শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য করোনা মহামারী পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিগ্রহণের ব্যর্থতার অভিযোগে ফ্রান্সে নজিরবিহীন শিক্ষা ধর্মঘট পালন করেছেন শিক্ষকরা। ইউনিয়নভুক্ত ১১টি সংগঠন এ কর্মসূচি ঘোষণা করে। একদিনের এ কর্মসূচিতে বন্ধ থাকে দেশটির প্রায় অর্ধেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম। আন্দোলনের ডাক দেয়া শিক্ষকদের দাবি, সরকারের ব্যর্থতায় স্কুল বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন তারা।
শিক্ষকদের সংগঠন সিএফডিটি ইউনিয়নের সেক্রেটারি জেনারেল লরেন্ট বার্গার জানান, তাদের ধর্মঘট ভাইরাসের বিরুদ্ধে নয়, নীতিনির্ধারকদের পরামর্শহীনতার বিরুদ্ধে ধর্মঘট। তিনি বলেন, সরকারের অবজ্ঞার শিকার শিক্ষকরা। শেষ মুহূর্তে কভিড নীতি বদলের ক্ষেত্রে ন্যূনতম আলোচনার সুযোগও দেয়া হয় না।
চলতি সপ্তাহেই প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ বলেছিলেন, বৈশ্বিক মহামারীর মধ্যেও ফ্রান্সের সেরা সাফল্য হলো অন্য দেশগুলোর তুলনায় বিদ্যালয়গুলো বেশি দিন খোলা রাখা।
এদিকে ফ্রান্সে করোনা মহামারী ঠেকাতে নতুন ব্যবস্থার অনুমোদন দিয়েছেন আইনপ্রণেতারা। পাস হওয়া নতুন আইনে নাগরিকদের রেস্টুরেন্ট, বার, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র অথবা গণপরিবহনে উঠতে টিকা গ্রহণের প্রমাণ দিতে হবে। কভিড টিকা পাস বিষয়ে দেশটির সিনেটে এ নিয়ম অনুমোদনের পক্ষে ভোট পড়ে ২৪৯টি। এছাড়া বিপক্ষে ভোট পড়েছে ৬৩টি। ফ্রান্সের সংসদের নিম্নকক্ষে গত মাসেই আইনটির অনুমোদন দেয়া হয়।
এছাড়া যুক্তরাজ্য থেকে ফ্রান্সে ভ্রমণ বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিল করা হয়েছে। ফ্রান্সের পর্যটনমন্ত্রী বলেছেন, শুক্রবার থেকে যুক্তরাজ্যের টিকা নেয়া ভ্রমণকারীরা ফ্রান্সে যেতে পারবেন। তবে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পরীক্ষায় করোনা নেগেটিভ হতে হবে। অপরিহার্য প্রয়োজন না থাকলে যেতে পারবেন না; শিথিল করা হয়েছে এ নিয়মও।
এদিকে আফ্রিকা মহাদেশে কভিড-১৯ আক্রান্তের মোট সংখ্যা এক কোটি ছাড়িয়েছে। ডব্লিউএইচওর আঞ্চলিক ইমার্জেন্সি ডিরেক্টর আবদু সালাম গুয়ি বলেন, এ পর্যন্ত মহাদেশটিতে ২ লাখ ৩০ হাজারের বেশি মৃত্যু হয়েছে। এদিকে চতুর্থ ডোজের ঘোষণা দিয়েছে হাঙ্গেরি। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবানের চিফ অব স্টাফ গুলিয়াজ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, চিকিৎসকের পরামর্শে যে কেউ চতুর্থ ডোজ টিকা নিতে পারবেন।
জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ জানিয়েছে, শুধু গত মাসেই দরিদ্র দেশগুলোয় কোভ্যাক্স প্রোগ্রামের আওতায় বিতরণ করা ১০ কোটির বেশি কভিড-১৯ প্রতিরোধী টিকা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। অধিকাংশ প্রত্যাখ্যানের কারণ হলো দ্রুত মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়া। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের আইনপ্রণেতাদের এ তথ্য জানান ইউনিসেফের সাপ্লাই ডিভিশনের ডিরেক্টর ইটলেভা কাদিলি। তিনি বলেন, শুধু ডিসেম্বরেই ১০ কোটির বেশি টিকা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। প্রত্যাখ্যানের আরো কারণ হলো, এগুলো সংরক্ষণে যথাযথ ব্যবস্থা না থাকা। বিশেষ করে সংরক্ষণ উপযোগী ফ্রিজ বা হিমাগারের সংকট।
ভারতের বড় শহরগুলোয় আগামী সপ্তাহে কভিড-১৯ সংক্রমণ চূড়ায় পৌঁছতে পারে। গতকাল আক্রান্ত শনাক্তের সংখ্যা দুই লাখের মাইলফলক পেরিয়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষজ্ঞরা এ পূর্বাভাস দেন। পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় নতুন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৪৭ হাজার ৭১৭, যা এক মাস আগের তুলনায় ৩০ গুণ। ভারতের অশোক বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিকস অ্যান্ড বায়োলজির অধ্যাপক গৌতম মেনন বলেন, অন্যদেরসহ আমাদের মডেলিং ও অন্যান্য সূচক বিবেচনা করে ধারণা করা হচ্ছে, ২০ জানুয়ারি নাগাদ রাজধানী দিল্লি, মুম্বাইসহ বড় বড় শহরে আক্রান্ত চূড়ায় পৌঁছবে। সামগ্রিকভাবে ভারতজুড়ে এটি ফেব্রুয়ারির শুরুতে হতে পারে।