এমপিওর মামলা : ৩ শিক্ষকের কথা শুনে যা বললেন প্রধান বিচারপতি - দৈনিকশিক্ষা

এমপিওর মামলা : ৩ শিক্ষকের কথা শুনে যা বললেন প্রধান বিচারপতি

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

এমপিওভুক্ত করা নিয়ে একটি মামলা (লিভ টু আপিল) দ্রুত শুনানির জন্য আপিল বিভাগে আরজি জানিয়েছেন তিনজন শিক্ষক। আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে আজ সোমবার তাঁরা প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের ভার্চ্যুয়াল বেঞ্চে বিষয়টি তুলে ধরেন। তাঁদের কথা শুনে আপিল বিভাগ আগামী মঙ্গলবার আবেদনটি (লিভ টু আপিল) শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন। আর তাঁদের পক্ষে বিনা ফিতে মামলা লড়ার কথা আদালতকে জানিয়েছেন আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী।    

ওই তিন বিচারপ্রার্থী বগুড়া সদর উপজেলার গোদারপাড়ায় অবস্থিত জাহিদুর রহমান মহিলা কলেজের প্রভাষক। তাঁরা হলেন ইসমত আরা জাহান, মোছা. সেলিনা আকতার ও মো. মিজানুর রহমান। এমপিওভুক্ত করার নির্দেশনা চেয়ে ২০১৬ সালে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছিলেন তাঁরা। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আদালত রুল দেন। রুলের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে ২০১৮ সালের ১৩ ডিসেম্বর রায় দেন। এমপিও তালিকায় রিট আবেদনকারীদের (তিনজন) নাম রায় পাওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ২০২০ সালে লিভ টু আপিল (আপিল করার অনুমতি চেয়ে আবেদন) করে।

আজ সকালে ওই তিন শিক্ষক আপিল বিভাগের ১ নম্বর বিচার কক্ষে উপস্থিত হন। আদালতকক্ষে রাখা ডায়াসের সামনে উপস্থিত হন তাঁরা। ইসমত আরা জাহান বলেন, ২০০৪ সালে প্রভাষক হিসবে নিয়োগ পান। ১৮ বছর ধরে বেতন পাচ্ছেন না। 

এমপিওভুক্তি নিয়ে তাঁদের করা রিটে হাইকোর্ট ২০১৮ সালে রায় দিয়েছেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ২৪ মার্চ আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল (যার নম্বর-৮৩৩/২০) দায়ের করে রাষ্ট্রপক্ষ। চলতি বছরের জুন মাসে লিভ টু আপিল শুনানির জন্য ধার্য ছিল। করোনাকালীন পরিস্থিতিতে তা শুনানি করা সম্ভব হয়নি।

তিনজনের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘এটি (লিভ টু আপিল) শুনানির জন্য আসবে। কত বছর চাকরি করেছেন, এটি বিবেচ্য নয়। আইন ও বিভিন্ন রায় অনুযায়ী আমরা রায় দেব। কাগজের ওপর নির্ভর করবে। মামলায় জিতবেন এমন নিশ্চয়তা দেওয়া যাচ্ছে না। সুতরাং আইনে যদি পান তাহলে পাবেন, আর আইন যদি সমর্থন না করে তাহলে পাবেন না। কষ্ট করে এসেছেন সরাসরি। অবশ্যই আমরা শুনব। এমপিও নিয়ে বিভিন্ন রায় আছে।’

আদালত জানতে চান, তাঁদের পক্ষে আইনজীবী আছেন কি না। তখন ইসমত আরা জাহান বলেন, এখন পর্যন্ত আইনজীবী নিয়োগ দিতে পারেননি।

সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, যদি আইনজীবী নিয়োগ না দিতে পারেন, তাহলে আপনারা নিজেরা চাইলেও শুনানি করতে পারেন। তবে সব আইনমাফিক হবে। কারণ, আমরা সংবিধানের অধীন শপথ নিয়েছি যে আইন অনুযায়ী বিচার করতে হবে। এ সময় ইসমত আরা জাহান বলেন, ‘আপিল দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আদালতের কাছে আরজি জানাচ্ছি।’

একপর্যায়ে সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘এখানে আমরা পাঁচজন। সবার মতামতের ওপর সিদ্ধান্ত হবে।’ তিন শিক্ষকের উদ্দেশে আদালত বলেন, হাইকোর্টে আপনাদের আইনজীবী কে ছিলেন? তখন তিনজনের একজন বলেন, হুমায়ুন কবির আইনজীবী ছিলেন।

বেঞ্চের একজন বিচারপতি বলেন, হাইকোর্টে তো আপনারা জিতেছেন। আপনাদের পক্ষে রায় হয়েছে। আইনজীবী নিয়োগ করলে ভালো হয়। এ সময় প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, কেননা আইনজীবী বুঝতে পারবেন, কোথায় কী আছে। একজন আইনজীবী নিয়োগ দিয়ে দেব নাকি? তখন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ বলেন, এটি মনে হয় ভালো হয়।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, একজন সিনিয়র আইনজীবী কাকে দেওয়া যায়? যেকোনো একজন ভালো সিনিয়র আইনজীবীকে আপনাদের পক্ষে দেব। আপনারা আইনের মারপ্যাঁচ বুঝবেন না। আপনারা আপনাদের দুঃখের কথা বলবেন। দুঃখের কথা আর আইনের কথা এক ধরনের না। অবশ্যই আমরা মানবিক দিকটাও দেখব, মানবিক দিক দেখলেই হবে না। আইনও আমাদের মানতে হবে।

আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী বলেন, আপনাদের পরিচিত আইনজীবী থাকলে তাঁদের নাম বলতে পারেন। যদি মনে করেন আমরা কাউকে দিলে, আপনাদের সুবিধা হবে হয়তো একজনকে আমরা নিয়োগ দিতে পারি।

তিনজনের একজন বলেন, আপনারা আইনজীবী নিয়োগ দিয়ে দেন। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, আপনারা আইনজীবীর ফি দিতে পারবেন না। কারণ, আপনারা বেতন পান না। এ সময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ বলেন, আপনাদের ওপর ভরসা করছেন উনারা। আপনারা যাকে দেবেন, তাতে উনারা রাজি।

তিনজনের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, আপনারা এত দূর থেকে এত কষ্ট করে এসেছেন। বলেছেন ১৮ বছর ধরে বেতন পান না। মামলা নম্বরটি লিখে দিয়ে যান। আগামী মঙ্গলবার (২ নভেম্বর) শুনানি হবে।
ভার্চ্যুয়ালি আদালতে যুক্ত আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী বলেন, তিনি তাঁদের পক্ষে মামলা পরিচালনা করবেন।

তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘উনার (কামরুল হক সিদ্দিকী) ওখানে গিয়ে আপনারা (তিন শিক্ষক) কথা বলে আসতে পারেন। উনি আপনাদের থেকে ফি নেবেন না। ওকালতনামা দিতে আপনাদের টাকা যাতে না লাগে, আমাদের ফান্ড থেকে যাতে দিয়ে দেয়—এর ব্যবস্থা আমরা করব।’

আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী বলেন, ‘আমার অফিস থেকে ব্যয় বহন করা হবে। এই আইনজীবীর উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘প্রো-বোনো’ যেহেতু ওকালতনামাসহ অন্য সব আপনার দায়িত্ব। আপনার ফোন নম্বর উনাদের দিয়ে দেন। তখন আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী নিজের ফোন নম্বর দেন।’

তিনজনের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘আপনাদের কোনো টাকাপয়সা দিতে হবে না। কোনো ব্যয় নেই। কিছু বলার থাকলে উনার (কামরুল হক সিদ্দিকী) বাসায় গিয়ে বলবেন। আগামী মঙ্গলবার শুনানি হবে। চাইলে আপনাদের দু-একজন আসতে পারেন।’ তখন তিন শিক্ষক বলেন, ধন্যবাদ মাই লর্ড।

সূত্র : প্রথম আলো

হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য - dainik shiksha হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক - dainik shiksha সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার - dainik shiksha রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0073468685150146