যাচ্ছে সরকার। এর মধ্যে নিম্ন-মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে প্রায় ১ হাজার ৭০০, স্কুল এন্ড কলেজ পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে প্রায় ১৫০, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের কলেজ রয়েছে প্রায় ১০০ এবং ডিগ্রি স্তরের কলেজ রয়েছে ৮০ থেকে ১০০টির মতো। এছাড়া মাদরাসা ও কারিগরি বিভাগের অধীনের কিছু প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হবে।
সংশ্লিষ্টরা দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলছেন, আগামী মে মাসের প্রথমার্ধেই নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণা দেয়া হতে পারে। এর আগে তারা বলেছিলেন মধ্য মার্চে। পরে অধিকতরো অনুসন্ধানের জন্য সময় নেয়া হয়।
জানা যায়, ইতোমধ্যে এ তালিকার খসড়া শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির কাছে দেয়া হয়েছে। মন্ত্রীর টেবিল থেকে সচিবের মাধ্যমে এমপিওভুক্তির সারসংক্ষেপ এখন প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দেয়ার পরই শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করবে।
এর আগে মধ্য মার্চে নতুন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণা দেয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। কারণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম ও ইতিহাসের বিষয়ে প্রাপ্ত তথ্য জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে যাচাই করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। যদিও জেলা প্রশাসকরা সেটা দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে। আর কোথাও কোথাও তারা সেটা দিয়েছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে। আগের বার স্বাধীনতাবিরোধী ও রাজাকারদের নামে প্রতিষ্ঠিত বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়েছিল। শুধু দৈনিক শিক্ষাডটকম-এর অনুসন্ধানে তা বেরিয়ে আসে। ধাপে ধাপে সেগুলো বাদ দেয় মন্ত্রণালয়। এবার যাতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য আগেভাগেই এমন ব্যবস্থা নিল সরকার।
এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সম্প্রতি বলেছেন, নীতিমালা অনুযায়ী যোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কোনো ধরনের সুপারিশ ছাড়াই এমপিওভুক্ত হচ্ছে। তিনি বলেছেন, কোনো নেতা, মন্ত্রীর সুপারিশ কিংবা অন্য কোনো পন্থায় এখন আর এমপিওভুক্তির সুযোগ নেই। তাই যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নীতিমালার শর্তপূরণে ব্যর্থ, তারা কোনোভাবেই এমপিওভুক্তি পাবে না। এজন্য সবাইকে এমপিওভুক্তির নীতিমালার আলোকে শর্তপূরণ করার আহ্বান জানান তিনি।
সূত্র জানায়, গত বছরের ১০ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত এমপিওভুক্তির জন্য অনলাইনে আবেদন নেয়া হয়। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে নিম্ন মাধ্যমিক স্কুল, মাধ্যমিক স্কুল, উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ ও ডিগ্রি কলেজ মিলিয়ে সাড়ে ৪ হাজারের বেশি আবেদন পড়েছে। আর কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে প্রায় ৩ হাজার ৯০০ মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে। আবেদনকৃত মোট সাড়ে ৮ হাজার প্রতিষ্ঠানের ৯০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী এমপিওভুক্তির জন্য অপেক্ষা করছেন।
এমপিওভুক্তির আবেদন যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বেসরকারি মাধ্যমিক) ফৌজিয়া জাফরীন বলেন, চলতি অর্থবছরে যে টাকা বরাদ্দ আছে, আমরা প্রাথমিকভাবে সেই অনুযায়ী তালিকা তৈরি করেছি। এর বাইরে আরো প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্তি দেয়া হবে কিনা সে ব্যাপারে সরকারের উচ্চ পর্যায় সিদ্ধান্ত নেবে।
সর্বশেষ ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২ হাজার ৭৩০টি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণা দেন। এরপর দীর্ঘ ছয় মাস যাচাই-বাছাই শেষে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এক হাজার ৬৩৩ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগ ৯৮২টি প্রতিষ্ঠানের তালিকা চূড়ান্ত করে। তবে এ বছর ঘোষণার আগেই যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শেষ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।