কঠোর নিরাপত্তা থাকবে বার কাউন্সিলের এমসিকিউ পরীক্ষায় - দৈনিকশিক্ষা

কঠোর নিরাপত্তা থাকবে বার কাউন্সিলের এমসিকিউ পরীক্ষায়

নিজস্ব প্রতিবেদক |

বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্তির এমসিকিউ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৭ জুন। আইনজীবী সনদ পেতে এই পরীক্ষায় অংশ নেবেন প্রায় ৪১ হাজার শিক্ষার্থী। সবশেষ ২০২০ সালের ১৯ ডিসেম্বর যে পরীক্ষা হয়েছিল, সেদিন হট্টগোল, একে অপরের খাতা কেড়ে নেওয়া এবং কেন্দ্র ভাঙচুরের মতো ঘটনাও ঘটেছিল। সেই বিষয়টি মাথায় রেখে এবারের এমসিকিউ পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, এবারের পরীক্ষায় কোনো ধরনের সমস্যা হবে না বলে তারা আশা করছেন। তবে, পরীক্ষার দিন ‘প্রশ্নপত্র কঠিন’ অজুহাতে কেউ কোনো কিছু করে বসে কি না সেই শঙ্কাও তাদের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে।

বার কাউন্সিল কর্তৃপক্ষ আশা করছে, শঙ্কামুক্ত পরিবেশে এবার পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে বসানো যাবে।

আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্তির জন্য ২০১০ সাল পর্যন্ত বছরে দুটি পরীক্ষা (এমসিকিউ ও লিখিত) নিতো বাংলাদেশ বার কাউন্সিল। এরপর ভাইভা (মৌখিক পরীক্ষা) হতো। তবে ২০১১ সালের পর থেকে পিছিয়ে পড়ে বছরে দুটি করে পরীক্ষা নেওয়ার কার্যক্রম। ফলে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রায় ৭০ হাজার আইন শিক্ষার্থী জটে পড়ে যান।

তাদের বিভিন্ন দাবি ও আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ২০২০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রায় ৭০ হাজার পরীক্ষার্থীর অংশগ্রহণে এমসিকিউ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর প্রকাশিত হয় ফলাফল। এর মধ্যে মাত্র আট হাজার ৭৬৪ শিক্ষার্থী এমসিকিউ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

ওই বছরের মার্চে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে সবকিছু থমকে যায়। পরিস্থিতি কিছুটা সামলে ওঠার পর এমসিকিউতে উত্তীর্ণরা পরবর্তী লিখিত পরীক্ষা না নিয়ে শুধু মৌখিকের (ভাইভা) মাধ্যমে আইনজীবী সনদ দেওয়ার দাবি জানান। কিন্তু সেই দাবি না মেনে ২০২০ সালের ১৯ ডিসেম্বর লিখিত পরীক্ষা নেয় কর্তৃপক্ষ।

সেদিন রাজধানীর নয়টি কেন্দ্রে সকাল ৯টায় একযোগে পরীক্ষা শুরু হয়। তবে ১০ মিনিটের মধ্যে ‘প্রশ্ন কঠিন হয়েছে’অভিযোগ তুলে কিছু পরীক্ষার্থী খাতা ছিঁড়ে হল থেকে বের হয়ে যান। তাদের বাধায় বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে অন্য শিক্ষার্থীরাও পরীক্ষা দিতে পারেননি।

প্রথমে পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারের ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজ কেন্দ্রে হট্টগোল বাধে। এরপর সায়েন্স ল্যাবরেটরি স্কুল, মোহাম্মদপুর সরকারি স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও মোহাম্মদপুর মহিলা কলেজ কেন্দ্রেও একই পরিস্থিতি তৈরি হয়। মোহাম্মদপুর মহিলা কলেজে ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটে।

পরে বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন ক্ষতিগ্রস্ত কেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করেন এবং ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দেন। এরপর ওই ঘটনায় হওয়া একাধিক মামলায় অর্ধশতাধিক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয় পুলিশ।

২০২০ সালের সেই হট্টগোল মাথায় রেখে আয়োজকরা এবার পরীক্ষার সার্বিক ব্যবস্থাপনা সাজিয়েছেন বলে জানা গেছে। বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে এবারের এমসিকিউ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের পরীক্ষায় অংশ নেবেন মো. তাবারুল হক। তিনি বলেন, পরীক্ষার প্রস্তুতি ভালোই চলছে। আশা করি গতবারের মতো এবারের পরীক্ষার হলে কোনো ধরনের সমস্যা হবে না।

বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন বলেন, আমাদের পরীক্ষা হচ্ছে আগামী ১৭ জুন। ওই দিন প্রথম ধাপের যে পরীক্ষা (এমসিকিউ) সেটা নেবো। পরীক্ষার সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। আশা করছি সঠিক সময় ও সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যেই রেজাল্টটা দেব।

লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কঠিন হয়েছে অজুহাতে গতবার পরীক্ষার হলে ভাঙচুর ও বিশৃঙ্খলার বিষয়ে বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বলেন, বার কাউন্সিলের পরীক্ষাকেন্দ্রে বিশৃঙ্খলার ঘটনা জীবনে একবারই হয়েছে। আমরা সেই ঘটনাটি শক্তভাবে প্রতিহত করেছি। তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, আমার মনে হয় এবার কোনো শিক্ষার্থী এগুলো করবে না। যারা এসব ঘটনায় জড়িত ছিল তাদের চিহ্নিত করে ‘কাজ অনুযায়ী’ শাস্তি দেওয়া হয়েছে এবং বার কাউন্সিলের পক্ষ থেকে ফৌজদারি মামলা করা হয়েছে, আমরা আশা করি না এ ধরনের ঘটনা আর ঘটবে।

বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. আফজাল উর রহমান

বলেন, গত ৬ জুন থেকে পরীক্ষার্থীরা নিজ নিজ প্রবেশপত্র গ্রহণ করা শুরু করেছেন। প্রবেশপত্র বার কাউন্সিল থেকে দেওয়ার মতো কোনো কারণ নেই। তারা নিজেরাই রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে অনলাইন থেকে প্রবেশপত্র প্রিন্ট করে নেবেন।

এবার পরীক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪১ হাজার উল্লেখ করে তিনি জানান, পরীক্ষায় কেউ বাধা ও সমস্যার সৃষ্টি করবে এমন আশঙ্কার কোনো অবকাশ নেই। কারণ আমরা ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা রাখবো।

তবে, এবার কতটি কেন্দ্রে পরীক্ষা নেওয়া হবে সেটি তিনি নিশ্চিত করতে পারেননি। এ তথ্য পরীক্ষার আগের দিন ছাড়া বলা যাবে না বলেও জানান তিনি।

মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) চেয়ারম্যান জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, গত বছরের ঘটনার মধ্যে দিয়ে নিশ্চয়ই বার কাউন্সিলের অভিজ্ঞতা হয়েছে। যারা পরীক্ষাটি নেবেন, নিশ্চয়ই নির্ধারিত তারিখেই নেবেন। যদিও শিক্ষার্থীদের চাপ আগের মতো থাকবে না। তারপরও কিছু শিক্ষার্থী তো থাকতেই পারে, দেখা গেলো তার কাছে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কঠিন হয়েছে এই অজুহাতে বা যে কোনো অজুহাতে পরীক্ষার হলে গণ্ডগোল বা অশান্তি সৃষ্টির প্রচেষ্টা থাকতে পারে। এ ব্যাপারে বার কাউন্সিলের পক্ষ থেকে আগাম প্রস্তুতি নিতে হবে।

শিক্ষা ও শিক্ষক নিয়ে মামলা পরিচালনা করে আসা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সিদ্দিক উল্ল্যাহ্ মিয়া এ পরীক্ষা নিয়ে বলেন, প্রশ্নপত্র দেখে কেউ পরীক্ষায় লিখতে না পারলে যতক্ষণ পারবে উত্তরপত্রে লিখবে, এরপর না পারলে বের হয়ে আসবে। কিন্তু প্রশ্নপত্র কঠিন হয়েছে এই অজুহাতে আন্দোলন তো দূরে থাক প্রতিবাদ জানানোই তো ঠিক নয়।

তিনি আরও বলেন, যারা আইন পেশায় আসবেন তাদের আরও সুশৃঙ্খল পরিমার্জিত আচরণ করতে হবে। কারণ পরীক্ষার পরেই তো ধাপে ধাপে তিনি আইনজীবী হবেন। যারা শিক্ষানবিশ তাদের কাছ থেকে এ ধরনের আচরণ আশা করা যায় না।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন বার কাউন্সিলের পরীক্ষা নিয়ে  বলেন, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের এনরোলমেন্ট লিখিত পরীক্ষার মধ্যে গত বছরের যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা, এ ধরনের ঘটনা বার কাউন্সিলের ইতিহাসে হয়েছে বলে আমার মনে হয় না, আমাদের জানাও নেই। এটা দুঃখজনক এবং আইনজীবী সমাজের জন্যও এটা লজ্জার বিষয়। এ ধরনের ঘটনার যেন আর পুনরাবৃত্তি না ঘটে।

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0035510063171387