ভোটে জিতে জনপ্রতিনিধি হয়েছেন তাঁরা। মানুষ মানে-গোনো আবার পেছনে একটু টিপ্পনীও কাটে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার কোনো সার্টিফিকেট যে নেই তাঁদের। এ তো গেল ‘পাছে লোকের’ কথা। এর বাইরে আরেকটি শঙ্কাও আছে তাঁদের মনে। সরকার যদি আইন করে বসে, সার্টিফিকেট ছাড়া ভোটে লড়া যাবে না।
মানুষের মুখ সামলাতে আর ভোটের পথ পরিষ্কার রাখতে তাই পরীক্ষায় বসেছেন রাজশাহীর দুর্গাপুর পৌরসভা ও বিভিন্ন ইউনিয়নের পাঁচজন সাবেক ও বর্তমান জনপ্রতিনিধি। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে তাঁরা এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন উপজেলার কয়ামাজমপুর উচ্চবিদ্যালয়ের পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে।
এই পাঁচ পরীক্ষার্থী হলেন দুর্গাপুর পৌরসভার সংরক্ষিত নারী আসনের ১, ২, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ঝর্ণা বেগম (৩৬), কিসমত গণকৈড় ইউনিয়নের সংরক্ষিত নারী আসন ৪, ৫, ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য দুলারী বেগম (৫০), ১, ২, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের নাসিমা বেগম (৪০) ও দেলুয়াবাড়ী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য আলাউদ্দিন আলা (৪২), নওপাড়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর আলীপুর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য মানিক গাজী (৫৫)।
গতকাল বৃহস্পতিবার উপজেলার কয়ামাজমপুর পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন কক্ষে বিভিন্ন বয়সের এসব জনপ্রতিনিধি নিয়মিত শিক্ষার্থীদের সঙ্গেই পরীক্ষা দিচ্ছেন। খাতায় লিখতে ব্যস্ত তাঁরা। নিয়মিত পরীক্ষার্থীরাও তাঁদের সাদরে গ্রহণ করেছে।
এই বয়সে পরীক্ষায় বসার কারণ জানতে চাইলে উপজেলার দেলুয়াবাড়ী ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য আলাউদ্দিন আলা জানান, গত ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে ইউপি সদস্য হতে হলে এসএসসি পাস লাগবে। তখন খুব দুশ্চিন্তায় ছিলেন। ভেবেছিলেন তিনি আর ইউপি সদস্য হতে পারবেন না। কারণ তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা নেই। তখনই তিনি একটি বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন।
আলাউদ্দিন আলা বলেন, ‘প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা না থাকায় এলাকাতে ইউপি সদস্যদের নিয়ে জনগণ হাসি-ঠাট্টা করে। হয়তোবা আগামীতে সরকার আইন জারি করবে ইউপি সদস্য প্রার্থী হতে হলে শিক্ষা সনদ লাগবে। তাই সময় থাকতে পরীক্ষায় বসে গেছি।’
কিসমত গণকৈড় ইউপির সদস্য দুলারী বেগম বলেন, ‘খুব অল্প ভোটের ব্যবধানে এবারের নির্বাচনে ফেল করেছি। তবে আগ্রহ আছে আবারও ভোটে লড়ার। আমার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। সরকার যেকোনো সময় আইন করতে পারে এসএসসি পাস ছাড়া কেউ ইউপি সদস্য হতে পারবে না। সে কারণে ভোটের লড়াইয়ে টিকে থাকতে আমি এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছি।’
কয়ামাজমপুর উচ্চবিদ্যালয়ের কেন্দ্রসচিব হাবিল উদ্দিন বলেন, পড়ালেখার কোনো বয়স নেই।
এই কেন্দ্রে প্রতিবছরই দু-একজন বেশি বয়সের লোক পরীক্ষা দেন। এবার একসঙ্গে পাঁচজন বর্তমান ও সাবেক ইউপি সদস্য পরীক্ষায় বসেছেন। এটা সমাজের জন্য খুবই ভালো একটা মেসেজ। জনপ্রতিনিধিরাও পড়াশোনা শিখছেন, যাতে ভবিষ্যতে শিক্ষিতরাই জনগণের প্রতিনিধিত্ব করবেন।