বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার একটি এমপিওভুক্ত মাদরাসায় কৃষি বিষয়ে সহকারী শিক্ষক পদে সুপারিশ পেয়ে যোগদান করেছিলেন শরিফুল ইসলাম। গত জানুয়ারিতে শিক্ষক পদে যোগদান করেও নিবন্ধিত এ প্রার্থী মে মাসেও এমপিওভুক্ত হতে পারেন নি। কারণ বিএড করা হয়নি তার। যদিও তারমত একই সনদ নিয়ে বিভিন্ন স্কুলে কৃষি বিষয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ সুপারিশ পেয়ে নতুন শিক্ষকরা বিএড ছাড়াই সুপারিশ পেয়ে এমপিওভুক্ত হয়েছেন। চার মাস শিক্ষকতার পরেও বেতন ভাতা না পেয়ে বিপাকে শরিফুল।
একই নিয়োগ চক্রে সুপারিশ পেয়ে পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার দক্ষিণ বলবুনিয়া দাখিল মাদরাসায় গত ফেব্রুয়ারি মাসে যোগদান করেন আরিফা সুমা। মে মাসেও এমপিওভুক্ত হননি এ নতুন শিক্ষক। কারণ প্রাণীবিদ্যায় অনার্স করে তিনি প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষক পদে যোগদান করেছেন। অথচ একই সনদ নিয়ে কৃষি শিক্ষক পদে নিবন্ধিত হয়েছিলেন তিনি। তারমত প্রাণীবিদ্যা থেকে অনার্স করা বিভিন্ন স্কুলের নতুন কৃষি শিক্ষকদের কপালে এমপিও জুটলেও এ শিক্ষকের ভাগ্যে তা মেলেনি।
শুধু আটঘরিয়ার শরিফুল বা গলাচিপার সুমাই নন, বিভিন্ন মাদরাসায় তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে কৃষি বিষয়ে সহকারী শিক্ষক পদে এনটিআরসিএর সুপারিশ নিয়ে যোগদান করলেও এমপিওভুক্ত হতে পারেননি অনেক শিক্ষক। এর কারণ ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের জারি হওয়া মাদরাসার এমপিও নীতিমালা ও ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর মাসে জারি হওয়া সংশোধিত এমপিও নীতিমালার অসামঞ্জস্যতা।
মাদরাসায় কৃষি শিক্ষক পদে নিয়োগ পেয়েও এমপিওভুক্ত হতে না পারা প্রার্থীরা তাদের এমপিও জটিলতা নিরসনের দাবি জানিয়েছেন। বুধবার এ জটিলতায় পড়া অর্ধশতাধিক প্রার্থী রাজধানীর নিউ বেইলি রোডের গাইড হাউসে অবস্থিত মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরে জড়ো হয়ে তাদের এমপিওভুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন।
বুধবার সকাল থেকে কৃষি শিক্ষকরা মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে জড়ো হতে থাকেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তারা গাইড হাউস চত্বরে অবস্থান নিয়ে তাদের এমপিওভুক্তির দাবিতে মানববন্ধন করেন।
সরেজমিনে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে গেলে কথা হয় সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার সাগুনা ইসলামিয়া দাখিল মাদারাসায় নতুন নিয়োগ পাওয়া কৃষি শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে। তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, তিনিও এমপিওভুক্ত হতে পারছেন না বিএড না থাকার কারণে।
আন্দোলনরত এ শিক্ষক দৈনিক শিক্ষা ডটকমকে জানান, মাদরাসার সংশোধিত এমপিও নীতিমালায় উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতকদের মাদরাসায় কৃষি শিক্ষক পদে সুপারিশ পেয়ে এমপিওভুক্ত হওয়ার সুযোগ দেয়া হলেও প্রাণিবিদ্যা বিষয়ে স্নাতকদের এমপিওর আবেদন অগ্রায়ন করা হচ্ছে না। এর কারণ সংশোধিত এমপিও নীতিমালায় এ পদে নিয়োগের যোগ্যতায় প্রাণিবিদ্যা বিষয়ের কথা উল্লেখ নেই। অথচ ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের এমপিও নীতিমালায় দাখিল মাদরাসায় কৃষি শিক্ষক পদে নিয়োগে প্রাণিবিদ্যা থেকে স্নাতক করার প্রার্থীদের সুপারিশ পেয়ে এমপিওভুক্ত হতে পারতেন। আর স্কুলের কৃষি শিক্ষক পদে প্রাণিবিদ্যা বিষয়ে স্নাতকদের নিয়োগ পাওয়ার সুযোগ ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে জারি করা স্কুল-কলেজের এমপিও নীতিমালায়ও রাখা হয়েছে।
শিক্ষকরা আরও জানান, নীতিমালায় বিএড বাধ্যতামূলক করায় কৃষি বিষয়ে দাখিল মাদরাসায় সুপারিশ পাওয়া নতুন শিক্ষক যাদের বিএড করা নেই তাদের এমপিওর আবেদন অগ্রায়ন করা হচ্ছে না। যদিও স্কুলের কৃষি শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির জন্য বিএড কোর্সে অংশগ্রহণের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। এসব জটিলতকায় এমপিওভুক্ত হতে পাড়ছেন না মাদরাসায় কৃষি শিক্ষক পদে নিয়োগপ্রাপ্তরা।
অবস্থানরত শিক্ষকদের দাবি, এ জটিলতায় পড়ে সারাদেশের চার শতাধিক শিক্ষক এমপিওভুক্ত হতে পারছেন না। তবে দৈনিক শিক্ষাডটকমের পক্ষ থেকে এ সংখ্যা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
অবস্থানরত প্রার্থীর আরও জানান, তারা মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের দাবি জানিয়েছেন। অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা দ্রুত জটিলতা নিরসনের আশ্বাস দিয়েছেন প্রার্থীদের।
জানা গেছে, এসব জটিলতার বিষয় মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের নজরেও এসেছে। মাদরাসার সংশোধিত এমপিও নীতিমালার অসামঞ্জস্যতা নিরসনের উদ্যোগও নেয়া হয়েছে। গত মার্চ মাসে এ বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করে অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জটিলতা নিরসনের কাজ চলছে।
এ বিষয় জানতে চাইলে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রশাসন শাখার উপপরিচালক সাইফুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, নীতিমালার অসামঞ্জস্যতার কারণে এ জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। আমরা এসব অসাঞ্জস্যতা নিরসনে প্রস্তাব গত মার্চে কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের পাঠিয়েছি। কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ সে অনুযায়ী আদেশ বা পরিপত্র জারি করে এ জটিলতা সমাধান করবে। অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ডিজি মহোদয়ও মন্ত্রণালয়ে গিয়ে এ জটিলতা নিরসনের সুপারিশ করেছেন। এ জটিলতা দ্রুত নিরসন হবে। সকালে আন্দোলনরত প্রার্থীদের আমরা বিষয়টি জানিয়েছি।
শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।