কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার কেদার মহিলা কলেজ এমপিওভুক্তির পর নিয়মিত শিক্ষকদের বাদ দিয়ে গোপনে নতুন করে ৯ জন শিক্ষক নিয়োগের অভিযোগ পাওয়া গেছে। চলতি বছরের জুলাই মাসে নতুন করে এমপিওভুক্তির জন্য নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানের তালিকায় কলেজটির নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর কলেজের অধ্যক্ষ ও ম্যানেজিং কমিটির লোকজন তাদের নিয়োগ দিয়ে প্রায় সোয়া দুই কোটি টাকা উৎকোচ বাণিজ্য করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষকরা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, কেদার মহিলা কলেজটি ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে বর্তমান অধ্যক্ষ মোহাম্মদ হাফিজুল মন্ডলসহ ১৫জন শিক্ষক বিনা বেতনে শিক্ষকতা করে আসছেন। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে কলেজের জমি ক্রয়বাবদ সব প্রভাষকদের কাছ থেকে ৭ লাখ টাকা করে নেয়া হয়। ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে মাটি ভরাট ও কলেজের ভবন নির্মাণের জন্য নেয়া হয় ৫ লাখ টাকা, সর্বশেষ ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে কলেজের একাডেমিক স্বীকৃতি পাওয়ার সময় আরও ২ লাখ টাকাসহ প্রত্যেক প্রভাষকদের কাছ থেকে নেয়া হয় ১৭ লাখ টাকা। শিক্ষকরা যাতে প্রতারণার শিকার না হন এজন্য প্রত্যেক শিক্ষককে জুডিসিয়াল স্টাম্পে নিয়োগ দেন কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি, সাবেক এমপি মো. এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান ও বর্তমান অধ্যক্ষ মোহাম্মদ হাফিজুল মন্ডল। নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ার পর থেকে ক্লাস নেয়ার পাশাপাশি প্রভাষকরা সরকার পরিচালিত এইএএসসি পরীক্ষার হল পরির্দশক, আইসিটি প্রশিক্ষণ এবং স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের নির্বাচন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন।
তারা আরও জানান, এ অবস্তায় কলেজের অধ্যক্ষ যোগসাজসের মাধ্যমে নিয়মিত শিক্ষকরা কর্মস্থলে উপস্থিত থাকার পরও গোপনে অবৈধ পন্থায় পুরাতন ৯ প্রভাষককে বাদ দিয়ে তাদের জায়গায় নতুন করে ৯জন শিক্ষক নিয়োগ দেন। যা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জরিপ-২০২২ তালিকায় সেকশন-৩, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী সম্পর্কিত তথ্যে উঠে এসেছে। এই তালিকায় পুরাতন ৯ শিক্ষকের জায়গায় নতুন করে ৯জন শিক্ষকের নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় বিষয়টি সব শিক্ষকদের নজরে আসে। এ নিয়ে অধ্যক্ষকে প্রশ্ন করা হলে তিনি উল্টো শিক্ষকদের হুমকি-ধামকি দেন এবং জানান এটাই চুড়ান্ত শিক্ষকদের তালিকা। আপনাদের যা করার আছে করেন।
ভুক্তভোগী ভুগোল বিষয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ আলী, ব্যবস্থাপনার আল-মামুন উর রশীদ, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতির রফিকুল ইসলাম, হিসাব বিজ্ঞানের মোস্তাফিজুর রহমান, পদার্থ বিজ্ঞানের রুহুল আমিনসহ একাধিক শিক্ষক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, আমরা ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের পর থেকে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ওই কলেজে পাঠদান করে আসছি। হঠাৎ
করে বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকায় আমাদের নামের বদলে অপরিচিত শিক্ষকদের তালিকা দেখে হতাশ হয়ে যাই। এই প্রতিষ্ঠানের পেছনে আমরা শ্রমঘামসহ প্রত্যেকে ১৭ লাখ টাকা করে সহযোগিতা দেয়ার পরও অধ্যক্ষ ও ম্যানেজিং কমিটির কতিপয় সদস্য মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে কোন বিধিবিধান না মেনে এ অবৈধ কাজটি করেছেন। আমারা জানতে পেরেছি নতুন শিক্ষকদের ভুল বুঝিয়ে তাদের প্রত্যেককের কাছ থেকে ২৫ থেকে ২৭ লাখ টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়েছে। তাদেরকে যদি বিকল্প শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় তাহলে পরিবার-পরিজন নিয়ে আমাদেরকে রাস্তায় দাঁড়াতে হবে। এ অন্যায় ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাংবাদিক সমাজসহ আমরা সবার পক্ষের সহযোগিতা চাই।জানতে চাইলে কেদার মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ হাফিজুল মন্ডল দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, ওই শিক্ষকদের এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট নেই। আমি নিয়োগ দেয়ার কে? সরকার নিয়োগ দেবে। ওরা মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর কথা ছড়াচ্ছে। তারা কোর্টে মামলাও করেছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বার্ষিক জরিপে হঠাৎ করেই নতুন করে ৯জন শিক্ষকের তথ্য দেয়া হল কিভাবে জানতে চাইলে অধ্যক্ষ এর কোন উত্তর দিতে পারেননি। তিনি ব্যস্ততার কথা বলে ফোন কেটে দেন।
জেলা শিক্ষা অফিসার মো. শামসুল আলম ছুটিতে থাকায় এ বিষয়ে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। আমি নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে এ ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে বলেছি। প্রকৃত ঘটনা জেনে বিধিমোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।