'করোনাকালে নেওয়া সেশন ফি শিক্ষার্থীর কোনো কাজে লাগেনি। এখন আবার কিসের সেশন ফির জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে- বুঝতেই পারছি না। এসব বিষয় নিয়ে আমরা কথা বললে আমার মেয়েটাকে নানাভাবে হয়রানি করা হতে পারে। আপনারা বিষয়টি একটু দেখেন না ভাই।' সুনামগঞ্জ সরকারি সতীশ চন্দ্র (এসসি) বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক এভাবেই জানালেন স্কুল থেকে নতুন করে সেশন ফি নেওয়ার তাগাদার কথা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৬ মাসের অগ্রিম বেতন ৯০ টাকা, ৬ মাসের টিফিন ফি ৪৫০ টাকা এবং ৬ মাসের সেশন ফিসহ ১৮৭২ টাকা আদায় করা হচ্ছে।
অথচ পাশের এইচএমপি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইনচান মিঞা বললেন, 'মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে এ ধরনের কোনো প্রজ্ঞাপন জারি হয়নি। এ জন্য আমরা কোনো ফি আদায় করছি না।'
একই শহরের সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফয়জুর রহমান বলেন, 'আমরা এখনও এ টাকা আদায় করিনি। তবে একই শহরে দুটি সরকারি স্কুল। এসসি বালিকা যেহেতু ফি আদায় করছে, আমাদেরও হয়তো আদায় করতে হবে।'
সরকারি এসসি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী জানালেন, সেশন ফিসহ ১৮৭২ টাকা এই সপ্তাহের মধ্যে জমা দেওয়ার জন্য মৌখিকভাবে বলা হয়েছে। লিখিত কোনো নোটিশ দেওয়া হয়নি। টাকা আদায়ের কোনো রসিদও দেওয়া হচ্ছে না। শ্রেণি শিক্ষকরা এই টাকা আদায় করছেন।
এই বিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, 'করোনাকালে টিফিন, সেশন ফি ও বেতনের জন্য যে টাকা আদায় হয়েছে, সেই টাকায় আমাদের জন্য উল্লেখ করার মতো কিছুই করা হয়নি। ক্লাস হয়নি, টিফিনও দেওয়া হয়নি। এখন আবার টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। যা অনেকের পক্ষেই দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।'
সরকারি এসসি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শ্রেণিশিক্ষক আমিনুল ইসলাম বলেন, প্রধান শিক্ষক স্যারের নির্দেশে এই টাকা আদায় হচ্ছে। যেহেতু সেশনকাল বেড়েছে, এজন্য ২৪০ জন শিক্ষার্থীকেই ৬ মাসের বেতন, টিফিন ও সেশন ফি দিতে বলা হয়েছে। একই কথা জানালেন অপর শ্রেণি শিক্ষক ক্ষীতিশ চন্দ্র দাশ।
সরকারি এসসি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাফিজ মাসহুদ চৌধুরী বললেন, '২০২২ সালের পরীক্ষার্থীদের সেশনকাল বেড়েছে। ফেব্রুয়ারিতে পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। এখন জুনে পরীক্ষা হবে। সিলেট, মৌলভীবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে ২০২২ সালের পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে সেশন ফি নেওয়া হচ্ছে। এ জন্য আমরাও নেওয়া শুরু করেছি। মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে ফি নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। তবে পাঠদান চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাঠদান করলে খরচ আছে, এজন্য ফি নেওয়া হচ্ছে। পরে কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দিলে আমরা টাকা ফেরত দেব।'
টিআইবির সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি আইনুল ইসলাম বাবলু বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানে টাকা আদায়ের ক্ষেত্রে রসিদ থাকা জরুরি।
জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বললেন, 'এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। তারা কীভাবে টাকা আদায় করছেন তারাই বলতে পারবেন।'