কওমির দাওরায়ে হাদিসের মাস্টার্স স্বীকৃতি বাতিলের দাবি - দৈনিকশিক্ষা

কওমির দাওরায়ে হাদিসের মাস্টার্স স্বীকৃতি বাতিলের দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক |

কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদিসকে দেয়া মাস্টার্স স্বীকৃতি বাতিল এবং কওমী ও আলিয়ার সমন্বয়ে একইধারার মাদরাসা শিক্ষানীতি প্রণয়নের দাবি জানিয়েছে ‘ইসলামী ছাত্রসেনা’ নামের একটি সংগঠন। তারা দাবি করেন, কওমি মাদরাসাগুলোর ওপর সরকারের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ না থাকায় তারা শিক্ষার্থীদেরকে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের জন্য ব্যবহার করছে। মাদরাসাগুলো শিক্ষার্থীদের ‘মগজ ধোলাই করে জঙ্গিবাদী চেতনা প্রবেশ করাচ্ছে’ বলে অভিযোগ করেছেন সংগঠনটির নেতারা। তাই কওমি মাদরাসার দাওরাকে দেয়া মাস্টার্স স্বীকৃতি বাতিলের দাবি জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা স্মারকলিপি দিয়েছে। 

 স্মারকলিপি দিয়েছেন তারা। ছবি : সংগৃহীত

বৃহস্পতিবার (৬ মে) দৈনিক শিক্ষাডটকমের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা। জানা গেছে, ইসলামী ছাত্রসেনা একটি রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন। সংগঠনটি আদর্শিকভাবে বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের সাথে যুক্ত।

আরও পড়ুন : দৈনিক শিক্ষাডটকম পরিবারের প্রিন্ট পত্রিকা ‘দৈনিক আমাদের বার্তা’

সংগঠনের আইসিটি সেল প্রধান আদনান তাহসিন স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিভিন্ন সময়ে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নিজেদের উগ্রতা প্রদর্শন, এবং দেশের মানুষকে জিম্মি করে, কখনো মিথ্যা অপপ্রচার  চালিয়ে দেশকে তালেবানী রাষ্ট্র বানোনোর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত কওমিদের মাদরাসা শিক্ষানীতি বাতিল, এবং কওমী ও আলিয়া সমন্বয়ে একইধারার মাদ্রাসা শিক্ষানীতি প্রণয়নের দাবিতে দেশব্যাপী বিভিন্ন জেলা শাখার নেতারা স্থানীয় জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে শিক্ষামন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন। ৭১-এ মুজাহিদ বাহিনী গঠন করে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে পরিচালিত দেশের প্রথাবিরোধী এসব কওমি মাদারাসার দাওরাকে মাস্টার্স সমমান দেয়া হলেও তারা আজ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় কোনো রীতিনীতি পালন করেনি। দেশের আলিয়া নেসাবের সব মাদরাসা স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (স)-সহ সরকারি দিবসগুলো ঘটা করে পালন করলেও সরকারি সনদের স্বীকৃতি ভোগ করা কোনো কওমি মাদরাসা দিবসগুলো উদযাপন করে না। করোনাকালে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও সব কওমি প্রতিষ্ঠান খোলা ছিল। এটা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ বলে মনে করছি। 

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রাথমিক বা ইবতেদায়ি, মাধ্যমিক বা দাখিল, উচ্চ মাধ্যমিক বা আলিম, ডিগ্রি বা ফাযিল, কামিল বা মাস্টার্স পর্যায় শেষ করতে একজন শিক্ষার্থীকে সর্বনিম্ন ১৮ বছর ধারাবাহিকভাবে অধ্যয়ন করতে হয়। বিপরীতে কওমি শিক্ষার্থীরা নিচের কোনো পর্যায়ের স্বীকৃতি, বা সরকারি মূল্যায়ন, বা তদারকি ছাড়া একলাফে দাওরা পাস করে মাস্টার্সের স্বীকৃতি নিয়ে রাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায়ে অবাধ বিচরণক্ষেত্র তৈরি করছে। সরকারি নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত এ ধরনের মানহীন শিক্ষা ব্যবস্থা দেশে বৈষম্য সৃষ্টি করছে এবং দেশে শিক্ষা ব্যবস্থার মেরুদণ্ড ভেঙেদিচ্ছে। দেশের সব মাদরাসাতে রাষ্ট্রীয় নীতি পালন কি বাধ্যতামূলক নয়?-প্রশ্ন তোলেন নেতারা।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলটি সাবস্ক্রাইব ও ফেসবুক পেইজটি ফলো করুন

ছাত্রসেনার নেতারা বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলেন, 'কওমি মাদরাসাগুলোর আয়-ব্যয়ের কোনো হিসাব তারা রাষ্ট্রকে দেয় না বা সরকারি কোনো অডিট কার্যক্রম পরিচালিত হয়না। এ সুযোগটা কাজে লাগিয়ে দেশি-বিদেশি জঙ্গিগোষ্ঠী স্বার্থ সিদ্ধির জন্য এসব কওমি মাদরাসায় অর্থ সহযোগিতা দিয়ে নিজেদের নিরাপদ আস্তানা হিসেবে গড়ে তুলছে। এসব মাদরাসাকে সরকারি অডিটের আওতায় এনে টাকার উৎস বা যোগানদাতা কারা তা চিহিৃত করে সাধারণ মাদরাসা শিক্ষার মত কেন্দ্রীয় তদারকি নিশ্চিত করা সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। তাছাড়া দেশের এমপিওভুক্ত সব মাদরাসাতে শিক্ষক নিয়োগ দিচ্ছে এনটিআরসিএ। সরকারি স্বীকৃতি ভোগ করা কওমি মাদরাসার শিক্ষক নিয়োগ, অপসারণ, পদায়ন বা তাদের পরীক্ষা মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে আজ পর্যন্ত সরকারি কোনো নীতিমালা প্রণয়ন হয়নি। দেশের সব মাদরাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর ও মাদরাসাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবং ফাযিল ও কামিল শ্রেণির তদারকির জন্য ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে জাতীয় সংসদে স্বতন্ত্র ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় এ্যাক্ট পাস হলেও কওমিদের মাস্টার্স সমমান দাওরার জন্য কোনো বোর্ড গঠন হয়নি, বরং অঞ্চলভিত্তিক কওমি মাদরাসা কেন্দ্রীক আঞ্চলিক বোর্ড দ্বারাই এ শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। সরকারের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ না থাকায়  শিক্ষার্থীদেরকে তারা নিজেদের ইচ্ছে ব্যবহার করছে। মগজ ধোলাই করে জঙ্গিবাদি চেতনা প্রবেশ করাচ্ছে। যা রাষ্ট্রের জন্য অশনি সংকেত বলে আমরা মনে করছি। 

নেতারা আরও বলেন, মাস্টার্স সমমান পরীক্ষায় কারা অংশ নিবে? কারা নিতে পারবে না? এসব বিষয়ে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই কওমিদের। ফ্রি সার্টিফিকেট নেয়ার জন্য ষাটোর্দ্ধ ব্যক্তিও নামমাত্র পরীক্ষায় নিচ্ছে। পরীক্ষা গ্রহণ, মূল্যায়নে কোন পদ্ধতি বা নীতিমালা অনুসরণ করছে না কওমি বোর্ডগুলো। যে সব শিক্ষকদের দিয়ে প্রশ্ন করা হচ্ছে বা খাতা মূল্যায়ন করা হচ্ছে, তাদের কেউ সমমান মাস্টার্স ডিগ্রিধারী নয়। যে পরীক্ষকদের  নিজেদেরই দাওরা সমমান মাস্টার্স ডিগ্রী নেই তারা কি আদৌ এসব পরীক্ষা গ্রহণ- মূল্যায়ন কাজে সম্পৃক্ত হবার যোগ্যতা রাখে?-প্রশ্ন তোলেন নেতারা। 

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়,  দেশ থেকে জঙ্গিবাদি শক্তির আস্ফালন বন্ধ করতে, দেশের সরকারি- বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সরকারি সার্টিফিকেট নিয়ে জঙ্গিবাদি শক্তির অনুপ্রবেশ ঠেকাতে মানহীন কওমি সনদের স্বীকৃতি বাতিলের দাবিসহ এ শিক্ষাব্যবস্থাকে সরকারি তদারকিতে নিয়ে আসার অনুরোধ করছি। এ দাবিতে দেশব্যাপী জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে শিক্ষামন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে ছাত্রসেনার ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, বরিশাল, ময়মনসিংহ, খুলনা ও রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও সমমান শাখা।

হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য - dainik shiksha হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক - dainik shiksha সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার - dainik shiksha রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034410953521729