এমপিওভুক্তিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের যত শর্ত - দৈনিকশিক্ষা

এমপিওভুক্তিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের যত শর্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক |

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির নতুন নীতিমালা জারি করতে চলেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামোতে সংশোধনী এনে নতুন এ নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত করেছে মন্ত্রণালয়। আর্থিক সংশ্নেষ থাকায় প্রস্তাবিত সংশোধনীসহ এ-সংক্রান্ত নথিসহ নতুন নীতিমালার খসড়া অর্থ বিভাগে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছিল। এর পরই নতুন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে ছয়টি শর্ত দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। 

শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে- সিটি করপোরেশন, জেলা সদর ও পৌরসভা এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নতুন কর্মচারী পদ সৃষ্টি না করা; একসঙ্গে সব শিক্ষক নিয়োগ না করে ধাপে ধাপে করা; নতুন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে অন্যান্য শর্তের সঙ্গে সেটির হালনাগাদ স্বীকৃতি/অধিভুক্তি থাকা; গার্লস কলেজগুলোতে কাম্য শিক্ষার্থীর সংখ্যা আগের মতো আনুপাতিক হারেই থাকা;  চারটি বিষয়ে তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির প্রস্তাব বাতিল করা এবং প্রতি ৬৫ হাজার জনসংখ্যার জন্য একটি করে উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় (ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ) এমপিওভুক্ত কর। 

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের উপসচিব তনিমা তাসমিন স্বাক্ষরিত এক পত্রে ১৪ মার্চ এসব শর্তের কথা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেনকে জানানো হয়।

আগের নীতিমালা সহজ করে এমপিওভুক্তির শর্তাবলিতে বড় ধরনের পরিবর্তন এনে এবারের নীতিমালা করা হচ্ছে। ২০১৮ সালের এমপিও নীতিমালা ও জনবল কাঠামোতে সংশোধনী এনে নতুন এ নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত করেছে মন্ত্রণালয়।

আর্থিক সংশ্নেষ থাকায় প্রস্তাবিত সংশোধনীসহ এ-সংক্রান্ত নথিসহ নতুন নীতিমালার খসড়া অর্থ বিভাগে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছিল। এর পরই অর্থ বিভাগ শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে এ সাতটি শর্ত দিয়েছে। সেখানে স্বীকৃতির শর্ত তুলে দেওয়ার বিরোধিতা করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। নতুন পদ সৃষ্টির বিষয়েও শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়িয়ে দেওয়ার শর্ত গার্লস কলেজের জন্য ছাড় দিয়ে সেখানে কাম্য শিক্ষার্থীর সংখ্যা আগের মতোই বহাল রাখতে বলেছে অর্থ বিভাগ।

বর্তমানে সারাদেশের নতুন প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির আশায় দিন গুনছে। নতুন নীতিমালা জারি হলেই এমপিওভুক্তির আবেদন নেওয়া শুরু হবে।

অর্থ বিভাগের চিঠিতে বলা হয়েছে- মানসম্মত ও যোগ্য শিক্ষক নিয়োগ নিশ্চিত করতে এবং সরকারের বাজেট বরাদ্দের ভারসাম্য রক্ষার লক্ষ্যে সব শিক্ষক-কর্মচারী একসঙ্গে নিয়োগ না করে নতুন নীতিমালা অনুযায়ী প্রস্তাবিত শিক্ষক-কর্মচারী পর্যায়ক্রমে নিয়োগ করতে হবে। প্রস্তাবিত নীতিমালায় সিটি করপোরেশন, জেলা সদর এবং পৌরসভায় অবস্থিত প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে শিক্ষকের পদবহির্ভূত অতিরিক্ত কর্মচারীর পদ (যেমন- অফিস সহায়ক, নিরাপত্তা কর্মী, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, নৈশপ্রহরী এবং আয়া) নতুনভাবে সৃষ্টি না করে এসব পদে নতুন নিয়োগের প্রয়োজন হলে নিজস্ব অর্থায়নে নিয়োগের বিধান রাখতে হবে। তবে মফস্বল এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর আয় কম থাকায় প্রস্তাবিত নীতিমালায় শুধু এসব এলাকার ক্ষেত্রে নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় (ষষ্ঠ-অষ্টম), মাধ্যমিক বিদ্যালয় (ষষ্ঠ-দশম) এবং উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে (ষষ্ঠ-দ্বাদশ) 'অফিস সহায়কের' একটি করে নতুন পদ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

চিঠিতে আরও বলা হয়- 'জনস্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় এমপিওভুক্তির শর্তপূরণ সাপেক্ষে সরকার কোনো প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির আদেশ দিতে পারবেন' -এই বিধানের পরিবর্তে 'এমপিও নীতিমালা ও বাজেট বরাদ্দের আলোকে শর্তপূরণ সাপেক্ষে প্রতিষ্ঠান বাছাইয়ের জন্য গঠিত কমিটি কর্তৃক যাচাই-বাছাইপূর্বক সুপারিশের ভিত্তিতে এমপিওভুক্ত করা যাবে' -মর্মে বিধান রাখতে হবে।

অর্থ বিভাগের শর্তগুলোর মধ্যে আরও বলা হয়েছে, নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য অন্যান্য শর্তাবলির সঙ্গে হালনাগাদ স্বীকৃতির/অধিভুক্তির শর্ত বহাল রাখতে হবে। উচ্চতর পর্যায়ে নারী শিক্ষাকে উৎসাহিত করার জন্য এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে শুধু নারীদের জন্য পরিচালিত উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ/স্নাতক (পাস) কলেজের জন্য কাম্য শিক্ষার্থীর সংখ্যা আগের মতো আনুপাতিক হারে কম রাখতে হবে। বর্তমানে ৭৫ হাজার জনসংখ্যার জন্য একটি করে উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রাপ্যতা রয়েছে। নতুন শর্তে উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে এই জনসংখ্যা ৬৫ হাজারে সীমিত করতে এবং চারটি বিষয়ে (বাংলা, ইংরেজি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, ঐচ্ছিক) প্রস্তাবিত তৃতীয় শিক্ষকের পদ সৃজন না করতে বলা হয়েছে।

এদিকে, তৃতীয় শিক্ষকদের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আপত্তিতে ভীষণ মুষড়ে পড়েছেন সারাদেশের তৃতীয় শিক্ষকরা। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী, যে কোনো বেসরকারি কলেজে কোনো বিষয়ে ডিগ্রি পড়াতে গেলে কমপক্ষে তিনজন শিক্ষক থাকতে হবে। অনার্স পড়াতে গেলে চারজন শিক্ষক লাগে। অথচ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের নিয়ম অনুসারে, একটি বিষয়ে মাত্র দু'জন শিক্ষক (উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের জন্য একজন, ডিগ্রি স্তরের জন্য একজন) এমপিওভুক্ত হতে পারেন। এই দু'জনের বেতন সরকার থেকে দেওয়া হয়। একই বিষয়ের তৃতীয় শিক্ষকের বেতন-ভাতা কলেজ তহবিল থেকে পরিশোধ করতে হয়। সরকারি এই নিয়মের বৃত্তে পড়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাভুক্ত ডিগ্রি কলেজগুলোর বিষয়ভিত্তিক তৃতীয় পদে নিয়োগপ্রাপ্ত কলেজশিক্ষকরা মানবেতর জীবনযাপন করে আসছেন। এই তৃতীয় শিক্ষকরা এমপিওভুক্তি পেতে দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তাদের আশ্বাসও দেওয়া হয়েছিল।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নতুন নীতিমালা জারি হলেই সারাদেশে নতুন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির আবেদন নেওয়া শুরু হবে। 'বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (স্কুল ও কলেজ)-এর জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০২১' শীর্ষক প্রস্তাবিত নতুন এ নীতিমালায় এমপিওভুক্তি পেতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাসের হারের শর্তে কিছুটা ছাড় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু শিক্ষার্থী সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। আগে মফস্বলে উচ্চ মাধ্যমিক কলেজে ১৫০ শিক্ষার্থী থাকলেই হতো, এখন তা হতে হবে কমপক্ষে ২৪০।

পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন কলেজ পরিচালনা পর্ষদ থেকে ঘুষে অভিযুক্ত সাংবাদিককে বাদ দেওয়ার দাবি - dainik shiksha কলেজ পরিচালনা পর্ষদ থেকে ঘুষে অভিযুক্ত সাংবাদিককে বাদ দেওয়ার দাবি পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032570362091064